(ইহা নিতান্তই হালকা লেখা। সিরিয়াস মানুষদের জন্য নহে)
জীবনে যত শিক্ষা লাভ করিয়াছি তাহার মধ্যে একটি হইতেছে, নারীজাতিকে কখনোই তাহাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে উপদেশ দিতে নাই। দিলেই আশাহত, এমনকি বাঁশাহত (বাঁশ + আহত) হওয়াও বিচিত্র নহে। স্কুলে পড়ার সময় নারীজাতিকে মোটামুটি পরিহার করিয়াই চলা হইত। কেউ কোন রমণীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলিলে উহাকে মোটামুটি গর্হিত ক্রিয়া হিসাবেই গণ্য করা হইত।
আমরা সেই বালককে লইয়া পরিহাস করিতে ছাড়িতাম না, তাহার জীবন অতিস্ট করিয়া নিষ্ঠুর আমোদ পাইতাম। এক বন্ধু একবার ক্লাস ক্যাপ্টেন হইয়াছিল, আমরা তাহাকে আর তাহার নারী ভাইস-ক্যাপ্টেনকে লইয়া এমনই মশকরা করিতাম যে সে বেচারা উক্ত ভাইস-ক্যাপ্টেনকে একরকম পাশ কাটাইয়াই চলিত। সে বেচারা এখন আমাদের শাপ-শাপান্ত করে, আমাদের মত কুলাঙ্গাররা না থাকিলে বেচারার উক্ত ভাইস-ক্যাপ্টেনের সাথে এতদিনে একটা প্রেম হইয়া যাইত। বন্ধুর অভিযোগ উড়াইয়া দেওয়া যায় না।
কলেজে উঠিয়া সকলের ভোল পালটাইয়া গেল।
নারীজাতির সঙ্গলাভ বিশেষ কৃতিত্বের বস্তু হিসেবে বিবেচিত হইতে লাগিল। নিতান্ত অবলাকান্ত ধরণের বালকটিও রমণী বশীকরণের নিত্যনতুন কৌশল প্রদর্শন করিয়া তাক লাগাইয়া দিতে লাগিল! আমি যে শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিতাম সেখানে আবার বালিকার সংখ্যা বালকদের দ্বিগুণ ছিল। সুতরাং, না মিশিয়া উপায় ছিল না।
সারাজীবন সংসার করিয়াও অনেকে রমণীকূলের মন বুঝিতে পারেন না, আমি ছয় মাস মিশিয়া কি বুঝিব? সে সময় কলেজের পাট সদ্য শেষ হইয়াছে। ফেয়ারওয়েলের আগে এক রমণী মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করিল, সে নাকি ফেয়ারওয়েলে শাড়ি পড়িতে মনস্থ করিয়াছে।
আমি লজ্জার মাথা খাইয়া আকণ্ঠ রোমান্টিসিজম পান করিয়া নেশাগ্রস্থ হইয়া কহিলাম, সুন্দরী (এই শব্দটুকু অবশ্য মনে মনেই কহিয়াছিলাম), কালো শাড়িতে তোমায় অপূর্ব লাগিবে। কালো শাড়ি পড়িয়া আসিও। 'সুন্দরী' আমাকে অবাক করিয়া দিয়া রাজি হইল। আমি অপেক্ষার প্রহর গুনিয়া দিন কাটাইতে লাগিলাম।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসিল।
আমি অতি উৎসাহের চোটে অনুষ্ঠান শুরু হইবার দেড় ঘণ্টা আগেই হাজির হইলাম। কালো শাড়ি পড়া পরীকে আর খুঁজিয়া পাই না। একটু পড়ে আবিস্কার করিলাম, কোথায় পরী, কোথায় কালো শাড়ি? এ তো আকাশী শাড়ি পড়া আন্টি! নিমেষে মনটা তাবদা মারিয়া গেল। মন চাইতেছিল তৎক্ষণাৎ ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করি, এ কি আন্টিমার্কা শাড়ি পরিধান করিয়াছ? আমার পছন্দের বুঝি কোন মুল্য নাই? ইতোমধ্যে অপর এক বালিকা উত্তমরূপে সাজুগুজু করিয়া আসিয়া হাজির হইলো বিধায় উক্ত ক্ষুদেবার্তা আর পাঠানো হইলো না। খুব ভাব ধরিয়া বালিকার সাথে ফটো তুলিলাম।
ওমা! দিন কয়েক পড়ে বালিকা আমার এক বন্ধুকে বলিল, আমার পাশে নাকি উহাকে আমার খালার মত লাগিতেছিল! একজনকে আমি আন্টি বলিলাম, অপরজন দেখি স্বেচ্ছায়ই আন্টিত্ব লভিতে চায়।
এই সুযোগে বলিয়া রাখি, সম্পর্কে আন্টি নহে এমন কোন রমণীকে ভুলেও আন্টি বলিতে নাই। সে ২০১০ সালের কথা আমি তখন ছয় মাস হইলো খোমাবই (Facebook) ব্যবহার করি। এক বন্ধুনীর ছবি দেখিয়া আন্টি বলিয়া সম্বোধন করিয়াছিলাম। ভদ্রমহিলা আমাকে জনসমক্ষে তো আঙ্কেল ডাকিয়াছিলেনই, উপরন্তু ফোনেও ঝাড়ি দিতে ছাড়েন নাই।
সুতরাং, সাধু সাবধান!
সবকথার শেষ কথা হইতেছে, আজকাল ন্যাড়ারা বারবার বেলতলায় যায়। বেলতলার এক অমোঘ আকর্ষণ আছে, যার দরুন হেলমেট পড়িয়া হইলেও ন্যাড়ারা বেলতলায় যায়। গুরু হুমায়ূন আহমেদ বলিয়াছিলেন, "প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। " গুরুর কথার পিঠে বলিতে চাই, ন্যাড়া এবং বেলতলা কেউই প্রকৃতির বাইরে নয় বরং প্রকৃতিরই অংশ। বেলতলারা কেন যেন ন্যাড়াদের লইয়া আকর্ষণ-বিকর্ষণ খেলা করিতে পছন্দ করে।
সে যাক, আসল কথায় আসি। সম্প্রতি এক রমণীর ওপর কিঞ্চিৎ ক্রাশ জন্মাইয়াছে। তাহাকে তাহার পরিচ্ছদ লইয়া ফাইনাল পরীক্ষার পরপর কিঞ্চিৎ উপদেশ দিবার সাধ হইতেছে। দেখা যাক, তখন পর্যন্ত দিবার উৎসাহ থাকে নাকি। আর দিতে পারিলে দেখা যাইবে বেল আমার ন্যাড়া মাথায় কত জোরে আঘাত করিতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।