আমি জানি এই পোস্ট টা অনেকে দিয়েছে কিন্তু আমি ক্ষোভে আবার দিলাম আমাদের দেশে এই সরকারের আমলে আইন নাই, জান মালের নিরাপত্তা নাই। সাধারন মানুষ কার কাছে যাবে...আপনি বলুন মাননীয় প্রধানমন্তী।
আমরা যেই র্যাব কে নিয়ে গর্ব করতাম আজ সেই র্যাব আজ বির্তকিত।
ব্যথায় কাতর লিমন কারাগারে
র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ঝালকাঠির কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকা থেকে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ মানবাধিকারকর্মীরা আরও কিছুদিন তাকে চিকিৎসাধীন রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছিলেন।
গতকাল হাসপাতাল ছাড়ার আগে লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন অভিযোগ করেন, সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। লিমন জানায়, সে এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তার কাটা পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। কাটা ঘা থেকে এখনো পানি ঝরছে।
গত ২৩ মার্চ বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ২৫ মার্চ রাতে লিমনকে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে লিমন সেখানেই ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার বাঁ হাঁটুর ওপরের অংশ কেটে ফেলেন।
হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, গতকাল সকাল সাতটার দিকে ঝালকাঠির রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে চার পুলিশ সদস্য হাসপাতালের কারাকক্ষে আসেন। তাঁরা জানান, লিমন রাজাপুর থানার অস্ত্র আইনের দায়ের করা মামলার আসামি।
তাকে ঝালকাঠিতে নিয়ে যাবেন। আচমকা এ খবরে লিমনসহ হাসপাতালে উপস্থিত তার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা আরও কিছুদিন তাকে হাসপাতালে রাখার অনুরোধ করলেও হাসপাতালের পরিচালক রাজি হননি।
সূত্র জানায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাসপাতালের পরিচালক খন্দকার আবদুল আওয়াল রিজভীর কাছে ফোন করে অসুস্থ লিমনকে হাসপাতালে রাখার অনুরোধ করেন। হাসপাতালের পরিচালক খন্দকার আবদুল আওয়াল রিজভী তা স্বীকার করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, লিমন সুস্থ হয়ে ওঠায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, হাসপাতালে বিছানার সমস্যা আছে। নতুন রোগীকে জায়গা দিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, কোনো চাপের মুখে তিনি লিমনকে ছাড়পত্র দেননি। তবে গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ওয়ার্ডের ১২টি বিছানার মধ্যে পাঁচটি খালি পড়ে আছে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশ প্রহরায় লিমনকে মাইক্রোবাসে করে ঝালকাঠি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের উদ্দেশে নেওয়া হয়। এ সময় লিমন ও তার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। লিমনের এক মামা ছাড়া আর কাউকে মাইক্রোবাসে উঠতে দেয়নি পুলিশ।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে লিমনকে বহনকারী গাড়িটি ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে পৌঁছায়। লিমনকে আদালতের বাইরে মাইক্রোবাসে শুইয়ে রাখা হয়।
এরপর লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম লিমনকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করেন।
লিমনের পক্ষের আইনজীবী মানিক আচার্য চিকিৎসার জন্য লিমনকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখার আবেদন জানিয়ে আদালতকে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন, লিমনের বয়স ১৬। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে কিশোর অপরাধ আদালতে। সে অনুযায়ী লিমনকে কারাগারে পাঠানো ঠিক হবে না।
রাত সাড়ে আটটার দিকে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহান আদালতের বাইরে থাকা লিমনকে এজলাসে আনার আদেশ দেন।
এ সময় লিমনের স্বজনেরা পাঁজাকোলা করে তাকে আদালতকক্ষের টেবিলের ওপর শুইয়ে দেন। শুনানি শেষে আদালত লিমনকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালত কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিমনের সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সুচিকিৎসার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও আজ সকাল ১০টার মধ্যে আদালতকে জানানোর আদেশ দেওয়া হয়।
লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের কাছে তিনি জানতে চান, লিমনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে কি না।
জবাবে তাঁরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতে গোপনীয়তার মাধ্যমে অতি দ্রুততার সঙ্গে লিমনের ছাড়পত্র প্রস্তুত করেছে। তিনি বলেন, লিমন অচল। বিছানায় বসেই সে পায়খানা-প্রস্রাব করে। কিন্তু জেলে ওকে দেখবে কে?
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমন জানায়, ‘আমার কাডা (কাটা) পায়ের ঘা শুকায় নায়, অনেক ব্যাতা (ব্যথা)।
ওই জায়গা দিয়া রক্ত বাইর অইয়্যা ব্যান্ডেজ ভিইজ্যা যায়। আমারে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে রাহেন। এ কতা হুইন্যা তারা কিছুই বলে নাই। শুধু পিডে (পিঠে) হাত বুলাইয়া দেছে। ’
আসকের পরিচালক নূর খান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় লিমনের বিষয়টি দেখার জন্য তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন।
লিমনের চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। চিকিৎসা শেষ হলে তাকে দুই সপ্তাহ পর আবার আসতে বলা হতো না। ’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ পর তাকে আবার আসতে বলা হয়েছে। হাসপাতালে আসার পর পরীক্ষা করে দেখা হবে, কবে নাগাদ ওর কৃত্রিম পা সংযোজন করা যাবে। এর আগে সাভারের একটি সংস্থা ওর কৃত্রিম পায়ের মাপ নিয়ে গেছে।
লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটিতে সে জামিন পেয়েছে। অস্ত্র আইনের মামলায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এ মামলার আসামি হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অধিকারের সুপারিশ: র্যাবের গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গু হওয়া কলেজছাত্র লিমনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগপত্র প্রত্যাহার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। সংগঠনটির এপ্রিল মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
সূএ: প্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।