আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিন লাদেনকে হত্যার ‌'অপারেশন জেরোনিমো' লাইভ দেখেন ওবামা : স্ত্রী মারা যাননি, ছেলের মৃত্যু নিয়ে দু'রকম ভাষ্য পাকিস্তানে মার্কিন দূতাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

নাজমুল ইসলাম মকবুল

বিন লাদেনকে হত্যার ‌'অপারেশন জেরোনিমো' লাইভ দেখেন ওবামা : স্ত্রী মারা যাননি, ছেলের মৃত্যু নিয়ে দু'রকম ভাষ্য পাকিস্তানে মার্কিন দূতাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ পাকিস্তানের এবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের আস্তানায় রোববার রাতের কমান্ডো অভিযান হোয়াইট হাউসে ‘সিচুয়েশন রুম’-এ বসে সরাসরি মনিটরে দেখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। অপারেশনে অংশ নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ২৪ সদস্যের ‘সিল কমান্ডো’দের মাথায় পরা হেলমেটে যুক্ত ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের সরাসরি অপারেশন দেখার ব্যবস্থা করা হয়। অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছিল ‘জেরোনিমো’। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছোট আকারের অপারেশন রুমে বসে সরাসরি দেখলেন নৌকমান্ডোরা ওসামা বিন লাদেনের মুখোমুখি হতেই এক মহিলা একে-৪৭ রাইফেল হাতে ওসামার সামনে এসে দাঁড়ায়। কমান্ডোরা তাকে গুলি করে হত্যা করার পর ওসামাকে লক্ষ্য করে তার বাঁ চোখের ঠিক উপরে গুলি করে।

মৃত্যু নিশ্চিত করতে সামরিক ভাষায় ‘ডাবল ট্যাপ’ বলে পরিচিত দ্বিতীয় গুলিটি ছোঁড়া হয় ওসামার বুকে। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার খবরটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে সাংকেতিক ভাষায় ‘এবত্ড়হরসড় ঊকওঅ’ বলে তাত্ক্ষণিকভাবে অপারেশন পরিচালনাকারীরা রিপোর্ট করে। পশ্চিম আমেরিকার এক যোদ্ধার নামে এই অপারেশনের নাম দেয়া হয়। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যিনি এক মহান প্রতিরোধ যোদ্ধার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। জেরোনিমার জন্মগত নাম ছিল গয়াকালা।

প্রচলিত আছে পরিবারের সদস্যদের হত্যার বদলা নেয়ার জন্য বিখ্যাত একজন মেক্সিকান যোদ্ধা জেরোনিমোর নাম অনুসারে তার নাম জেরোনিমা হয়। অপারেশন সফল হওয়ার পর জেরোনিমো-ইকিয়া (এবত্ড়হরসড়-ঊকওঅ) সংকেতে পেয়েই উল্লাসে ফেটে পড়ে হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুম’। জেরোনিমো হলো অপারেশনের নাম। ইংরেজি ই-ব্যবহৃত হয়েছে এনিমি, কে-কিলড, আই-ইন এবং এ-অ্যাকশন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১০ বছর ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেই এক নম্বর শত্রুকে হত্যার পর এ বার্তাটি পাঠিয়েছিল কমান্ডোরা।

বিবিসি, সিএনএন, এবিসি, রয়টার্স, স্কাইনিউজ ও ইন্টারনেট। এদিকে আবু আহমদ নামে ওসামার একজন বার্তাবাহকের সাহায্য নিয়েই রোববারের অপারেশন সফল করেছিল মার্কিন বাহিনী। অপারেশনে ওসামা বিন লাদেনের স্ত্রী মারা যাওয়ার যে খবর প্রচার হয়েছিল তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো। খবরে বলা হয়েছে, কমান্ডো হামলায় ওসামার স্ত্রী আহত হয়েছেন। মারা গেছেন তার ছেলে খালিদসহ মোট ৫ জন।

নারী ও শিশুসহ ১২ থেকে ১৫ জন আহত হলেও বেঁচে গেছেন। ওসামাকে দুটি গুলি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রথম গুলিটি তার বাঁ চোখের ওপরে এবং দ্বিতীয়টি বুকে করা হয়। ওসামার রক্তাক্ত দেহের ছবি প্রকাশ করা হবে কিনা তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়া নিয়ে সন্দেহ দূর করতে মার্কিন প্রশাসন তার মৃতদেহের ছবি এবং প্রয়োজনে ভিডিও চিত্র প্রকাশ করবে।

ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে তার দূতাবাস ও কনসুলেট অফিসগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের করাচিতে আদদোয়া, লস্কর-ই তৈয়বাসহ বিভিন্ন সংগঠন ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুতে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ করেছে। বিন লাদেনের অবস্থান নিয়ে পাকিস্তান কতটুকু জানত যুক্তরাষ্ট্র তা তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছে। ইরাক যুদ্ধখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিক্স মন্তব্য করেছেন, পাকিস্তানের যাদের সহযোগিতা নিয়ে ওসামা বিন লাদেন অবস্থান করছিলেন তারা তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পাকিস্তান আগেভাগেই অপারেশনের ব্যাপারে জানত বলেও তার ধারণা।

ভিন্ন সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান উভয়েই আগে থেকেই বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে কোনো বা কোনোভাবে অবহিত ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই কিলিং মিশন পরিচালিত করেছে। এবিসি নিউজ খবর দিয়েছে, আগে যেমনটি বলা হয়েছিল যে, অপারেশনের সময় ওসামা বিন লাদেন সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন এবং গুলি চালিয়েছিলেন—এটা ঠিক নয়। তিনি সশস্ত্র ছিলেন না। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার অপারেশনের ব্যাপারে পাকিস্তানকে আগেভাগে কিছুই জানানো হয়নি।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এ কথা বলার পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ডিরেক্টর লিওন প্যানেটা টাইম ম্যাগাজিনের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা তাদের (পাকিস্তানের) সহযোগিতা চাইনি এই ভয়ে যে, অপারেশনের খবর আগেভাগেই ফাঁস হয়ে গেলে পুরো অপারেশনই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারত। বিবিসি এ খবর দিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বলেছে, বিন লাদেনের ব্যাপারে আগেভাগে তথ্য জানতে না পারায় তারা বিব্রত। আইএসআই কর্মকর্তারা বলেছেন, বিন লাদেনের ছোট মেয়ে বলেছে, সে তার বাবাকে হত্যা করতে দেখেছে।

আইএসআই আরও বলেছে, এবোটাবাদের এই বাড়িটি ২০০৩ সালে নির্মাণাধীন থাকার সময় সেখানে তারা একবার অপারেশন চালিয়েছিল। আরেক আল কায়দা নেতা ফারাজ আল লিবি সেখানে অবস্থান করছেন এ সংবাদের ভিত্তিতে। কিন্তু এরপর থেকে কম্পাউন্ডটি তাদের রাডারের বাইরে ছিল। ওদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রোববারের অপারেশনে পাকিস্তানের কোনো সামরিক ঘাঁটি মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেনি। মার্কিন হেলিকপ্টার পাকিস্তানের সীমানায় প্রবেশ করে তাদের রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে।

আইএসআই বলেছে, ওসামা বিন লাদেনের কম্পাউন্ডটিতে অপারেশনের সময় সেখানে মোট ১৭-১৮ জন লোক ছিল। এর মধ্যে অন্তত একজনকে অপারেশনকারী মার্কিনিরা জীবিত ধরে নিয়ে যায়। সে সম্ভবত বিন লাদেনের ছেলে। হামলা থেকে ওই বাড়ির যারা বেঁচে যান তাদের মধ্যে রয়েছেন বিন লাদেনের স্ত্রী, মেয়ে, ৮/৯ জন ছেলেমেয়ে যারা বিন লাদেনের নয় বলে মনে করা হচ্ছে। যাদের প্রত্যেককে হাত বেঁধে রেখেছিল মার্কিনিরা।

বিন লাদেনের ইয়ামেনি বংশোদ্ভূত স্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে তারা এখানে এসেছেন। বিন লাদেনের ১২-১৩ বছর বয়সী মেয়ে বলেছে, তার বাবাকে হত্যার দৃশ্য সে দেখেছে। হত্যার পর মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা লাশ টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে গেছে। বিবিসি আইএসআই’র কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরও বলেছে, মার্কিন কমান্ডোরা হয়তো বিন লাদেনের বাড়ির সবাইকেই নিয়ে যেত। কিন্তু তাদের একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়।

মার্কিন স্পেশাল ইউনিটের সদস্যরা হেলিকপ্টারকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে যায়। তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ওসামা বিন লাদেনের লাশ ছাড়া অন্য কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেনি। আইএসআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বিন লাদেনের কম্পাউন্ড থেকে কিছু ডকুমেন্টস উদ্ধার করেছেন। এর আগে সিআইএ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, অপারেশনের সময় তারা কিছু হার্ড ড্রাইভ ও ডিভাইস উদ্ধার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ব্রেনান জানিয়েছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় যে পাকিস্তান সরকারের ভেতরের কারও কাছ থেকে বিন লাদেন কোনো সমর্থন ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না।

