কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
২
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একটা সাদা বিছানায় আবিষ্কার করল নিশু। প্রথম কয়েক সেকেন্ড সে মনেই করতে পারল না সে কে। সে কোথায়। তার সাথে যুক্ত হল মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা।
নিশু উঠে বসল।
সে একটা সুসজ্জিত কামরায় শুয়ে আছে। চারপাশে শুধু সাদা আর সাদা।
নিশু বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মাথা ঘুরে প্রায় পড়ে যাবার জোগাড় হল তার। সে চারপাশে তাকিয়ে রুমটার একটাই দরজা দেখতে পেল।
ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে নব এ মোচড় দিল যে।
সে নব স্পর্শ করার ঠিক তিন সেকেন্ড পর কোথাও একটা অ্যালার্ম বেজে উঠল। হঠাৎ করে কারেন্ট শক খেয়ে ছিটকে দূরে সরে গেল নিশু।
একটু পরেই দরজা খুলে প্রবেশ করল একজন নার্স। তার হাতে খাবার দাবার ও ওষুধের প্যাকেট।
নিশু বলল, “তুমি কে? ”
নার্স কোন কথা বলল না। নিঃশব্দে খাবার রেখে চলে খেতে শুরু করল সে। নিশু দৌড়ে গিয়ে নার্সকে ধরে ফেলল। বলল, “তুমি কে? এটা কি জায়গা? আমি এখানে কেন? ”
নার্স হাসল।
নিশু তাকে জোরে একটা ঝাঁকুনি নিয়ে ছেড়ে দিল।
ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে এগুতে শুরু করল সে।
টিক সে মুহূর্তে দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন স্যুট টাই পরা একজন মানুষ। তিনি ঢুকেই বললেন, “গুড মর্নিং, মিস নিশু। এখন কেমন আছো? ”
নিশু বলল, “আপনি কে? আমাকে চেনেন? ”
লোকটি বলল, “আমি কে? তুমি কি ফান করছ? আমাকে চেনো না তুমি? ”
নিশু বলল, “না”।
“নিজের নাম মনে আছে তো? ”
“না”।
“না? ” অবাক হয়ে গেলেন ভদ্রলোক, “সত্যিই তোমার কিছু মনে নেই? নাহ, ডাটা রিআপলোড হতে এত সময় লাগলে হবে? ”
“ডাটা রিআপলোড? এসব কি বলছেন আপনি? ”
ভদ্রলোক প্রথমে হাসলেন, তারপর একটু হতাশাব্যঞ্জক মুখভঙ্গী করে বললেন, “আমি জানি তুমি কে”।
নিশু বলল, “আমি কে? ”
“একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমাদের কাছে”।
“মানে? ”
“এসো। তোমাকে কিছু জিনিস দেখাবার আছে”।
লোকটার পিছু পিছু রুম থেকে বের হল নিশু, সে দেখল এরকম অনেকগুলো রুম আছে। প্রতিটিরই দরজা বন্ধ। আর পুরো করিডর পাহারা দিচ্ছে বেশ ক’জন গার্ড।
লোকটার পিছু পিছু নিশু একটা হলরুমে গেল। ওখানে বড় একটা স্ক্রিন, স্ক্রিনে কি যেন দেখাচ্ছে, তার সামনে অনেকে বসে আছে।
“বসো”, নিশুকে একটা চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন ভদ্রলোক।
নিশু বসল। হঠাৎ স্ক্রিনে ভেসে উঠল লাল ফন্টে লেখা-
WELCOME TO SIMULATION
একটু পরে সেটা সরে গিয়ে লেখা আসল-
SIMULATION 1
HIGHLIGHTS SHOW
তখন কেউ একজন উদ্ভট একটা পোশাক পরে স্ক্রিনের সামনের মঞ্চে দাঁড়াল। সে গমগমে স্বরে বলতে লাগল...
