পথে পথে-৪
তুমি খাটের উপর এসে বসো। ’
মেয়েটা মোকলেসের দিকে তাকায়। ভীত সন্ত্রস্ত হরীনির মতো চাহনি। ইন্টারকমের নম্বর টেপে মোকলেস। এক দুই পাঁচ।
ওপাশ থেকে হোটেল ম্যানেজারের কণ্ঠ ভেসে আসে। ‘ আমি জানতাম আপনি আবার ফোন করবেন। ’
‘ কিভাবে জানলেন?’
‘ এতো সুন্দর খাবার পাঠিয়েছি খাবারের প্রশংসা করবেন এটাই তো স্বাভাবিক|Õ
‘ এসব খাবার কতোদিন ধরে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন?’
‘ আর বলবেন না মানুষ সেয়ানা হলো তো সেদিন। সমাজ, সভ্যতা, মানুষের মন সব যায়গায় আজ আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। সমাজের মানুষ সেয়ানা হয়ে উঠেছে।
’
‘ সমাজের সেয়ানা মানুষ গুলো যদি আপনার বোন, আপনার স্ত্রী কিংবা আপনার মাকে রাতের খাবার হিসাবে চায়?’
‘ দেখুন বাজে কথা বলবেন না। ভদ্রভাবে কথা বলুন। ’ মুহুর্তেই হোটেল ম্যানেজারের মাথা গরম হয়ে ওঠে।
‘ এটা বাজে কথা হলো! যাকে রাতের খাবার হিসাবে পাঠিয়েছেন সেও তো কারও বোন, কারও সন্তান। ’
‘ অভদ্র পরিবারের অভদ্র সন্তান।
কুলাঙ্গার ভাইয়ের চরিত্রহীন বোন এসব মানুষের সাথে আমাদের তুলনা করছেন কেন?’
‘ কারা কুলাঙ্গার মিস্টার! চরিত্রহীন কুলাঙ্গার তো আপনারা। জীবন সংগ্রামে যারা বেচে থাকার জন্য লড়াই করে তাদের খারাপ পথে ঠেলে দেন আপনারা। ’
‘ আপনার দেখছি বেশ্যাদের প্রতি ভীষন দরদ। ’
‘ হ্যা, অসহায় বেশ্যাদের প্রতি দরদ আছে আর আপনাদের মতো বেশ্যাদের প্রতি আছে ঘৃনা। ’ রিসিভার রেখে দেয় মোকলেস।
মেয়েটার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে। মোকলেস মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ‘ কি নাম তোমার?’
‘ ফারিয়া। ’ কন্না জড়ানো গলায় জবাব দেয় ফারিয়া।
‘ খুব সুন্দর নাম, খুব সুন্দর তুমি। ’
‘ আমাকে ক্ষমা করুন। ’ আরও জোরে কেঁদে ওঠে ফারিয়া।
‘ আমি ক্ষমা করার কে? ক্ষমা চাও তার কাছে যিনি তোমার জীবন, শক্তি আর রূপ যৌবন দান করেছেন। ক্ষমা চাও সেই মহান প্রতিপালকের কাছে যার দেওয়া নেয়ামতের সঠিক সৎ ব্যাবহার তুমি করোনি।
’
মেয়েটা মোকলেসের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ মুগ্ধ দৃষ্টিতে যেভাবে চাঁদ দেখে সেভাবে। যেন অনেক কিছু বলতে চায়। তার অনেক ব্যাথা, অনেক কষ্ট।
‘ কি ব্যাপার কলাগাছের মতো দাড়িয়ে আছেন কেন?’ আবার চিৎকার করেন হোটেল ম্যানেজার।
দাড়িয়ে থাকবো না তো কি ব্যাগট্যাগ ফেলে রেখে চলে যাব! এখন থেকে তেতুল গাছের মতো দাড়িয়ে থাকবো। ’ মোকলেস শরীর টান টান করে দাড়ায়।
‘ আপনি পেয়েছেনটা কি!’
