। পথে পথে-৫
কালকের ঘটনা মোকলেসের চোখের পাতায় ভাসে। সামনে হাটে মোকলেস। তার প্রথম কাজ হচ্ছে হারুন ভাইয়ের সাথে একটা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া। সেখানে তার ইন্টারবিউ হবে।
একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে আবেদন করেছেন মওলানা হারুন। তিনি জানেন চাকরিটা তার হবেনা। তারপরও ইন্টারবিউ দিতে যাবেন। ইন্টারবিউ দিলে অভিজ্ঞতা বাড়ে। অভিজ্ঞতা অনেক উপকার করে।
গরুর দুধের মতো উপকার। হারুন ভাইয়ের অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ মোটা। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে বড় একটা অভিজ্ঞতা শিরোনামের বই লেখা যাবে। এতো অভিজ্ঞতার পরও একটা অল্প পয়সার ইমামতি ছাড়া আর কিছু জোটাতে পারেননি। সামনে পারবেন এই আশায় স্বপ্নের জাল বোনা।
কয়েকদিন আগে হারুন ভাইয়ের বড় একটা ধকল গেছে। কয়েক মাস ধরে তার প্রিয় বউ অসুস্থ। দু’মাস। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার বলেন, তার টি.বি হয়েছে। কষ্টের কোন মাপকাঠি নেই।
কষ্ট মাপার যন্ত্র নেই। মোকলেসের মনে হয়, নিতুর রোগের কষ্ট তারপর পৃথিবীতে ওর জন্য হারুনের সবচেয়ে বেশি ব্যাথা। বেশি কষ্ট। এমনিতে গরিব মানুষ। তারপর আবার হয়েছে বড় ধরনের এক ব্যাধি।
ওকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সারাদিন বুকের ভেতর চাপা ব্যাথা নিয়ে ঘোরে হারুন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বার বার বলে- আল্লাহ নিতুকে ভাল করো। মাফ করো। এ বিশ্বাসের বিকল্প নেই। মানুষের চেষ্টার, সাধ্যের যেখানে শেষ সেখান থেকে মালিকের সাহায্য শুরু।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করার পর অনেকেই নিতুকে দেখতে এসেছে। লোকজন দেখে দেখে চলে যায়। শুধু হারুন বেচারা যেতে পারেনা। কোথায় যাবে! নিতু তার বাড়ি ঘর। ডাক্তারের পরমর্শ, পর পর ষাটটা ইনজেকশন নিতে হবে।
সেই অনুযায়ী ইনজেকশন দেওয়া শুরু হয়। প্রতিদিন ইনজেকশন দেওয়ার পর নিতু বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কথা পর্যন্ত বলতে পারেনা। তারপর এক সময় নিস্তেজ হয়ে চোখের পাতা দুটো মিলে যায়। হারুন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কতো কষ্টই না হচ্ছে নিতুর! বেশিক্ষন নিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেও পারেনা। সহ্য হয়না। চোখ মুছে দরজার সামনে বারান্দায় গিয়ে চেয়ার পেতে বসে। অনেকটা দারোয়ানের মতো। সেদিন বিকালে নিতু মাত্র দু’চোখ বন্ধ করেছে।
স্বামী হারুন কিছুক্ষন কেদে প্রতিদিনের মতো দরজার সামনে এসে বসে। সামনের বড় খোলা বারান্দার দিকে চোখ দিতেই দেখে ফরিদ আংকেল। নিতুর চাচা। খবর পেয়ে সাতগ্রাম, সাত নদী পাড়ি দিয়ে এসেছেন। কাছাকছি এসেই উদ্বিঘ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করেন, ‘ নিতু মার কি হয়েছে?’
‘ টি.বি হয়েছে।
’
‘ কোথায়?’
‘ গ্লান্ডে। ’
‘ মানে!’
‘ গলায়। গ্লান্ড টি.বি। ’
ফরিদ আংকেল বেশকিছু সময় হতবাক হয়ে থাকেন। অনেক সময় পর হারুনের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলেন, ‘ গ্লান্ড টি.বি কি চলে বাবা?’
‘ চলবে মানে!’
‘ মানে সিনেমা, নাটক হয়?’
‘ কি যা তা বলছেন।
’
‘ যা তা বলবো কেন! তুমি না বললে টি.বি হয়েছে। গ্লান্ড টি.বি। এতোকাল শুনেছি মানুষ টি.বি কেনে, দেখে। এখন শুনছি মানুষই টি.বি হয়ে যায়। কি অদ্ভূত কথা!’
‘ সে তো টেলিভিশন।
একটা যন্ত্র। টি.ভি। ’
‘ বুঝেছি বাবা। বুঝেছি। আমরা সেকেলে মানুষ হা করলেই সব বুঝতে পারি।
আসলে কি জানো বাবা। ’
‘ জ্বি, বলুন। ’
‘ সবই ভাগ্যের লিখন। ঐ যে একটা প্রবাদ আছেনা, ভাগ্যের লিখন যায়না খন্ডন। ’
‘ হ্যা, আছে।
’
‘ তাই আর কি। ’
হারুনের বির্তক করতে ইচ্ছা করেনা। ইদানিং তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, সবার কথায় সায় দেয়। ভুল বলুক বা অন্যায় বলুক, অযুক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক যাই হোক সব কথাকে বির্তক এড়িয়ে সাধারন ভাবে মেনে নেয়। কাউকে বোঝাতে ইচ্ছা হয়না তার।
যে যেভাবে বোঝে তার বোঝা পড়াটা থাক না তার মতোই।
বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন- মদিনা পাবলিকেশান্স, ৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।