“ভদ্র মহোদয় ও ভদ্র মহাশয়াগণ, এ বছরের “সিমুলেশন”-এ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। কেবলই শেষ হয়ে গেল আমাদের তিনটি সিমুলেশনের প্রথম সিমুলেশন।
এই সিমুলেশনে অংশগ্রহণ করেছে বিশ্বের পঞ্চাশটি দেশের প্রতি দেশ থেকে দু’জন - একটি ছেলে একটি মেয়ে করে মোট একশজন প্রতিদ্বন্দ্বী। বলা বাহুল্য, প্রথম সিমুলেশনের নির্বাচিত অংশ নিয়ে বরাবরের মতই আমরা তৈরি করেছি সিমুলেশন ওয়ান হাইলাইটস।
এখন প্রদর্শিত হচ্ছে প্রত্যেক প্রতিযোগীর পক্ষে বিপক্ষে ধরা বাজির দর। বাজিতে জেতা আপনাদের প্রাপ্য টাকা আপনাদের নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে যাবে। আর বাজিতে হারা টাকা আপনাদের নির্দিষ্ট একাউন্ট থেকে কেটে নেয়া হবে।
তো দর্শক মহোদয়, Lie back and enjoy!
শুরু হচ্ছে SIMULATION 1! ! !
মানুষটা সরে গেল। স্ক্রিনটা হঠাৎ কালো হয়ে গেল। আশে পাশের লাইট বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ করেই। দর্শকরা উল্লাসে চিৎকার দিয়ে উঠল।
ঠিক এমন সময় স্ক্রিনে একজন মানুষকে দেখা গেল।
বহুতল ভবনের ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। তার চোখ বাঁধা, হাত পা বাঁধা। একটু পরেই ব্যালান্স হারিয়ে পিছনে উল্টে পড়ল সে। তারপর পড়তে লাগল শূন্যে।
দর্শকরা চিৎকার দিয়ে উঠল।
নিশুর মনে হল, তবে কি এটা কোন সিনেমা? বেশ অ্যাকশনধর্মী সিনেমা মনে হচ্ছে। ভালোই তো।
একটু পরে যান্ত্রিক কণ্ঠের কথা শোনা গেল, “হ্যালো বব”।
দর্শকরা উৎসুক নয়নে তাকিয়ে রইল ববের দিকে। স্ক্রিনের নিচের দিকে লেখা উঠল – Contestant code 1
একটু পরে আরেকজন ববকে দেখানো হল স্ক্রিনে।
সে কিছুতেই নিজেকে বাগে আনতে পারছে না, বাতাসের মধ্যে ডিগবাজি খাচ্ছে সে বারবার, একটু পরেই তার যান্ত্রিক কন্ঠের কথা থেমে গেল। স্ক্রিনে উঠল – Contestant code 2
তৃতীয় ববকে দেখা গেল অস্থিরভাবে মোচড়ামুচড়ি করছে। তার হাতের বাঁধন আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তবু সে মোচড়ামুচড়ি করেই যাচ্ছে। তাকে দেখে দর্শকরা সহানুভূতিতে চুকচুক করে শব্দ করল।
নিশু সিমুলেশনটা রেখে খুবই মজা পেতে লাগল। আস্তে আস্তে একেকজন বব হাতের বাঁধন খুলে নিজেকে মুক্ত করে তাদের পিছনের ব্যাগ থেকে ফ্লায়ার বের করতে লাগল। একজন ববকে দেখা গেল বহুতল ভবনের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। জানালার ভিতর দিয়ে কি যেন দেখছে যেস। মাটিতে পড়ার কিছুক্ষণ আগে ফ্লায়ার সেট করে উড়াল দিল সে।
আনন্দে চিৎকার করে উঠল নিশু।
স্ক্রিনে দেখাল, বত্রিশজন প্রতিযোগী হাত পায়ের বাঁধন খুলতে না পেরে কনক্রিটের মেঝেতে প্রচণ্ড গতিতে আছড়ে পরে মারা গেছে। Contestant code গুলো দেখে তাদের উপর বাজি ধরা দর্শকরা হতাশায় চিৎকার করে উঠল।
নিশু তার পাশে বসা ভদ্রলোককে বলল, “এটা কি কোন ধরণের প্রতিযোগিতা? কিসের উপর বাজি ধরেছে মানুষ? ”
ভদ্রলোক বললেন, “হ্যাঁ। প্রতিযোগিতা।
একেক মানুষ বাজি ধরেছে একেক প্রতিযোগীর উপর”।
নিশু বলল, “প্রতিযোগীরা কি? মানুষ? আসল মানুষ? ”
ভদ্রলোক হাসলেন।
নিশু বলল, “মানুষ হলে সবার চেহারা একই রকম হয় কিভাবে? ”
ভদ্রলোক বললেন, “You’ll see”.
