পথে পথে-১
মাস ছয়েক আগে মোকলেসের দূর সর্ম্পকের মামাতো ভাই আর নিকট সম্পর্কের খালাতো বোন এক রোমান্টিক উপাখ্যানের জন্ম দেয়। খাইরুজ্জামান বি.এ অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একই এলাকার মেয়ে মর্জিনা দশম শ্রেণীর ছাত্রী। দূর সর্ম্পকের আত্মীয়। ছোটবেলা থেকেই চেনাজানা, দেখাশোনা।
কবে যে দুটি হৃদয়ে ভালোবাসা এসে বাসা বাধে কেউ জানেনা। খাইরুজ্জামান ছেলেটা পড়াশোনা বাদ দিয়ে মর্জিনাদের জ্বানালার সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে। মর্জিনা দাড়িয়ে থাকে জ্বানালা ধরে। ঠিকমতো খাওয়া নেই কারও, ঘুম নেই। পড়ার বই গুলো টেবিলের উপর সাজানো থাকে।
প্রতিদিন নোট বুক খোলা হয়। কবিতা লেখা হয়। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কবিতা-
রাত বারটায় ঘড়ির কাটায় টুং টাং শব্দ হয়
জেগে থাকি, কখনোবা জেগে উঠি এক বুক কষ্ট নিয়ে
আমার কষ্ট গুলো আমার বুকের মাঝে চিৎকার করে
বুক ফাটা ব্যাথা আমার আমি একাই বয়ে বেড়াই
বুকে নিয়ে পথ চলি দিনে-রাতে
সকাল সন্ধ্যা পথে ঘাটে।
যে যাই বলুক পাশ্চাত্য সভ্যতার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া একটা বিশেষ শ্রেণী ছাড়া বাকী সবাই, প্রবীণ সমাজ এই আধুনিক প্রেমকে ভালো চোখে দেখেন না। মানুষ যখন যৌবনে পর্দাপন করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই একটা ছেলে মেয়েদের প্রতি আসক্ত হয়।
একটা মেয়ে আকৃষ্ট হতে পারে ছেলেদের প্রতি। কোন একজনকে ভালো লাগতে পারে। এই ভালো লাগার মানে এই নয় যে, আই লাভ ইউ শব্দ উচ্চারন করে তাকে পেয়ে যাওয়া। পার্কে আড্ডা মারা, হাতে হাত চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন সাজানো। কোন লেখক তার গল্পে, কোন কবি তার কবিতায়, কোন শিল্পী তার গানের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দেয়- যাকে অমৃত বানী আই লাভ ইউ বলা হলো তাকে ছাড়া জীবন অর্থহীন।
জীবন চলবে না। সে যদি দূরে যায় সিগারেট জালিয়ে খোলা আকাশের তারা দেখ। সে যদি না আসে, যদি প্রতারনা করে তোমার জীবন শেষ করো। মরে যাও। মৃত্থ্যর দিকে ছুটে যাও।
অনেক তাজা প্রাণ, তরুন মন তথাকথিত এই ভালোবাসার খপ্পরে পড়ে ঝরে যায়, মরে যায়। যে মরে যায় সে জানতেও পারেনা একটা জাহান্নাম তাকে গিলে ফেলেছে। আর যে বেচে থাকে একটা সময় প্রিয়াকে ছাড়া তার জীবন ঠিকই সুন্দর ভাবে পার হয়। জীবনটাকে অর্থহীনও মনে হয়না। শুধু অর্থহীন কাজগুলো সিগারেট, মদগেলা জীবনের সাথী হয়ে থাকে।
সারাটা সময়। যে সব দেশে প্রভুর দেওয়া জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত প্রেম আর ভালোবাসা দ্বারা পরিপূর্ন, যারা প্রেম রপ্তানি করে সারাবিশ্বে সেই ইউরোপ, আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলোহ, অশান্তি।
মর্জিনা খাইরুজ্জামানের প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে পড়লে মর্জিনার বাবা ক্ষিপ্ত হন। ‘ এই মেয়ে তোর নামে কি শুনছি?’
‘ কি শুনছেন!’
‘ কিছু বোঝনা তাইনা? কচি খুকি, ফিডারে দুধ খাও। ’
মর্জিনা মাথা নিচু করে থাকে।
সিদ্ধান্ত হয় মর্জিনার স্কুল, প্রাইভেট সব বন্ধ। মর্জিনার জীবন ঘরের চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী হয়ে পড়ে। সে বন্ধী শালার জ্বানালাও খোলা যায়না। মর্জিনাকে দেখতে না পেয়ে খাইরুজ্জামান উন্মাদ হয়ে যায়। পথে পথে ঘোরে।
মোকলেসের সাথে দেখা হতেই আজগুবি সব কথাবর্তা বলা শুরু করে। ‘ মর্জিনা তোর খালাতো বোন তাইনা?’
‘ হ্যা, তুইও আমার মামাতো ভাই। ’
‘ মর্জিনাকে আমি কতো ভালোবাসি জানিস?’
‘ না, জানিনা। ’
‘ সেই ন্যংটোকাল থেকে ওকে আমি ভালোবাসি। ’
‘ খুবই খারাপ কথা।
’
‘ খারাপ কথা কেন?’