বিবিসি’র সংবাদদাতার কাছে এবোটাবাদের স্থানীয় অধিবাসীরা বলেছেন, হামলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বাতি নিভিয়ে দিতে বলে। কিন্তু আইএসআই কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা সত্য নয়, অপারেশনের আগে এ ব্যাপারে তারা কিছু জানতেন না। ওই হামলায় আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন, তার ছেলে খালিদ, বিশ্বস্ত ব্যক্তিগত বার্তাবাহক শেখ আবু আহমদ ও বার্তা বাহকের ভাই এবং অজ্ঞাত আরও একজন মহিলা নিহত হয়েছেন। এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নাইন ইলেভেনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে গ্রাউন্ড জিরোতে যাবেন। হোয়াইট হাউসে বসে লাইভ অপারেশন দেখলেন ওবামা : ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার অভিযান যখন চলছিল তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চোখ ছিল টেলিভিশনে।

হোয়াইট হাউসে সহকর্মীদের নিয়ে পুরো অভিযান ভিডিওতে দেখছিলেন তিনি। ইসলামাবাদের কাছেই অ্যাবোটাবাদ এলাকায় রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট একটি সৈন্যদলের অভিযানে প্রাণ হারান আল কায়দার শীর্ষ নেতা বিন লাদেন। ১০ বছর ধরে তাকে খোঁজা হলেও পাকিস্তানের একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশেই লুকিয়ে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানায়, ওসামার আস্তানা চিহ্নিত হওয়ার পর রোববার অভিযানে সায় দিয়েছিলেন ওবামা। সেদিন কিছু সময় গলফ কোর্টে কাটিয়ে তারপর আসেন হোয়াইট হাউসে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটসসহ নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে একসঙ্গে বসেন তিনি। সবাই দেখছিলেন ওসামার আস্তানায় অভিযান। ‘সময় যেন কাটছিল না, প্রতিটি মিনিট যেন দিনের দৈর্ঘ্য নিয়েছিল’—ওই মুহূর্তের পরিস্থিতি এভাবেই বর্ণনা করেন ওবামার উপদেষ্টা জন ব্রেনান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাই রুদ্ধশ্বাসে অভিযান দেখছিলাম। মনে হয় সবার জীবনেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

’ আল কায়দার শীর্ষ নেতা যার মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার, তাকে ধরার এ অভিযানের পরিকল্পনা আঁটা হয়েছিল ২০০৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, আল কায়দার শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা যে পাকিস্তানের ওই এলাকায় আশ্রয় নিতে চলেছেন, তা তখনই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। কয়েক মাস পর সিআইএ প্রধান লিও প্যানেট্টা নিশ্চিত হন ওসামাই সেই নেতা। খবর নিশ্চিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ওবামা তার উপদেষ্টাসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন ২০০৯ সালের ১৪ মার্চ। এরপর বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়।

শেষ বৈঠক হয় গত শুক্রবার রাতে সিদ্ধান্ত হয় চূড়ান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এরপর পাকিস্তানের গাজি ঘাঁটি থেকে সৈন্যদের বিশেষ একটি দল রওনা হয় অ্যাবোটাবাদের দিকে। হেলিকপ্টারে করে নামে ওই এলাকায়, যেখানে লুকিয়ে ছিলেন আল কায়দা নেতা। ১০ বছর ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল, সেই বিন লাদেন মারা পড়েন ৪০ মিনিটের অভিযানে। তারপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটিতে।

পুরো অভিযান দেখেই নাটকীয়ভাবে টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ঘোষণা করেন আল কায়দা শীর্ষ নেতার মৃত্যুর খবর। তখন হোয়াইট হাউসের সামনে উল্লসিত জনতার ঢল। টেলিভিশন ভাষণে ওবামা বলেন, বিন লাদেনের লাশ যুক্তরাষ্ট্রের হেফাজতে। তবে পরে জানানো হয়, আফগানিস্তানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পর সাগরে ‘সমাহিত’ করা হয় ওসামাকে।