নিশু শিশুর মত প্রবল আনন্দে সিমুলেশনটা দেখতে লাগল। সে দেখল কিভাবে মানুষগুলো পরস্পরকে উড়তে উড়তে গুলি করছে আর পরস্পরের গুলিকে পাশ কাটাচ্ছে। সে দেখল কিভাবে তারা হেঁচড়ে পাঁচড়ে সূচালো বাঁশবনটি পার হচ্ছে।
সে দেখল কিভাবে তারা ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে জাহাজের দিকে এগুচ্ছে।
একজন বব লাল বোতামে চাপ দেবার সাথে সাথে ঘটনার মোড়ই পরিবর্তিত হয়ে গেল। দৃশ্যের চমৎকারিত্বে চমৎকৃত হয়ে দর্শক চিৎকার করে উঠল।
বিষ্ফোরনের সাথে সাথে নিশু উঠে দাঁড়িয়ে শিশুর মত নিখাদ আনন্দে হাততালি দিতে লাগল। দুএকজন তার দিকে তাকাল, কেউ মনোযোগ দিল না।
ভদ্রলোক বললেন, “কেমন লাগল? ”
নিশু বলল, “চরম”।
ভদ্রলোক বললেন, “তোমার কি মনে হয়? তুমি কি দেখলে? ”
নিশু বলল, “উম...কোন ধরণের...সিনেমা? সিনেমা ছাড়া তো আর কিছু হওয়া সম্ভব না”।
ভদ্রলোক বললেন, “You’ll see”.
উদ্ভট পোশাক পড়া উপস্থাপক আবার স্ক্রিনের সামনে এলেন। বললেন,
“ভদ্রমহোদয়! কেমন লাগল? ”
সবাই সমস্বরে বলল, “ভালো! অসাধারণ! অস্থির! ! ! ”
উপস্থাপক বললেন, “এই সিমুলেশনটা প্রোগ্রাম করেছে রাশিয়ার প্রোগ্রামার ডি. পোদোভিচ। মিস্টার পোদোভিচ, মঞ্চে তোমায় স্বাগতম! ”
বছর পঁচিশের এক পাঙ্ক যুবক মঞ্চে এল।
লোকজন দাঁড়িয়ে তাকে হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাল।
রাশিয়ান প্রোগ্রামার বাউ করে চলে গেল। এরপর স্ক্রিনে উঠল প্রতিযোগীদের অবস্থান। সেটা দেখে বাজিকররা মিলিয়ে নিতে লাগল তাদের লাভ ক্ষতি।
ভদ্রলোক নিশুকে একটা বড় হলঘরে নিয়ে এলেন।
নিশু দেখল অনেকে সেখানে খাওয়াদাওয়া করছে।
নিশু বসল। ভদ্রলোক বললেন, “কী খাবে? ”
“আগে আপনি বলুন এটা কি ছিল”।
“ওটা ছিল সিমুলেশন”, নিঃশ্বাস ফেললেন ভদ্রলোক।
“সিমুলেশন কি? ”
“এটা হচ্ছে একটা প্রতিযোগিতা”, বললেন ভদ্রলোক।
“বুঝিয়ে বলুন”।
“আজ থেকে বিশ বছর আগে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির তিন প্রোগ্রামার মিলে একটা পরাবাস্তব প্রোগ্রাম তৈরি করে। মানুষের মস্তিষ্কে একটা ইন্টারফেসের মাধ্যমের সেই প্রোগ্রাম যুক্ত করা হয়। সাধারণ একটা মানুষ পরাবাস্তবে গিয়ে অন্য একটা চরিত্র হিসেবে হাঁটাচলা করে, ঘুরে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে সবই হয় প্রোগ্রামে, এবং হাঁটাচলা বা ঘোরাঘুরির অনুভূতিটা সরাসরি মস্তিষ্কে দেয়া হয়।
অচিরেই তারা পরাবাস্তব প্রোগ্রামটার পেটেন্ট নিয়ে নেয়। অচিরেই আমেরিকার ধনীদের মধ্যে প্রোগ্রামটা দারুণ জনপ্রিয় হয়ে যায়। একের পর এক মানুষ পরাবাস্তবে যুক্ত হয়ে উপভোগ করতে থাকে অন্যরকম এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