‘ ন্যংটোকাল থেকে কাউকে ভালোবাসতে নেই। ভালোবাসতে হয় বড় হবার পর। ’
‘ মর্জিনাকে ছাড়া আমি বাচবো না মোকলেস। ’
‘ হায়াত শেষ হলে মর্জিনা তোকে বুকে জড়িয়ে থাকলেও তুই মরবি। ’
খাইরুজ্জামান আকাশের দিকে তাকায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায়। চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র আকাশে যা কিছু আছে সব একসাথে দেখবে এমন একটা ভাব।
‘ আমার কবি হতে খুব ইচ্ছা করছে। ’
‘ ইচ্ছা হলেই কবি হওয়া যায়না কবিতা লেখার যোগ্যতা থাকতে হয়। ’
‘ আমার মর্জিনা একটা কবিতা, একটা কাব্য।
’
‘ তা ঠিক, তোর মর্জিনা একটা উপন্যাস। ’
সেদিন অনেক রাতে হৈ চৈ , চিৎকার, কান্না শুনে মোকলেসের ঘুম ভাঙ্গে। খাইরুজ্জামানদের বাড়ির দিক থেকে কান্না বাতাসে ভেসে ভেসে আসে। লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ে মোকলেস। দু’শ গজের মতো দূরত্ব অতিক্রম করে খাইরুজ্জামানদের বাড়ি পৌছে।
অনেক মানুষ। খাইরুজ্জামান খাটের উপর শোয়া। চারপাশে মানুষ। খাইরুজ্জামানের মা মেয়েলী সুরে কাদঁছেন। মোকলেসের বুকের ভেতর ছ্যাত করে ওঠে।
ছেলেটার এতো দ্রুত আত্মহত্যা করার কথা না। ধীর গতিতে শ্বাস প্রশ্বাস চলছে খাইরম্নজ্জামানের। মুখ থেকে বিষের গন্ধও বের হচ্ছেনা। মোকলেস চিন্তিত, উদ্ধিঘ্ন।
খাইরুজ্জামানের আম্মার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলে, ‘ কি হয়েছে মামী আম্মা?’
মামীআম্মা সাহেবা হাতের মুঠো থেকে কয়েকটা ঘুমের বড়ি, একটা ম্যাচ, দুটো বিড়ি মোকলেসের সামনে মেলে ধরে।
মোকলেস বড় বড় চোখে প্রশ্ন করে,‘ এগুলো খেয়েছে?’
‘ ম্যাচটা খায়নি শুধু, ঘুমের বড়ি আর বিড়ি গিলেছে। ’
‘ বিড়ি খাবে কেন, ওর কি টাকার অভাব!’
‘ বিড়ি তো খায়নি বিড়ির তামাক ফেলে গাজা ভরে খেয়েছে। ’
‘ ও আচ্ছা। ’
মামী আম্মা মহিলাকে বেশ জ্ঞানী মনে হয়। অনেক মানুষই জানেনা গাজাখোর গুলো কিভাবে গাজা খায়।
খাইরুজ্জামান অবশ্য গাজা খোর নয়। মাঝে মাঝে নেভী সিগারেট খায়। মর্জিনাকে পাওয়ার জন্য গাজা খাওয়া শুরু করেছে।
‘ বিয়ে দেন। ’ কথা বলে মোকলেস।
‘ কার বিয়ে দেব?’
‘ কার আবার খাইরুজ্জামানের। আপনার ছেলের। ’
‘ বেকার ছেলেকে বিয়ে দেব, খাবে কি?’
‘ এখন কি খাচ্ছে?’
‘ ভাত খাচ্ছে, ঘুমের বড়ি খাচ্ছে। ’
‘ বিয়ের পরও ভাত খাবে, ঘুমের বড়ি খাবে। ’
খাইরুজ্জামানের আম্মা আর কোন কথা বলেন না।
সম্ভাবত মোকলেসের কথা শুনে কিছুটা অসন্তুষ্ট। খাইরুজ্জামানের দিকে তাকান। কিছক্ষন ছেলের নিঃস্তেজ মুখের দিকে তাকিয়ে ঢুকরে কেদে ওঠেন।
‘ আমার বা…………. বা……..। ’
‘ ও তো মরে যায়নি ওভাবে কাঁদছেন কেন?’ আবার কথা বলে মোকলেস।
বয়স্ক মহিলা মোকলেসের দিকে তাকান।
‘ মরে যাওয়ার আর কি বাকি আছে! আমার সোনার চাঁদ ছেলে…… গাজা খায়, ঘুমের বড়ি খায়। ’
মোকলেস ভদ্র মহিলাকে সান্তনা দেয়,
‘ কাঁদবেন না ওর কিছু হয়নি। ’
‘ তুই ওর একটা ব্যাবস্থা করে দে। ’
‘ দেখুন সবকিছুর মালিক আলস্নাহতালা।
আমাদের জীবন- মৃত্থ্য, রিজিক, ভাল-মন্দ সবকিছু তার পক্ষ থেকে হয়। ’
‘ তা ঠিক, তারপরও তোর তো অনেক টাকা আছে। তোর ভাইকে কিছু দিয়ে সাহয্য কর। ’
মোকলেস কিছু বলেনা। খাইরুজ্জামানের জন্য ওর কষ্ট হয়।
( চলবে)
উপন্যাসটি পাওয়া যাচ্ছে - মদীনা পাবলিকেসান্স এর শো রুমে। ৩৮/২ বাংলাবাজর, ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।