আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা, আমার মেয়েটাকে বাঁচাও (১ম ও পরের অংশ)

যে যায় লংকায়, সে হয় রাবন

প্রতিদিনের মতো আজকেও আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কাটাবন থেকে আমার অফিসের গন্তব্যে ইস্টার্ণ প্লাজার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে একটি মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেয়ে থমকে দাড়ালাম। ভাইয়া, ভাইয়া বলে চিৎকার করছে একটি মেয়ে। আমি পেছনে না তাকিয়ে আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলাম। গুরুত্ব দেয়ার মতো বিষয় না।

কিন্তু ডাকাডাকি না থামায় কৌতুহলবশে পেছন ফেরে তাকালাম। বার তেরো বছরের একটি মেয়ে, আমাকে ঈশারায় ডাকছে। আমি অনেকক্ষন চেষ্টা করলাম; নাহ, চিন্তে পারলাম না। পাশে দাঁড়ানো দুজন ভদ্রমাহিলাকেও আমার অপরিচিত মনে হলো। যথেষ্ট পরিমান দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেলাম।

আমাকে ডাকছেন? ভাইয়া তুমি কেমন আছো? আমি থমকে গেলাম। আমি ঠিক--------। পাশে দাঁড়ানো দুজন ভদ্রমহিলা ফিশ ফিশ করে আমাকে ওর সাথে কথা বলতে অনুরোধ করলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। দৌড় দেবো কিনা ভাবছি।

লোকে কাপুরুষ ভাববে কিংবা হাসাহাসি করবে এই ভয়ে চুপ থাকলাম। মেয়েটি চিৎকার করে বললো, কেমন আছো ভাইয়া? নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম-হুমম, ভালো। আপনী কেমন আছেন? মেয়েটি হা-হা করে চিৎকার করে হেসে উঠল। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটি হাসি থামিয়ে বললো, মা দেখো- ভাইয়া আমাকে আপনি করে বলছে।

এতক্ষণে বিষয়টি বুঝতে পারলাম। কেমন আছো- খুকি? আবারও হাসির ফোয়ারা তুমুল উপছে পড়লো। এবার বুঝতে পারলাম তাকে ‘খুকি’ বলাতে সে হাঁসছে। পেছনে দাঁড়ানো মহিলা ইঙ্গিত করছেন, তার সাথে যেন স্বাভাবিক আচড়ন করি । এদিকে উৎসুক জনতার ভিড় ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।

কি ঝামেলায় পড়লাম রে বাবা। মেয়েটির মা হঠাৎ একটি রেস্টুরেন্টের দিকে ঈঙ্গিত করে সেদিকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কি করা উচিৎ ঠিক বুঝতে পারছিনা। ওদিকে অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে। উটকো ঝামেলা আর কি! রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে ভদ্রমহিলাকে বললাম, আমার তাড়া আছে, আমাকে যেতে হবে।

এ কথা মেয়েটি শুনা মাত্র হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। মা, ভাইয়া যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাই আমি আর কিছুই খাবো না; না খেয়ে মরে যাবো। সামনে দাঁড়ানো পাজারো গাড়ি থেকে মেয়েটি কি যেন নিয়ে আসতে গেলে এই সুযোগে তার মা বললো, বাবা আমার একমাত্র মেয়ে। প্লিজ ওকে বাঁচাও। আমি কিছু একটা বলার আগেই মেয়েটি হাজির।

আমার হাত ধরে নিয়ে গেল রেস্টুরেন্টে। অগত্যা আমাকে যেতে হলো। ---------বাবা, আমার মেয়েটাকে বাঁচাও!!!! বার বার প্রতিদ্ধনি হচ্ছে কথাগুলো। তারপর----------ব্লগার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আরেকদিন। পরের অংশ-------- নিজের শত অনিচ্ছা সত্তেও রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।

দারুণ কৌতুহল কাজ করছে। বিষয়টা আসলে কি, জানার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ওদিকে অফিস থেকে বার বার ফোন আসছে। পুনঃ পুনঃ মিথ্যা কথা বললে আমি আবার ধরা খাই। হয়তো সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারিনা বলে এই সমস্যা।

তবুও মোবাইলে সমানে মিথ্যা বলে যাচ্ছি। মেয়েটি আমার পাশে বসে আছে। মাঝে মাঝে আমার হাতটি তার হাতের উপর নিয়ে খুনসুটি করছে। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। অফিসের তাড়া না থাকলে বিষয়টা বেশ এনজয় করতাম।

এরই মধ্যে বেয়াড়া আসলে মেয়েটির মা আমাকে কি খাবো জানতে চাইলে আমি কিছুই খাবোনা বলে সাফ জানিয়ে দিই। আমার কথাটি শুনামাত্র মেয়েটি হন হন করে বেরিয়ে গেল। পেছনে পেছনে তার মা দৌড়ে গেল। রেস্টুরেন্টের অন্য কাস্টমাররা হা করে তাকিয়ে দেখছে। অপর ভদ্রমহিলা আমার কানের কাছে এসে বললেন, বাবা রিমি আমার বোনের মেয়ে।

(জানতে পারলাম নামটা-রিমি)। সে খুবই ব্রিলিয়ান্ট। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনা করছে। আমি বিরক্তির স্বরে বললাম-সবই তো বুঝলাম, কিন্ত আমাকে..........। কথাটা শেষ করার আগেই রিমি আমার পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল।

কাঁদতে কাঁদতে বললো, ভাইয়া, তুমি কি সত্যিই কিছুই খাবে না? বললাম- অবশ্যই খাব। তবে একটা শর্ত, তুমি আর কান্নাকাটি করতে পারবেনা। দ্রুত চোখ মুছে ফেল। রিমি খুবই দ্রুত লক্ষ্মি্ মেয়ের মতো চোখ মুছে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। তার চোখে মুখে প্রচন্ড আনন্দের ঝিলিক।

সে ভাইয়া বলে আমার পিঠের উপর আলতো করে একটা চিমটি কাটলো। আমার কাছে রিমিকে প্রতিবন্ধী মনে হচ্ছে না। তাকে প্রতিবন্ধী প্রমান করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। তার বারবার ‌'ভাইয়া' ডাক আমাকে বিমোহিত করে তুলছে। আমি রিমির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম- ব্যাপারটা খুলে বলুন তো? তিনি কথাটা না শুনার ভান করে বললেন, এই রেস্টুরেন্টের চিকেন ফ্রাই অসাধারন! বাকি অংশ ব্লগার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে অন্যদিন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।