কিন্তু কিছুদিন পরেই ধরা পড়ে সমস্যা। যাদের মস্তিষ্কে পরাবাস্তবের ইন্টারফেস ঢুকানো হয়েছিল ক্রমে তারা নানারকম স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগতে থাকে।
এক সময় কয়েকজন মানুষ মারাও যায়।
ব্যস, সাথে সাথে পুলিশ গ্রেফতার করে ঐ তিন যুবককে, আইন করে বন্ধ করে দেয়া হয় পরাবাস্তব ভ্রমণ। মানুষ হত্যার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় তাদের।
জেলে তাদের সাথে পরিচয় হয় বছর সতেরোর এক বুদ্ধিমান তরুণের। তরুণকে যন্ত্রটা চালানোর উপর থেকে শুরু করে আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় বাৎলে দেয় তারা তিনজন।
তরুণ ছাড়া পেয়ে এসেই যন্ত্রটাকে লুকিয়ে ফেলে তিন বিজ্ঞানীর গবেষণাগার গুড়িয়ে দেয়। পৃথিবীর মানুষ জানে, ধ্বংস হয়ে গেছে পরাবাস্তবের ইন্টারফেস।
ওদিকে তরুণ খুব গোপনে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতার একটা সংঘ খোলে। তাদের কাজ ছিল এই, তারা আত্মহত্যা করতে গিয়ে মরতে ব্যর্থ হওয়া মানুষদের খুঁজে বের করে চোখ বেঁধে তাদের আস্তানায় নিয়ে আসত এবং পরাবাস্তব ভ্রমণের প্রস্তাব নিত। কয়েকজন রাজি হত, কয়েকজন রাজি হত না।
এভাবেই ক্রমে ব্যাপারটা অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিশ বছর আগের সংঘই এখন “সিমুলেশন”।
সিমুলেশনের পঞ্চাশটা সদস্য দেশ আছে। প্রতি বছর প্রতি দেশ থেকে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, দুজন করে মানুষকে এখানে আনা হয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রোগ্রামাররা পরাবাস্তব প্রোগ্রাম তৈরী করেন।
সেখান থেকে তিনটা প্রোগ্রাম বাছাই করা হয়।
সময় হলে একশজন প্রতিযোগীর প্রত্যেককে প্রথম প্রোগ্রামের সাথে কানেক্ট করা হয়। তারা প্রত্যেকে তখন প্রোগ্রামের চরিত্র হয়ে যায়। একটা প্রোগ্রামে নির্দিষ্ট একটা টার্গেট থাকে, সেটা যে প্রতিযোগী আগে পূরণ করতে পারে, সে ফার্স্ট হয়। তারপরে যে এসেছে সে সেকেন্ড।
তারপরের জন থার্ড। ফেয়ার প্লে-র জন্য সব প্রতিযোগী একই জায়গা থেকে একই চরিত্র হয়ে সিমুলেশন শুরু করে। যারা পৌছানোর আগেই মারা যায় তাদের মধ্যে ক্রম বিচার করা হয় কে কত বেশি সময় টিকল তার উপর।
পরাবাস্তবে যুক্ত করার আগে প্রতিযোগীর নরমাল মেমোরি মুছে ফেলা হয়। শুধু তার বুদ্ধি, প্রতিভা, ধৈর্য, রিফ্লেক্স এগুলো ঠিক থাকে।
পরাবাস্তবের চরিত্রের একটা কাল্পনিক পরিচয় দেয়া হয়, যেমন প্রথম সিমুলেশনে মানুষটার নাম ছিল বব, যেকোনো প্রতিযোগী পরাবাস্তবে নিয়ে মনে করে সেই বব”।
