আজ সকাল থেকেই মনটা খুব শান্তি শান্তি লাগছে | গত কয়েক দিনের বোঝানোর পর আমি কাসিফ আলাউদ্দিন , আজিব সকিক আর তাদের দুই বন্ধু বিজ্ঞানী মামা এবং গাধা ভাইয়ের কথা গত রাতে মেনে নিলাম | সাথে পাল্লা ভাইও ছিলেন | আগে জামাত করলেও বর্তমানে বিদেশী একটি স্কলারশিপের আশায় তিনি নাস্তিক হয়েছেন | কিন্তু তার অন্য নাস্তিক বন্ধুরা আজও তাকে জামাতের নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নামেই ডাকে, সংক্ষেপে আমাদের পাল্লা ভাই |
যুক্তি এবং প্রমান ছাড়া কিছু বিশ্বাস করতে নেই |
সৃষ্টিকর্তা বলে কিছুই নেই |
ভালই হলো | ধর্ম না থাকার কারণে যে যে কাজগুলি এতদিন করা হয়নি তা এখন মনভরে করা যাবে | গত কয়েকদিন ধরেই বন্ধু খোকন জ্যাক ডানিয়েলস এর একটা বোতল আছে বলে বিরক্ত করছিল | আজ মন ভরে মদ খাওয়া আর তারপর কিছুক্ষণ জুয়া খেলা হবে |
Charity began at home |আর আমার প্রমান খোজা শুরু হলো বাসা থেকে | যাকে আমি জন্মদাতা পিতা বলে জানি সে আমার পিতা তো ? ধর্মভীরু এই লোক কোনদিন ঘুষ খায়নি | অথচ আমার অন্য বন্ধুদের বাবারা একই পোস্টে চাকরি বাড়ি গাড়ি করে ফেলল | আমরা এখনো ভাড়া বাড়িতেই পড়ে রইলাম | অথচ আমার কোনদিন ঘুষ ব্যাপারটি কে অস্বাভাবিক মনে হয়নি | যুক্তি দিয়ে বিচার করলে যে পরিমানে জিনিসপত্রের দাম তার তুলনায় বেতন সামান্য | আত্মমর্যাদা নিয়ে বেছে থাকতে গেলে বাড়তি ইনকাম ছাড়া উপায় নেই | আর ঘুষ খেলে যে কিছুই হয়না আর ভালো থাকা যায় তা তো প্রমানিত | তাও কেন যে এই বেকুবটা ( বাবা - প্রমান সাপেক্ষে ) ঘুষ খেল না |
সকাল বেলা মাকে গিয়ে বললাম , মা বিকেলে একটু সময় হাতে রেখো | তুমি আর মোস্তাফিজ সাহেবকে ( বাবা - এখন পর্যন্ত ) নিয়ে একটু বের হব | মা তার স্বামীকে ( এইটা আমি নিশ্চিত - বিয়ের কাবিননামা দেখেছি ) নাম ধরে ডাকায় একটু অবাক হলেন | বুঝিয়ে বলতেই মার মুখ পাশে জ্বলতে থাকা গ্যাসের চুলার চেয়ে গরম হয়ে উঠলো | হাতের রুটি বেলার বেলুনটি তিনি আমার মাথাকে রান আউট করার ভঙ্গিতে ছুড়ে মারলেন | কমবয়সে সাতচাড়া খেলার অভ্যাস ব্যাপক কাজে দিল | এঁকেবেঁকে কোনো মতে মাথা বাঁচিয়ে দে ছুট | পাশে দাড়িয়ে থাকা বউ আমার অবাক হয়ে চেয়ে রইলো |
অফিসে এসে পাশের কিউবিকলের মিলির হাসিমুখ দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল | বউএর সাদামাটা মুখের পাশে মিলির মুখ কল্পনা করতেই মন আবার হতাশ হয়ে পড়ে | কেন যে বাবা মার কথামত সাদামাটা বৌটাকে বিয়ে করতে গেলাম | না আছে চেহারা , না আছে মিলির মত আগুন জ্বালানো ফিগার | মিলি যখন দুসারি কিউবিকলের মাঝ দিয়ে হেটে যায় তখন শুধু অফিসের কলিগরাই নয় , ডিরেক্টর থেকে নিয়ে পিওন সবার বুকে কাপন উঠে | নেহায়েত মিলির বাবাও এই কোম্পানির একজন ডিরেক্টর , তাই মিলির সাথে কেউ বেশি ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করেনি | মিলির আবার আমার সাথে খাতির একটু বেশি | একই ডিপার্টমেন্ট এর সিনিয়র ছাত্র হবার কারণে ইউনিভার্সিটি তে পাওয়া সালাম অফিসে এসে হাই-হ্যালো তে ঠেকেছে | হয়ত আমার প্রতি মিলির একটু সুনজরও আছে | গত দুবছর ধরে আটকে থাকা প্রমোশনটা মিলি অফিসে জয়েন করার কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ে যায় | এমনকি প্রমোশনের দুদিন আগে মিলির বাবা তার বিলাসবহুল কামরায় ডেকে নিয়ে দশ মিনিট কথাও বলেন যা ছিল গত দুবছরে প্রথম |
