আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরম শত্রু



হঠা ডাকু আর পুটুর সাথে গিটু-কিটুর হৈ চৈ বে‍ধে গেল ডাকু-পুটুর একটাই যুক্তি, মাংসভোজী কেউ তাদের দলে থাকতে পারবে না। এমনকি তারা মিতুকেও দলে নিবেনা। কারণ সেও মাঝে মাঝে মাংস খায়। তাছাড়া সে অলস। ডাকু আর পুটুর মতো তেমন বনবাদাড়ে ঘুরাঘুরি করতে পারেনা।

একটু আরাম পেলেই ঘুমাতে চেষ্টা করে। তবে মিতুর যুক্তি, তারা তাকে দলে না নিলেও কুটুসকে দলে নিক। কারণ দলছুট কুটুস বেচারা শপথ করছে,সে আর কখনো মাংস খাবেনা। তবে সবচেয়ে বড় কথা সে বিপদে আপদে গিটু-কিটুদের নিরাপত্তা দেবে। ডাকু-পুটু পরস্পরের দিকে চেখ টিপ টিপ করে থাকায়।

তারা এই কথার আগা মাথা কিছুই বোঝে না। কুটুস কিভাবে তাদের নিরাপত্তা দিবে? অবশেষে গিটু কিটু সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয়,`শুন আমরাতো ছেলে মানুষ, সবসময় খেলার তালে থাকি। মাংসভোজীরা কখন কোন দিক থেকে আক্রমণ করে- তা জানিনা। কুটুসের বাবা এলাকার মস্ত বড় সিপাহী। সব মাংসভোজীরা তাকে জমের মতো ভয় পায়।

সুতরাং যখন আমাদের ওপর আক্রমণ আসবে তখন কুটুস এক দৌড়ে তার বাবাকে নিয়ে আসবে। তারপর আচছামতো শায়েস্তা করবে। বুঝলি? ডাকুপুটু আবার প্রশ্ন করে, কিন্তু তার বাবা তো মাংসভোজী? হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু তাতে ভয় কি? কুটুস কে আমাদের দলে নিলে বরং বিপদের আশংকা ‌আরো কমবে। তাছাড়া কুটুসরা তো আর শিলু কাবুদের মতো হিংস্র না।

কুটুসের বাবা মাংস খায় বটে - তবে তা শুধু বিয়ে-শাদি উ সব-পার্বণে দাওয়াত পেলেই। ডাকু পুটুর আগ্রহ আরো বাড়ে। তারা আবার প্রশ্ন করে, কিন্তু সে কিভাবে আমাদের নিরাপত্তা দিবে? সেও তো ‌আমাদের সাথে খেলায় মজে থাকবে। এবার মিতু একটু ভাবে তারপর জোর গলায় বলে, শোন বোকারা, তোমরা যখন খেলবি তখন কুটুস আশেপাশের কোন একটি জায়গায় ঘোপটি মেরে বসে থাকবে। তোরা খেলবি আর কুটুস তোদের দেখবে।

মাঝে মাঝে র্নিদেশনা দিবে। মনে কর এটাও একটা খেলার অংশ। নারে কুটুস? কুটুস মাথা নাড়ে। হঠা কুটুসের প্রতি মিতুর এমন দয়া দেখে কুটুসের মনটা একদম গলে গেল। এতদিন কুটুসের সাথে মিতুর সম্পর্কটা ভালো ছিলনা।

শুধু ঝগড়াঝাটিই লেগে থাকতো। কুটুস আজ মন থেকে সব হিংসে বিদ্ধেষ ঝেড়ে দুর করে দিল। কুটুস লেজ নেড়ে ঘেউ ঘেউ করে মিতুকে ধন্যবাদ দেয়। সভায় সবার সিদ্ধান্তে কাবু শিলু আর মিতু বাদ পড়ল। কাবুর মনে কোন দুঃখ নেই বরং তাকে দলে না নেওয়ায় তার ভালো হয়েছে।

কারণ তারা এই রাজ্যে সম্ভ্রান্ত । সুতরাং রাজপুত হয়ে তারা সাধারণের সাথে‍ মিশে কেমন করে। কিন্তু শিলু কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরল। এই ভরদুপুরে শিলুর বাবা পায়ের ওপর থুতনি রেখে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। হঠা শিলুর কান্না শুনে সে হতচকিত হয়ে দা‍‍‍ড়িয়ে গেল।

বাবাকে দেখে শিলুর কান্না আরো বাড়িয়ে দিল। শিলুর কান্না দেখে বাবা তেলে বেগুনে আগুন। শিলুর কান্না থামানোর জন্যে বকতে থাকল এই রাজ্যে আমার চেয়ে বুদ্ধিমান আর কে আছে আমার চেয়ে ভালো খাবার আর কে খায়? আমার চেয়ে সম্ভ্রান্ত কে আছে?’ আমার ছেলে কে দলে নিবেনা, - কত বড় দুঃসাহস? এর মানে একটাই আমাকে অপমান করা। আর আমি এর প্রতিশোধ নেবই। শিলুর বাবার গায়ের মসৃণ মোলায়েম কেশরাজি খাড়া করে ফেলল।