নিশু হা করে কথাগুলো শুনল। তারপর সে আস্তে আস্তে বলল, “তাহলে আমরা যা দেখলাম তা পরাবাস্তবের দৃশ্য? ”
“হ্যাঁ”।
“তার মানে কিছুই সত্যি না? এই যে এতগুলো বব মাটিতে আছড়ে পরে মারা গেল, তারা কেউই সত্যি না? ”
“না, শুধু অনুভূতিটা সত্যি”।
“মানে? ”
“প্রতিযোগীরা একবার যখন পরাবাস্তবে ঢোকে তখন তাদের পরাবাস্তবে যা ঘটছে সেই অনুভূতি সরাসরি মস্তিষ্কে দেয়া হয়”।
“তার মানে যে ক’জন বব মারা গেল তারা সবাই মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করেছে? ”
“করেছে”।
“কিন্তু তারা তো বেঁচে আছে”।
“হ্যাঁ, আছে”।
“তারা কোথায়? ”
“আছে, আশে পাশেই আছে”।
নিশু এতটা অবাক হল যে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারল না।
তারপর বলল,
“আচ্ছা, আপনি কি সিমুলেশনের কেউ? ”
“হ্যাঁ”।
“এতগুলো মানুষের ব্রেনে ঢুকাতে নিশ্চয়ই অনেকগুলো ইন্টারফেস তৈরি করতে হয়েছে। এই টাকা আপনারা কোথায় পেলেন? ”
“এই যে দর্শকদের দেখলে, এরা আসলে সব বাজিকর। সিমুলেশনের আগে প্রত্যেক প্রতিযোগীর সাইকোলজিকাল প্রোফাইল ইন্টারনেটে ছাড়া হয়। সেখান থেকে দেখে যেকোনো প্রতিযোগীর পক্ষে বিপক্ষে বাজি ধরা যায়।
বাজির জন্য নাম এন্ট্রি করতে আমরা এক হাজার ডলার ফি নেই”।
খাবার চলে এল। নিশু দেখল, টেবিলে তার সামনে অজস্র খাবার। অনেক খাবার। এত খাবার সে কখনো দেখে নি।
নিশু খাবার মুখে দিয়েই বুঝল, সেটা খুবই সুস্বাদু। গপ গপ করে খেতে লাগল সে। ভদ্রলোক তার খাওয়া দেখতে লাগলেন হাসিমুখে।
খাওয়া শেষ করে নিশু বলল, “আচ্ছা, যারা মরে গেল ওরা কি সত্যিই মৃত্যুর স্বাদ পেয়েছে? ”
“হ্যাঁ”।
“ব্যথা লাগেনি? ”
“অবশ্যই”।
“ইসস! আর যে ফার্স্ট হল সে তার শরীরে ভিতরে তো বোমা ছিল। সেটা বিস্ফোরিত হবার সময় সে ব্যথা পায় নি? ”
“পেয়েছে”।
“কতটা? ”
“বাস্তবে যতটা হবে ততটাই”।
“ধেত! আপনি ফাজলামি করছেন”, বলেই আবার সুর পাল্টায় নিশু,
“আচ্ছা, সেই বেচারা কি বেঁচে আছে? ”
“বাস্তবে তো বেঁচে আছেই”।
“ইসস, কত্ত ঠান্ডা মাথা! কি সুন্দর বডি স্টেডি করে সব ইনস্ট্রাকশনে ঠিকঠাক পালন করল।
কি নাম ওর? ”
“নিশু”।
“নিশু? ” একটু হতচকিত দেখাল নিশুকে, “কোন দেশ? ”
“বাংলাদেশ”।
নিশু ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তাকে কি দেখা যাবে? সে কি এখানে আছে? ”
“আছে”, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ভদ্রলোক, “আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার সাথে কথা বলছে সে”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।