‘ কিছুই পাইনি। ৪২০ নং রুমের চাবিটা পেলে রুম খুলে রুমে ঢুকবো। ঠান্ডা লাগছে।
রুমের চাবি দেন। ’
ম্যানেজার একটা সুইচ টিপ দেন। পাশেই একটা কক্ষে বাজনা শোনা যায়। কলিংবেল বাজে। কিছুক্ষন পর রুম খুলে বের হয় একজন সুঠাম যুবক।
চোখ ডলতে ডলতে কাছে আসে।
‘ এই জানোয়ারটাকে শক্ত দড়ি দিয়ে বেধে ফেল, আমি পুলিশে ফোন করছি। ’
ম্যানেজারের কথা শুনে যুবকটা মোকলেসের দিকে লাল চোখে তাকায়। বেচারার ঘুম নষ্ট হয়েছে। ফ্যাসফেসে গলায় বলে, ‘ কি করেছে বস?’
‘ তা শুনে তোমার কাজ নেই।
’ ধমকের সুরে কথা বলেন ম্যানেজার।
কিছুক্ষন পর দড়ি নিয়ে হাজির হয় ছেলেটা। মোকলেসকে বাধা শুরু করে। জোর খাটিয়ে লাভ নেই। জোরাজুরি করলে দু’জন মিলে বাধবে।
দু’জনে না পারলে চিৎকার করে আরও লোক হাজির করবে। ম্যানেজার টেলিফোন করা শুরু করে, ‘ হ্যালো পুলিশ স্টেশন........ একজন আসামী..... হ্যা....হ্যা....ও আচ্ছা, নিয়ে যান। ’
মোকলেস ভেজা গায়ে বসে থাকে। তার হাত পা বাধা। নিজেকে কেমন চোর চোর মনে হয়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে দশ সদস্যের পুলিশ দল এসে হাজির হয়। নেতা পুলিশ রোমান্টিক দৃষ্টিতে মোকলেসের দিকে তাকায়। মুচকি হাসে। ‘ কি নাম তোর?’
‘ মোকলেস। ’
‘ বাড়ি কোথায়?’
‘ বাড়ি নেই স্যার।
’
‘ মানে। ’
‘ মানে ঘর বাড়ি নেই। ’
‘ থাকিস কোথায়?’
‘ দিনের বেলা রাস্তায় থাকি, রাতের বেলা থাকি হোটেলে, কখনো কোন বন্ধুর বাড়ি। ’
‘ তোর বাবা-মা কোথায় থাকে?’
‘ ওনারা স্যার কবর স্থানে থাকেন। ’
পুলিশ সাহেব লাঠি উচিয়ে মারতে উদ্যত হন।
আবার কি মনে করে বড়ি দেন না। বাড়ি মারা থেকে বিরত থাকেন। মোকলেস মনে মনে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে।
‘ কবর স্থানে কোন মানুষ থাকে?’
‘ থাকে, আপনিও থাকবেন। ’
‘ তোমার জামা কাপড় ভেজা কেন?’
‘ রাস্তা দিয়ে সাতার কেটেছি।
’
নেতা পুলিশ আর কথা বাড়ান না। ম্যানেজারকে বলেন, আপনার অভিযোগ বলুন। ম্যানেজার সাহেব বক্তিতা দেবার মতো স্টাইলে তার ভাষন শুরু করেন, ‘ রাত এগারটার পর আমরা কোন রুম ভাড়া দেইনা। এ লোক সাড়ে এগারটার সময় এসে রুম ভাড়া চাইলেন। তাকে দেখেই আমার সন্দেহ হয়।
আমি রুম ভাড় দেবনা জনালে সে ৪২০ নং রুমের চাবি নেওয়ার জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। ব্যাস....’
‘ তারপর ওকে বেধেছেন?’
‘ হ্যা। ’
এতক্ষন চুপ থাকা হোটেল বয় কাছে আসে। বড় বড় চোখে মোকলেসকে দেখে। ‘ স্যার তিনি কাল এসেছেন।
’
‘ মানে!’
‘ মানে স্যার কাল রাতেও তিনি আমাদের হোটেলে ছিলেন। ৪২০ নং রুমে। ’
‘ তাই নাকি!’
‘ জ্বি, স্যার। ’
হোটেল ম্যানেজার মায়াবী দৃষ্টিতে মোকলেসের দিকে তাকায়। ‘ আগে বলবেন না আপনি কাল রাতেও আমাদের হোটেলে ছিলেন।
’
‘ বলেছি। ’
‘ সরি মাফ করবেন আমি বুঝতে পারিনি। ’
বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন-মদিনা পাবলিকেশান্স, ৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।