তারপর লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে শিলুকে বুকে টেনে নিল। তারপর গতের্‍র গভীরে ঢুকে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলল,‘শুনো শিলো, তোমার দুপুরে বের হওয়ার দরকার নেই। তুমি বাসায় মায়ের সাথে ঘুমাবে আর আমি তোমার জন্যে রাজ্যের সেরা খাবারগুলো ‍ আসব। যে খাবারগুলো ঐ ফকিরনীর পোলারা কখনো খেতে পায়না। বাবার সান্ত্বনায় শিলু যে কখন ঘুমিয়ে গেল তা বাবা টেরই পায়নি।

বোশেখ মাস। আকাশে গনগগনে রোদ। আগুন হাওয়া মাঝে মাঝে ঝাপটা মেরে চলে যাচ্ছে। বিশাল আম গাছ। প্রশ্স্ত তার ছায়া।

আম্র শিশুগলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। নিছে একটা শীতল পানির কূপ। বনরাজ্যের অধিবাসিদের নিকট এটি একটি প্রস্দ্ধি স্থান। গ্রুপ সেভেনের সদস্যরা ঠিক করল আজকে এখানেই তারা খেলার আসর জমাবে। কুটুসের গলায় একটা বাঁসি।

কুটুস পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাসিতে ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে সবাই হৈ হুল্লোড় করে চলে আসতে থাকল। সবার শেষে গা ঢুলিয়ে প্যাঁক প্যাঁক করে আসলো ডাকু। ডাকুই এই জায়গাটিকে খেলার জন্যে নিবার্চন করেছে। কুটুসের বাঁশিতে খেলা আরম্ভ হয়ে গেল। প্রায় ঘন্টা খানিক চলার পর আরেকটি নতুন খেলা আরম্ভ হয়ে মিনিট পাচেক ধরে চলছিল।

এমন সময় হঠা কোথায় থেকে শিলুর বাবা কিটুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। সবাই ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে দিক বিদ্বিক ছোটাছুটি করে পালাল। আর ডাকু কুপের মধ্যে দিল এক লাফ। সে খুব কান্না করছিল কারণ সে ‍ কিভাবে টানা হেচড়া করে নিয়ে যাচ্ছিল তা দেখছিল। শিলুর বাব যখন বাসায় পৌছে তখন শিলু ঘুমে বেহুশ।

বাবা ডাক দিল, শিলু ও শিলু... উঠো, উঠো। দেখ দেখ কি মজার খাবার এনেছি। শিলুর মা খাবারটি ডাইনিং টেবিলে পরিবেশন করে। শিলু উঠে মুখ টুখ মুছে টেবিলের কাছাকাছি যায়। কিন্তু তার চোখ ছানাবড়া।

আরে আরে এত কিটু!... - বাবা, তো তুমি কি তাহলে কিটু কে হত্যা করে এনেছো? - হ্যাঁ বাবা, এই সেই কিটু, গ্রুপ সেভেনের সদস্য, যে তোমাকে খেলার দলে নেয়নি। - কিন্তু তাই বলে তুমি এত নির্মম প্রতিশোধ নিলে? - হ্যাঁ বাবা, প্রতিশোধ সবসময় নির্মম হয়। - কিন্তু দোষ তো কিটু করে নি? - দোষ সবাই করেছে তাই সবাই কে এক এক করে শিকার করবো। যেহেতু সবার আগে কিটুই ভেটো দিয়েছিল, তাকে সবার আগে শিকার করলাম। - বাবা তোমার এ ন্যাক্কারজনক প্রতিশোধ আমি সমর্থন করি না।

আমি কিছুতেই কিটুর মাংসে কামড় বসাব না। - শোন বাবা, তোমার রক্ত আর আমার রক্ত এক। আর প্রতিবাদ করিস না। জালেমের ঘরে কি আলেম উঠছিস? - আলেম আর লেম বুঝি না বাবা। যে মাংস খাওয়ার জন্যে ওরা আমাদের ঘৃনা করে, তাদের খেলা দলে নেয়না, সেই মাংস খাওয়ার দরকার কি? - মাংস না খেয়ে কি খাবি? গাছ খাবি? মাটি খাবি? - শান্তির জ্ন্য দরকার হলে মাটি খাবো, বন্ধুত্বের জন্যে প্রয়োজনে গাছ খাবো।

শিলুর মা এতক্ষণে চি কার করে উঠে, - এই চোকরা বেশি বেড়ে গেছিস, খাইলে খা আর না খাইলে উপোস থাক। - তাও ভালো। এদিকে গ্রুপ সেভেনের সদেস্যদের মা -বাবারা সিপাহীর কাছে বিচার দিল। তাদের অভিযোগ দায়িত্বে অবহেলার জন্য নাকি এই র্দূঘটনা ঘটছে। কিন্তু কুটুস স্বীকারোক্তিমূলক জবান ‍ যে তাকে নাকি ঐ স্বেতকায় মিতুই শিখিয়ে দিয়েছিল বিপদে সতর্ক সংকেত না দেওয়ার জন্য।

এবার সিপাহী গলা উচিয়ে বলে, আমার ছেলে কুটুসের কোন দোষ নেই। সব দোষ মিতুর। এই সিপাহীর জাত বেচে থাকতে তার কোন রক্ষা নেই। এই তল্লাটে তাকে ধরে দোররা মারা হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।