কাঁদছো !! কান্নাতে তোমাকে দারুণ দেখায় ! ৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আমরা সবাই টিভির দিকে তাকিয়ে একটু পর রায় হবে। ক'দিন আগে রায়ে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি হয়ে গেছে। আমরা সবাই উত্তেজিত, কেননা, এই রায়গুলো আমাদের ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। ৪২ টা বছর আমরা অপেক্ষা করছি এই রায়গুলোর জন্যে। আমরা অধীরে টিভির দিকে চারিদিকে থমথম অবস্থা।
দুপুর বেলাতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। পুলিশ গুটিসুটি হয়ে বসে আছে। রাজধানীতে ১২ প্লাটুন বিজিবি নামানো হয়েছে নাশকতা ঠেকাতে।
অবশেষে রায় হলো, কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। সারাদেশ ফেটে পড়লো।
ফেইসবুকে সবাই প্রতিবাদ করলো। রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর এখন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। প্রত্যেকের হাতে মোমবাতি। দফায় দফায় মিছিল। কোথাও মশাল মিছিল।
কোথাও অবরোধ। সবার দাবি একটাই। স্লোগানও একটাই—‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। ’
বেলা তিনটায় শুরু হয়েছে এ বিক্ষোভ আর সমাবেশ। চলবে সারা রাত।
শাহবাগে প্রথমে অবরোধ শুরু করে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক।
৬ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
গতকাল সারা রাত গান, স্লোগান ও বক্তৃতার মধ্য দিয়ে চলে ক্ষোভ আর প্রতিবাদ।
আজ বুধবার সকাল থেকে সেখানে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবাদী গান আর স্লোগানে স্লোগানে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তাদের ফাঁসির দাবি উঠেছে সমবেত জনতার কণ্ঠে।
সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সবার কন্ঠে। সবার একটাই দাবী রাজাকারের ফাঁসি।
৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে চলছে তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি। সেখানে উপস্থিত হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ঘোষণা করা হলো, আন্দোলন ও প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেবেন তিনি।
এ সময় সভাস্থলে শুরু হলো হইচই। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রণব দেব রায় প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, হানিফ বক্তব্য দেবেন, এমন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত জনতা প্রতিবাদ জানান। তাঁরা ‘সরকারের সমঝোতার রায় জনগণ মানে না’, ‘আপসের রায় মানি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ হাত নেড়ে জনগণকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জনগণের স্লোগান বাড়তেই থাকে।
শুধু কাদের মোল্লা নয়, সব যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসি দিতে হবে বলে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। ঘটনার একপর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সভাস্থল থেকে সরে যান মাহবুব উল আলম হানিফ। বক্তব্য না দিয়েই শাহবাগ থেকে চলে যান তিনি। জনতার বাধায় সভাস্থল ছাড়লেন হানিফ।
৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
রাজধানীর শাহবাগে আজ মহাসমাবেশে নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল।
মহাসমাবেশ শেষ হলেও জনসমুদ্রের ঢেউ মিলিয়ে যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত। শাহবাগে মানুষের ভিড় এতটুকু কমেনি। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি এবং সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে তারুণ্য।
লড়াই চলবে। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার শপথ নিয়েছেন লাখো জনতা মহাসমাবেশের মঞ্চে আজ কোনো রাজনৈতিক নেতা বক্তব্য দেননি। কোনো রাজনৈতিক ব্যানারও ছিল না।
৯ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
শাহবাগ চত্বর এখন আলোর মোহনা। চারদিকে চার রাস্তা।
মত্স্য ভবন, এলিফেন্ট রোড, বাংলামোটর ও টিএসসির ঠিক মাঝখানে প্রজন্ম চত্বরের মূল মঞ্চ। চার রাস্তাজুড়ে জ্বলছে মোমবাতি। মোমবাতি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘৭১’। মোমবাতি জ্বালিয়ে শুরু হয়েছে শাহবাগের রাতের কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে টাঙানো হয়েছে প্রায় ১০০ মিটারের মতো লম্বা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
‘৭১’-কে যেন ধারণ করে আছে ওই পতাকা। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে।
