আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিন লাদেন হত্যায় ধূম্রজাল

মুক্ত চেতনায় বিশ্বাসি। সবার মতকে প্রধান্য দিতে চেশ্টা করি।

রবিবার 'অপারেশন অ্যাবোটাবাদ'-এর মাধ্যমে আল-কায়েদা শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। অপারেশন অ্যাবোটাবাদের ধরন, মার্কিনিদের দাবি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা কিন্তু জারদারির অস্বীকার, অপারেশনে কমান্ডোর সংখ্যা, বন্দুকযুদ্ধ, মিডিয়ায় প্রচারিত ছবি ও ফুটেজ, লাশ মার্কিন হেফাজতে থাকার ঘোষণা, আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জনসম্মুখে প্রকাশ না করে সাগরে ফেলে দেওয়ার খবর প্রচারসহ নানা কারণে ওসামার মৃত্যু নিয়ে সংশয় ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ বছরে কম করে হলেও আট-দশবার ওসামার মৃত্যুর খবর রটেছে।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিন লাদেন বেশ কয়েক বছর আগেই নিহত হয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে বেনজির ভুট্টো আরও বলেছিলেন, ওমর শেখ নামের এক ব্যক্তি বিন লাদেনকে হত্যা করেছে। লাদেন হত্যাকারীদের কারও সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের একজন নিরাপত্তা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও ওমর শেখের সঙ্গে তার সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে। এর বাইরেও নানা গণমাধ্যমে নানাভাবে ওসামার মৃত্যুর খবর এসেছে। যখন তার থাকা না থাকা নিয়েই এত ধূম্রজাল তখন তার লাশ গণমাধ্যম কিংবা জনসম্মুখে না দেখিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে কেন? দাবি করা হচ্ছে, কবরস্থ করা হলে তার অনুসারীরা একে তীর্থস্থান বানিয়ে ফেলতে পারে, সে জন্য তার লাশ তড়িঘড়ি করে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এর আগে মার্কিন বাহিনীর হাতে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের দুই ছেলে উদয় এবং কোসে নিহত হওয়ার পর তাদের মৃতদেহ সাংবাদিকদের দেখতে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের মৃতদেহ তড়িঘড়ি করে কবর বা সাগরে ফেলে দেওয়া হয়নি। আবার সাদ্দাম হোসেন আটক হওয়া এবং ফাঁসির পর তার লাশ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু লাদেনের বেঁচে থাকা নিয়েই যখন এত সংশয় তখন জনসম্মুখে সেটি প্রকাশ বা নিশ্চিত না করেই কেন তাকে সাগরে ভাসিয়ে দিল মার্কিনিরা? তাছাড়া ওসামা বিন লাদেনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

আরেকটি সূত্র ডিএনএ টেস্টের কথা বললেও লাশ তড়িঘড়ি করে সাগরে ফেলে দেওয়ার সঙ্গে এটি মেলে না। অপারেশন অ্যাবোটাবাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠলেও বিন লাদেন আরও আগেই নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছে একাধিক গণমাধ্যম। তাই আসল বিষয় হচ্ছে, ওসামার মৃত্যু হলে আসলে কবে হয়েছে, তিনি কি মার্কিন বাহিনীর কথিত অভিযানে রবিবার মারা গেছেন নাকি আরও আগে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন বটে, কিন্তু এর পেছনে কোনো শক্ত প্রমাণ কী রাখতে পেরেছে মার্কিনিরা? ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়া ওসামা বিন লাদেনের মৃতদেহের ছবি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। পরে অবশ্য মার্কিন সরকার ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ ছবি প্রত্যাহার করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবর অনুসারে বিন লাদেনের মৃতদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু নিহত বিন লাদেনের মৃতদেহ সাংবাদিকদের দেখতে দেওয়া হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তাছাড়া বিন লাদেনের লাশ যদি সাগরে ফেলে দেওয়া হয়, তার সঙ্গে নিহত অন্যদের লাশের খবর কী? তারা কারা? সে ব্যাপারে মার্কিন বা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে কিনা। সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কর্তৃপক্ষ, কংগ্রেস সূত্র ও অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাবোটাবাদে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছে। আর এ অভিযানে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছে পাকিস্তান।

দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মার্কিনিদের এ দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী খান জারদারি। মঙ্গলবার আলোচিত বিষয়ে মুখ খুলে জারদারি বলেন, বিন লাদেন হত্যায় পাকিস্তান বাহিনীর কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। এমনকি পাকিস্তান সরকার লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানত না। মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে জারদারি বলেন, অভিযানটি যৌথ ছিল না।

তবে তার মতামতেও তিনি লাদেনের মৃত্যু হয়েছে বলেই মনে করছেন বলে জানান। এ নিয়েও আরেক ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে গোটা অপারেশনটি নিয়েও। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সংশ্লিষ্টতা যদি নাই থাকল, তাহলে একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিনা বাধায় কী করে এরকম একটি অপারেশন চালাতে সক্ষম হলো? আর এরকম 'ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর' বাসভবনে হামলার জন্য মার্কিন কমান্ডোরা কতটুকু তৈরি ছিল? যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষটি কি কোনোরকম দেহরক্ষী ছাড়াই পাকিস্তানের রাজধানীর কাছে ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন? খবরে বলা হয়েছে, অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এই বন্দুকযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল কারা? ওই বাড়ির সবাই যদি নিহত হয়ে থাকে, তাহলে কী কমান্ডোদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি? ওসামা সস্ত্রীক ওই বাড়িতে বসবাস করছিলেন বলে জানিয়ে আবার মার্কিন প্রশাসন বলছে, অভিযানে নিহতদের মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছেন, যার পরিচয় জানা যায়নি।

আবার মার্কিন অন্য মিডিয়ার খবরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, অভিযানে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নিহত হয়েছে এবং অপর দুজন আহত হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের দাবি, অভিযানে অংশ নেওয়া কোনো সৈন্যের হতাহত না হওয়া এবং পুরো ঘটনার মার্কিন ভাষ্য শুনে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, একি সত্যি? নাকি পুরোটাই মার্কিনিদের সাজানো নাটক? লাদেন কিভাবে এতকাল নিরাপদ ছিলেন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এটা বিস্ময়কর ব্যাপার যে, বিশ্বের সবচেয়ে সুসজ্জিত ও অত্যাধুনিক অস্ত্র বা সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তার কথিত সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রুকে হত্যা করতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগাল। সত্যি সত্যি ১০ বছর লেগেছে নাকি আগেই লাদেনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য কোনো কোনো মিডিয়ায় এমনও তথ্য রয়েছে, মার্কিন কমান্ডোরা বেশ কয়েকবার লাদেনকে হাতের নাগালে পেয়েও রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়নি।

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিন লাদেন নিহত হওয়ার বিষয় শতভাগ সন্দেহমুক্ত হওয়ার সময় এখনো আসেনি। তবে অধিকাংশ সূত্র মতে, রবিবার না হলেও ওসামা নিহত হয়েছেন, এ বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। একাধিক সূত্র দাবি করেছে, ওসামা বিন লাদেনের উত্থান যেমন মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য, তেমনি তার বিনাশও মার্কিন সরকারের স্বার্থেই ব্যবহৃত হবে। মাঝখানকার যে দ্বন্দ্ব ও লড়াই ছিল এর পেছনেও মার্কিন সরকারের স্বার্থই নিহিত ছিল। বিশ্লেষকদের ধারণা, এখন লাদেনের লাশও হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওবামার স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হবে।

সুত্র :http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Islam&pub_no=366&cat_id=1&menu_id=1&news_type_id=1&index=0

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।