গরমকাল এসেই পড়েছে। পাখা চলছে। আর চলছে জায়গামতোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র। মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ থাকে না। রাস্তায় হরেক রকম গ্রীস্মকালীন ফল বিক্রি হচ্ছে।
আর বিক্রি হচ্ছে তোকমা, ঘৃতকুমারী জাতীয় কিছু, লেবু বরফকুচি বা নানান রকম ফল দিয়ে তৈরী শরবত।
পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ডাব। রাস্তার ধারে অনেক জায়গায় সবসময়ই ডাব বিক্রি হলেও এখন ভ্যানে করেও প্রচুর ডাব বিকিকিনি চলছে। ঠান্ডা পানীয়, উদ্যমী পানীয়, নানা রকম ফলের রস বা জ্যুসের পাশাপাশি ডাব বিক্রি হতে দেখে কেন যেন একটু বেশী ভাল লাগে। দেশী ফল বলে হয়তো।
আমরা অন্য ফল যত সহজে খাই ডাব তেমন করে খাওয়া হয় না। কারুর বাসায় যেতে ফল হিসেবে অন্য কিছু নিলেও ডাব নেয়া হয় কমই। হয়তো কোন রোগীর বাড়ী যেতে ডাব নেয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেয়া নিষেধ। কেননা এটির পানি খাওয়া হয়ে গেলে এর খোসা বা বর্জ্য আনানেওয়া, পরিস্কার করা সহজ নয়, ওজনদার ও আকারে বড় বলে।
কে এত বর্জ্য অপসারন করবে? ডাব খেতে হলে কিনে বোতলে করে পানি ভরে আনো।
মাঝে মাঝে ডাব খেতে ইচ্ছে হয়, বিশেষ করে যশোহর, খুলনার দিকে গেলে, কি ফরিদপুর- ডাব খাওয়ার বিষয় মাথায় রাখি। সাথীদেরও চিন্তার কথা জানাই যাতে করে শান্তি করে খাওয়া যায়। ঐসব এলাকার ডাব বড়, প্রচুর পানি হয়। কোন কোনটাতে আড়াই কি তিন গ্লাস পর্যন্ত পানি হয়।
মনে আছে সিডর দুর্গতদের জন্য কাজ করতে যেয়ে ব্যস্ততার কারনে বলে রাখা সত্ত্বেও চলার পথে কেন যেন ডাব চোখে পড়লো না। ফেরার সময় ঘাটে এসে পেলাম। একটা খাচ্ছি, খাবার পর ডাব দু'ভাগ করে দেয়ায় দেখলাম- চমৎকার শাঁস। ওগুলো একত্র করে বললাম আরেকটা ডাব কেটে পানি গ্লাসে দাও। গ্লাসের পানিতে শাঁস মিলালাম।
একটা চায়ের চামচ নিলাম। খাবো, এমন সময় পাকাপেপের টুকরো সমেত প্লেট এসে হাজির। এত লোভনীয় কি বলবো! যাহোক, বললাম এগুলো নিয়ে যাবো। পথে খাবো। আপাতত ডাবের পানির গ্লাস কাজে লাগাই।
উহ, কিযে মজা লাগলো। একটু পানি, একটু শাঁস। এমন করে খেয়ে পরিতৃপ্ত হলাম। আগে এভাবে শাঁসসহ পানি খেতাম না। এটা শিখেছি মামার শ্বশুরবাড়ী বংশালে যেয়ে।
সে ১৯৬৭ সালের কথা। তখন খেয়েছি শাঁসসহ সাথে আরো মেওয়া দেয়া ছিল। তারপর থেকে সুযোগ পেলে খাই। ডাব থেকে পানি ঢেলে রাখি,শাঁস মিলিয়ে পরে আয়েশ করে পান করা যায়।
এখন একটা ডাব খেতে হলে চট করে তিরিশ টাকা দিতে হয় শাঁস থাক বা না থাক।
আর ভাগ্যগুনে কোথাও পঁচিশ টাকায় পাওয়া গেলেও যেতে পারে। ইচ্ছে হলেও সবাই খেতে পারে না। নিজেও পারি না। শরীরের খুব চাহিদা হলে, মন চাইলে তবে খাই। বুঝি অনেকেরই এ অবস্হা!
