আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক গুছ সুনিল

সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই

আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ পরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি, মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে- (ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!) আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়িরে ছেলে সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক ঘামে ছিল না এমন গন্ধক যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পার। নিখিলেশ, তুই একে কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেকেরে বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা; আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না। আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না। আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম, আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে জীবনবদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একি নদীর তরঙ্গে ছেলেবেলার মতো ডুব সাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই, আমার ঘরের দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি ….., ব্যক্তিগত জিরো আওয়অর; ইচ্ছে ছিল না জানাবার এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাত্‌ড়ে টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায় আছে অদুরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায় কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে বেজে ওঠে সাইরেন।

নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর। নারী ও শিল্প / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঘুমন্ত নারীকে জাগাবার আগে আমি তাকে দেখি উদাসীন গ্রীবার ভঙ্গি, শ্লোকের মতন ভুরু ঠোঁটে স্বপ্ন বিংবা অসমাপ্ত কথা এ যেন এক নারীর মধ্যে বহু নারী, বিংবা দর্পণের ঘরে বস চিবুকের ওপরে এসে পড়েছে চুলের কালো ফিতে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না, কেননা আবহমান কাল থেকে বেণীবন্ধনের বহু উপমা রয়েছে আঁচল ঈষৎ সরে গেছে বুক থেকে-এর নাম বিস্রস্ত, এ রকম হয় পেটের মসৃণ ত্বক, ক্ষীণ চাঁদ নাভি, সায়ার দড়ির গিট উরুতে শাড়ীর ভাঁজ, রেখার বিচিত্র কোলাহল পদতল-আল্পনার লক্ষ্মীর ছাপের মতো এই নারী নারী ও ঘুমন্ত নারী এক নয় এই নির্বাক চিত্রটি হতে পারে শিল্প, যদি আমি ব্যবধান টিক রেখে দৃষ্টিকে সন্ন্যাসী করি হাতে তুলে খুঁজে আনি মন্ত্রের অক্ষর তখন নারীকে দেখা নয়, নিজেকে দেখাই বড় হয়ে ওঠে বলে নিছক ভদ্রতাবশে নিভিয়ে দিই আলো তারপর শুরু হয় শিল্পকে ভাঙার এক বিপুল উৎসব আমি তার ওষ্ঠ ও উরুতে মুখ গুঁজে জানাই সেই খবর কালস্রোত সাঁতরে যা কোথাও যায় না। বয়েস / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার নাকি বয়েস বাড়ছে? হাসতে হাসতে এই কথাটা স্নানের আগে বথরুমে যে কবার বললুম! এমন ঘোর একলা জায়গায় দুপাক নাচলেও ক্ষতি নেই তো- ব্যায়াম করে রোগা হবো, সরু ঘেরের প্যান্ট পরবো ? হাসতে হাসতে দম পেটে যায়, বিকেলবেলায় নীরার কাছে বলি, আমার বয়েস বাড়ছে, শুনছো তো? ছাপা হয়েছে! সত্যি সত্যি বুকের লোম, জুলপি, দাড়ি কাঁচায় পাকা- এই যে চেয়ে দ্যাখো দেখে সবাই বলবে না কি ছেলেটা কই, ও তো লোকটা! এ সব খুব শক্ত ম্যাজিক, ছেলে কীভাবে লোক হয়ে যায় লোকেরা ফের বুড়ো হবেই এবং মরবে, আমিও মরবো আরও খনিকটা ভালোবেসে, আরও কয়েকটা পদ্য লিখে আমিও ঠিক মরে যাবো- কী, তাই না? ঘুরতে ঘুরতে কোথায় এলুম, এ জায়গাটা এত অচেনা আমার ছিল বিশাল রাজ্য, তার বইরেও এত অসীম শরীরময় গান-বাজনা, পলক ফেলতেও মায়া জাগে এই ভ্রমণটা বেশ লাগলো, কম কিছু তো দেখা হলো না অন্ধকারও মধুর লাগে, নীরা, তোমার হাতটা দাও তো সুগন্ধ নিই।

নীরা, শুধু তোমার কাছে এসেই বুঝি সময় আজো থেমে আছে। নারী / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নাস্তিকেরা তোমায় মানে না, নারী দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো তুমি চুল মেলে বিপ্লবের শত্রু হয়ে আছো ! এমন কি অদৃশ্য তুমি বহু চোখে কত লোক নামই শোনেনি যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে জল-রং-আলো... তারা চেনে প্রেমিকা বা সহোদরা জননী বা জায়া দুধের দোকানে মেয়ে, কিংবা যারা নাচে গায় রান্না ঘরে ঘামে শিশু কোলে চৌরাস্তায় বাড়ায় কঙ্কাল হাত ফ্রক কিংবা শাড়ি পরে দুঃখে ইস্কুলে যায় মিস্তিরির পাশে থেকে সিমেন্টে মেশায় কান্না কৌটো হাতে পরমার্থ চাঁদা তোলে কৃষকের পান্তাভাত পৌঁছে দেয় সূর্য ক্রুদ্ধ হলে শিয়রের কাছে রেখে উপন্যাস দুপুরে ঘুমোয় এরা সব ঠিকঠাক আছে এদের সবাই চেনে শয়নে, শরীরে দুঃখ বা সুখের দিনে অচির সঙ্গিনী ! কিন্তু নারী ? সে কোথায় ? চল্লিশ বছর ধরে অবক্ষয়ী কবি-দল যাকে নিয়ে এমন মেতেছে ? সে কোথায় ? সে কোথায় ? দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো চুল মেলে সে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ? এই ভিড়ে কেমন গোপন থাকো তুমি যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে জল-রং আলো...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।