জীবিত ওসামার মতো মৃত ওসামাতেও ভয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাই সমাহিত হওয়ার জন্য তিনি মাটি পেলেন না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পাকিস্তানে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ : পাকিস্তানে দূতাবাস ও তিনটি কনসুলেট গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেন মার্কিন মেরিন সেনা সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীর ইসলামাবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং কনসুলেট তিনটি হলো পেশোয়ার, লাহোর ও করাচিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুধু জরুরি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দূতাবাস ও কনসুলেট খোলা থাকবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ওসামা হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সতর্কতা আগামী আগস্টের ১ তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এদিকে পাকিস্তানি তালেবানরা ওসামার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

তারা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালানোর কথাও বলেছে। দ্য নিউজ অনলাইন। সেই বার্তাবাহক আবু আহমদ : আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সন্ধান জানতে তার একজন ঘনিষ্ঠ বার্তাবাহকের গতিবিধি যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছে। এই বার্তাবাহকের নাম আবু আহমেদ। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা যখন ওই বার্তাবাহককে চিহ্নিত করি, তখন তার নাম জানা ছিল না। ২০০৭ সালে নিশ্চিত হই ওই বার্তাবাহক পাকিস্তানের এবোটাবাদ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ’ যুক্তরাষ্ট্রের নৌসেনাদের এক বিশ্লেষণে বের হয়ে আসে গুয়ানতানামো বে কারাগারে আটক অনেকেই আবু আহমেদ আল কুয়েতির নাম উল্লেখ করেছেন। আবু আহমেদ আরেকজন কুয়েতি খালিদ শেখ মোহাম্মদের খুব কাছের লোক ছিলেন। বন্দিদের সম্পর্কে এ মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরে পাঠানো হয়, যা উইকিলিকস প্রকাশ করে।

লাদেনকে হত্যার অভিযানের আগে যুক্তরাষ্ট্র মোহাম্মদ নামে আল কায়দার এক বার্তাবাহক এবং আবু ফারাজ আল লিবি নামে আল কায়দার একজন জ্যেষ্ঠ নেতার নাম উল্লেখ করে। ২০০৫ সালের মে মাসে লিবিয়ায় আটক একজন বন্দি ওই দুজনের নাম বলেছিলেন। ২০০৮ সালের অক্টোবরে অন্য এক মূল্যায়নে মাদ আল খাতানি নামের একজন সৌদি নাগরিককে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে চালানো ৯/১১-এর সন্ত্রাসী ঘটনায় ২০তম হাইজাকার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেনি।

বলা হয়, এই বন্দি আল কায়দা নেতা খালিদ শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত। পরে তথ্যে দেখা যায়, আল খাতিনি যুক্তরাষ্ট্র মিশনের প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নেন আল কায়দার সদস্য আবু আহমেদ আল কুয়েতির কাছে। আল কুয়েতি ওই সময় আল কায়দার একজন সহযোগী ছিলেন। ওই মূল্যায়নে আরও বলা হয়, আল কুয়েতি কান্দাহারে দলটির মিডিয়া হাউস পরিচালনা এবং একজন বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেন। আর তা প্রমাণ করে যে তিনি ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে থাকেন।

এরপর আল-কুয়েতিকে আফগান সীমান্তের তোরাবোরায় দেখা যায় এবং ধরে নেয়া হয় তিনি আল কায়দার উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। সেখান থেকে তার ওপর চোখ রাখা হয় এবং মনে করা হয় আল কায়দার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ পাকিস্তানে রয়েছেন। সেখান থেকেই নজর রেখে অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িটি বের করা হয়। তবে অভিযান পরিচালনার সময় ওই ভবনে তিনি ছিলেন কিনা তা সিএনএন জানাতে পারেনি। অভিযানে নিহত নারী বিন লাদেনের স্ত্রী নন : রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানে আল কায়দার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে নিহত নারী তার স্ত্রী নন।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ সোমবার এ তথ্য জানায়। লাদেন নিহত হওয়ার সময় তাকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেননি বলেও কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এর আগে নিহত ওই নারী বিন লাদেনের স্ত্রীদের একজন বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সন্ত্রাসবাদবিরোধী শীর্ষ উপদেষ্টা জন ব্রেনান। বন্দুকযুদ্ধের সময় নিহত ওই নারী সম্ভবত স্বেচ্ছায় মানবঢাল হিসেবে এগিয়ে আসেন বলেও দাবি করেন তিনি। তবে হোয়াইট হাউসের আরেকটি সূত্র জানায়, হামলায় বিন লাদেনের স্ত্রী নিহত হননি, তবে আহত হয়েছেন।

রোববার রাতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে গোপন আস্তানায় হামলা চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি দল। সুত্র: আমার দেশ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।