সেদিন নিকেতন থেকে আসছি।
গুলশানে রাস্তায় এত যানজট। রিক্শা নিয়ে বললাম কাওরানবাজার নিয়ে চল। অনেক রাস্তা ঘুরে পৌঁছে দিল। বললাম- ঘুরিয়ে নামাও। ও নামাচ্ছিল মসজিদের সামনে।
মসজিদ থেকে নামাজীরা বের হচ্ছে। পেছনে নিলে বললাম ডাবওয়ালার সামনে রাখতে। খুব পিপাসা ছিল। দুটো ছোট ডাব খেলাম। কচি হিসেবে কিছু শাঁসও ছিল।
পনের টাকা প্রতিটি। বলায় বারোটাকা করে নিল। তারপর ছয়টা কিনে নিয়ে এলাম। আটটা ছিয়ানব্বই টাকা। তবে মিশুকের ভাড়াও কম ছিল না।
আজকাল রিক্শা/মিশুকের ভাড়া কম নয়। পাওয়া যায় না, আসতেও চায় না। বাসায় এসে দেখলাম ছেলেও ডাব কিনে নিয়ে এসেছে, চারটা; তিরিশটাকা করে প্রতিটি, বড়। দেখলাম ছোট-বড় হলেও সেগুলো কোনোটিই কচি ছিল না। আর আমাদের দা অত ধারালো নয়।
হাত অভ্যস্ত নয়। কাটতে কষ্ট হলো বেশ। সাবধানে কাটতে হয়। প্রথম প্রথম কাটতে যেয়ে বাঁ হাতের তর্জনীর খানিকটা নখসমেত কোরবানীও দিতে হয়েছে। তর্জনী ঠিক হয়ে ভরে গেছে, কিন্তু নখে স্মৃতিটুকু আছে।
গ্রামের বাড়ী গেলে আগের মতন ডাব খাওয়া হয় না। গাছে আছে দেখি, কিন্তু গাছে উঠতে পারে, পাড়তে জানে এমন লোক কম। আগের মতন নেই, অনেক কমে গেছে। কেউ কেউ পারে, তাদের সবসময় পাওয়া যায় না। অনেকে আগ্রহী ও নয়।
স্বেচ্ছাসেবক কম। আগে অন্যদের গাছের ডাব দুরন্ত ছেলেরা না বলে পেড়ে খেত। এখন আর তা' তেমন হয় কিনা কে জানে!
হাট বাজারের জন্য পেশাদার লোকেরা ডাব পাড়ে, ট্রাকে করে আনে। ভ্যানে করে দড়ির জালি দিয়ে আটকিয়ে এদিক সেদিক নেয়। পথে পথে ডাব বিক্রি হওয়া দেখে ভাল লাগে।
তৈরী কোমল পানীয় আর উদ্যমী পানীয় যেভাবে বাজার গ্রাস করছে, অনেকে অকারনে খাচ্ছে কাছাকাছি মূল্যে যদি ডাব খাওয়া হয় কোন ক্ষতি তো নেই, বরং দেশের ফল বিক্রি বাড়ছে!
নারিকেল পাকে, গাছ থেকে পড়ে। গ্রামে গেলে নারিকেল সাধে। আনাও হয়। কিন্তু নারিকেল খাওয়ার চেয়ে মন পড়ে থাকে ডাব খাওয়ার দিকে। তাই এখন বাড়ী যাবার আগে খবর দিয়ে বলে রাখি- যদি পারা যা্য় তবে ডাব যেন পেড়ে রাখে।
ডাব দিয়ে গ্রামে যেমন আপ্যায়ন হয় ঢাকায় তেমন কম দেখেছি। একবার ঢাকার প্রথম ষোলতলা ভবন, মতিঝিলস্হ ইসলাম চেম্বারে গিয়েছিলাম কোন কাজে- প্রয়াত জহুরুল ইসলাম সাহেবের কক্ষে দেখেছিলাম ডাব কেটে কেটে তৈরী করে, তাকের মধ্যে সারি সারি সাজিয়ে রাখা, অতিথি আপ্যায়নের জন্য। ছুরি দিয়ে তিনটুকরা করে মুখ কেটে খাবার কাঠি/স্ট্র লাগিয়ে দিলেই হলো। অনেককে দেখেছি মুখ লাগিয়ে খেতে। পানি পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে তারপরও ওভাবে খাওয়ার তৃপ্তি, মজা সেতো আলাদা, আমার গ্রামের অনুভূতি, বাড়ীর কথা পরিবারের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।