মিলি জানতে চায় আজ সন্ধায় ফ্রি আছি কিনা | একটু চিন্তা করে জানালাম ফ্রি | অনুরোধ করলো বাসায় আসার জন্য | জানালাম সাতটার দিকে দেখা করতে পারব |
অফিসে কাজের ঝামেলা না থাকায় একটু আগে বের হলাম | খোকনের এপার্টমেন্টএ পৌছে দেখি রাসেল , টুলু আর আতিক ও হাজির | চিকেন ফ্রাই আর জ্যাক ডানিয়েলস এর বোতল শেষ হতে বেশি সময় লাগলনা | এর পর কিছুক্ষণ অল্প স্টেকে নাইন কার্ড খেলা | মাসের শেষ | পকেটে টাকা বেশি না থাকায় বেশি হারতে হলনা | সাতটার একটু পরে মিলির বাসায় পৌছলাম | সারাটা রাস্তা জ্যাক ডানিয়েলস এর হালকা নেশায় নানা ঘটনাকে যুক্তি দিয়ে প্রমান করতে করতে সদ্য নাস্তিক মনটাকে বাহবা দিয়ে উঠলাম |
আজ অন্যান্য দিনের চেয়েও মিলিকে আগুনের মত লাগছে | ড্রইং রুমে বসার পর থেকেই শুরু হলো ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা | টুকটাক কথা বলার পর মিলি এলো আসল কথায় | আমাকে তার দারুন ভালো লাগে | জানালাম আমি বিবাহিত | তার উত্তর কোনো সমস্যা নেই | প্রথম প্রথম আমরা গোপনে মেলা মেশা করব | তারপর সুযোগ বুঝে বৌকে তালাক দিয়ে মিলিকে বিয়ে করলেই চলবে | রাজত্ব আর রাজকন্ন্যা আমার হাতের মুঠোয় | এই সম্পর্ক আমার ক্যারিয়ার এর জন্য কিরকম সুফল বয়ে আনবে মনে কতই পুলকিত হলাম | জানালাম আমি রাজি | আনন্দে মিলির মুখখানি হাসিতে ভরে উঠলো | বলল , রাজি যখন সম্পর্ক শুরুর চিহ্ন হিসেবে তাকে একটু আদর করতে | চোখ বন্ধ করে মুখ এগিয়ে দিল চুমু খাবার জন্য | দুহাতের মধ্যে তার মুখখানি ধরতেই মনে হলো মুখ তো নয় যেন চাঁদ ধরেছি |
এই চাঁদের পাশে আমার বৌএর সাদামাটা মুখ তুলনা করতে গিয়েই ঝামেলা শুরু | বৌটা কিন্তু আমাকে কঠিনভাবে ভালবাসে | প্রতিদিন বাইরে যাবার সময় হাত ধরে বলে তাড়াতাড়ি এস | যুক্তি দিয়ে পরিস্থিতি বিচার কতে শুরু করি | এক দিকে এই চাঁদ , অন্য দিকে আমার সাদামাটা বউ | একদিকে প্রাচুর্য , অন্যদিকে মধ্যবিত্ত গতবাধা জীবন যেখানে আছে মা-বাবা-বৌএর ভালবাসা | যুক্তি দিয়ে বিচার করলে আমি যা যা চাই জীবনে সবই আমি পাব মিলিকে নিজের করে পেলে |
কেন যেন আজ যুক্তির বদলে আমার সাদামাটা বৌএর ভালবাসা বড় হয়ে উঠলো আমি জানিনা | মিলিকে ঐরকমভাবে চোখ বন্ধ অবস্থায় রেখে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম | আমি জানি আগামীতে আমায় দেখে মিলি আর হাসবেনা | আমার প্রমোশন আরো দু বছরের জন্য আটকে যাবে | অফিসে নানা রকম জটিলতার মখোমুখি হতে হবে | কিন্তু সব কিছু আমি মোকাবেলা করতে পারব পরিবারের সবার ভালবাসা দিয়ে |
নাস্তিক ভাইদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন - যুক্তি আর বিজ্ঞান দিয়ে কি ভালবাসা প্রমান আর বিশ্লেষণ করা যায় ? যদি না যায় , আপনারা কি ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করেন ?
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।