আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক চিলতে বারান্দা..

Raindrops falling from heaven.. Will never wash away my misery..

বারান্দা ও ছাদ এই দুটো জায়গা আমার খুব পছন্দের। এ দু'টো জায়গার সাথে মিশে আছে আমার সুন্দর, বিষন্ন অনেক স্মৃতি। আজকে হঠাৎ আমার রুমের বারান্দার গিয়ে দাঁড়াতে পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে গেল। খুব সুন্দর মিষ্টি বাতাস বইছে বাইরে। এই বাতাসটা ছুঁয়ে দিলে কখনও নিজেকে খুব সুখী কখনও খুব বিষন্ন লাগে।

যখন মন ভাল থাকে তখন বাতাসটা আমার আনন্দিত মনটাতে আরেকটু সুখের হাওয়া লাগিয়ে যায়, আবার মন খারাপের সময় মনে হয় বাতাসটা বুঝি আরো বিষন্নতার বানী বয়ে নিয়ে আসছে। যাই হোক আজকে আমার মনটা অনেক ভাল। গত ২-৩ দিন ধরে মনটা বেশ খারাপ ছিল। আজকে বিকেলে ছোট খাট একটা ঝড় মনটাকে ভাল করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ঝড় তাহলে ভাল কিছুও বয়ে আনে আপাতত তাহলে একটু স্মৃতিচারন করি।

আমার বারান্দা প্রীতিটা বেড়েছিল ক্লাস সিক্স থেকে। তখন আমার নিজের কোন রুম ছিল না, বড় ভাইয়ার রুমই ছিল আমার পড়ার রুম, দিনের বেলা সময় কাটানোর জায়গা। বারান্দাটাও ছিল ভাইয়ার রুমে সাথে। বিকেল হলেই আমি বারান্দায় বসে মানুষের আনাগোনা দেখতাম। কখনও একা, কখনও সাথে থাকত ভাইয়া, আপু (ভাবী) ও আম্মু।

আম্মুর খুব পছন্দের কাজ ছিল, কে কীভাবে হাঁটে কে কি করে এগুলো দেখা। এগুলো দেখতে দেখতেই বিকেলের আড্ডা ভালই চলত। একদিনের কথা বেশ মনে আছে। আমরা সবাই বারান্দায় বসে ছিলাম। আমাদের বারান্দার ঠিক উল্টা দিকে, একটু দুরেই একটা দোতলা বিল্ডিং ছিল, বিল্ডিংটার নিচে ছিল একটা ছোট ক্লিনিক, নাম ছিল শাপলা ক্লিনিক।

ক্লিনিকের মালিকই দোতলায় থাকত। কোন একটা বিচিত্র কারনে তাদের বারান্দাটাই তারা ডাস্টবিন, বসার জায়গা, বাচ্চার গোসলখানা, এমনকি মাঝে মাঝে ড্রেসিং রুম হিসেবেও ব্যাবহার করত। সেদিন ক্লিনিকের মালিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাপড় বদলাচ্ছিলেন, এমন সময় হঠাৎ করে তার লুঙ্গিটা.... যাই হোক পরের ঘটনা না হয় নাই বললাম সবাই বুঝে নেন যখন ইলেকট্রিসিটি চলে যেত তখনও আমরা সবাই বারান্দায় বসে থাকতাম। বিশেষ করে ভাইয়া, আপু আর আমি। বারান্দাটা দক্ষিনমুখি হওয়ায় বেশীরভাগ সময় অনেক বাতাস থাকত।

বসে বসে তখন চলত ভাইয়া আর আমার সারাদিনের গল্প বলা। আমরা দু'জনে সারাদিনে কোথায় কি করেছি তা না বললে আমদের শান্তি ছিল না। তারপরে ক্লাস সেভেনে পড়ার মাঝামাঝি সময়ে ভাইয়া আপু দু'জনেই সিঙ্গাপুরে চলে গেল। ভাইয়ার রুমে তারপর থেকে আমি আর আম্মু থাকতাম। বেশীরভাগ সময় আমি একাই বারান্দায় বসে থাকতাম, ভাইয়ার কথা মনে করতাম।

ধীরে ধীরে আমার সকল মন ভাল, মন খারাপের সাক্ষী হয়ে গেল বারান্দাটা। বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়া এমনকি পড়াও চলত আমার বারান্দায় বসেই। এমন হয়ে গিয়েছিল যেন বারান্দাটাই আমার দুনিয়া। ক্লাস এইটে ওঠার পর রাত জেগে পড়া শুরু করি, আম্মু রুমে ঘুমাত বলে রুমে আলো জ্বালিয়ে পড়া সম্ভব ছিল না। আমি বারান্দায় বসেই পড়তাম, ডায়েরী লিখতাম।

আমার প্রথম ডায়েরী লেখা ছিল বারান্দায় বসেই। মাঝে মাঝে রাতের নিস্তব্ধতা অনুভব করতাম। দিনের ব্যস্ততা মিলিয়ে যেতে দেখতাম রাত বাড়ার সাথে সাথে। মাঝে মাঝে রাতে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বসে থাকতাম। আমার সমস্তটুকু জুড়ে ছিল আমার ছোট্ট বারান্দাটা।

একসময় আমরা ওই বাসাটা ছেড়ে দেই। বারান্দাটাকে ছেড়ে আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। বারান্দাটা থেকে খুব সুন্দর চাঁদ দেখা যেত। আমি সেই চাঁদ দেখাটাকে খুব মিস করতাম। আমার মন পড়ে থাকত আমার প্রিয় বারান্দাটুকু জুড়ে।

আমি যে মানুষ এটা প্রমান করতেই আস্তে আস্তে ভুলে গেলাম। মনে যে পড়ত না তা না, মনে পড়ত, এখনও পড়ে। বারান্দার কষ্ট অনেকটা ভুলিয়ে দিয়েছিল বোধহয় আমাদের নতুন বাসার ছাদ। সময় পেলেই ছাদে চলে যেতাম। ছাদে বসে বসে গান শুনতাম।

একা একা ছাদে থাকতে ভাল লাগত, নিঃসঙ্গতাটাকে উপভোগ করতাম। পরে অবশ্য ছাদে আমার অনেক সঙ্গী-সাথী হজুটে গিয়েছিল। পিচ্চি একটা ভাই, একটা বন্ধু, কয়েকটা বড় ভাইয়া-আপু। বিকেল হলেই সবাই আমরা ছাদে চলে যেতাম। সেই বছর বৈশাখে আমরা ছাদটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে ছিলাম, অনুষ্ঠান করেছিলাম।

এরপরে আবার ছাদের সাথেও বিচ্ছেদ। ছেড়ে আসলাম বাসাটা, ছাদটা, ছোট্ট ভাইটাকে, বন্ধুটাকে, ভাইয়া আপু গুলোকে । সাথে করে নিয়ে আসলাম অনেক স্মৃতি। যাই হোক অনেক হল স্মৃতিচারন, আপাতত স্মৃতির খাতা বন্ধ করে মানুষ জ্বালানো বন্ধ করি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।