১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আবারও রাত ১২ টার দিকে স্লোগান দিয়ে রাজপথ কাঁপালেন লাকী আক্তার। তার কণ্ঠে স্লোগান, ‘তুই রাজাকার, কাদের মোল্লা তুই রাজাকার। ’
কে বা কারা লাকিকে দমানোর জন্যে পেছন থেকে বোতল দিয়ে আঘাত করে ।
আহত লাকি আজ রোববার বিকেলে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন শাহবাগের আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী লাকী আক্তার। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর রাতেই আবারও শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে স্লোগান ধরেন।
আজ বিকেলে শাহবাগ যান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। তাঁকে সেখানে বক্তব্য দেওয়া হবে কি-না, তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছুটা মতদ্বৈততা দেখা দেয়।
১১ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদের নেতৃত্বে শতাধিক মাওলানার একটি দল শাহবাগের আন্দোলন চত্বরে গিয়ে সংহতি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধের চেয়ে বড় পাপ আর নেই। ’
জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে চলমান গণ-আন্দোলন শহরগুলোর পাশাপাশি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে।
১২ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
কাদের মোল্লাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে আজ মঙ্গলবার তিন মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়ে সারা দেশ। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ডাকে একাত্মতা পোষণ করে সর্বস্তরের মানুষ বিকেল চারটা থেকে চারটা তিন মিনিট পর্যন্ত যে যাঁর অবস্থানে থেকে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
১৩ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সম্মানে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে উপস্থিত নানা শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ এক মিনিট দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
১৪ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁই ছুঁই। মুহূর্তেই শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার মোমবাতি। শাহবাগের আলোয় ভাসে পুরো দেশ। এই শিখা প্রতিবাদের।
১৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী এলাকায় আহমেদ রাজিব হায়দার নামের এক ব্লগার খুন হয়েছে। রাত পৌনে দশটার দিকে তার মৃতদেহ বাসার কাছে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে ব্লগে সক্রিয় ছিলেন আহমেদ রাজিব।
১৬ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে উঠেছে রাজীব হত্যার বিচারের দাবি। রাজীবের কফিন ছুঁয়ে এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সেই সঙ্গে রাজীব হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
১৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচার করা যাবে। আজ জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল-২০১৩ সংশোধিত আকারে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। আইনটি পাস হওয়ায় ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার পথ উন্মুক্ত হলো। এই বিল পাস আন্দোলনের এক বিরাট বিজয়।
যুদ্ধাপরাধীরা যে দলের হোক কেন সবাইকে এই আইনে বিচার করা যাবে।
১৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলা আন্দোলনের সঙ্গে এবার সংহতি জানালেন টেলিভিশন নাটকের শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী। শাহবাগে শিল্পীরা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত সব গণমাধ্যম বর্জন করার ঘোষণা দেন।
১৯ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মঙ্গলবার রাতে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট—এসব দাবির বাইরে গণজাগরণ মঞ্চের অন্য কোনো দাবি নেই। নাস্তিক আর্দশ মেনে চলা রাজীবের ইসলাম সম্পর্কে আক্রমনত্বক লেখার জন্যে নাস্তিক ও আস্তিক দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে প্রজম্ম চত্বরকে ঘিরে।
দ্বিমত সৃষ্টি হয়ে গেছে। ধর্মকে টেনে আনার জোর প্রচেষ্টা চালানোর হয়েছে কোন এক রাজনৈতিক দল থেকে। দাবী জানানো হয়েছে যে, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ধর্ম সম্পর্কে কোনো কথাই হচ্ছে না।
২০ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
চার দশকের বেশি সময় ধরে বুকের ভেতর জমতে থাকা অনুভূতিগুলো গোটা গোটা হরফে ঠাঁই পেল কাগজের চিঠিতে। ডাকপিয়ন বেলুনে চড়ে সেই চিঠি যাবে আকাশের ঠিকানায়, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের কাছে।
ঘড়িতে বিকেল চারটা ১৩ বাজতেই হাজার হাজার চিঠি উড়েছে আকাশে।
(সূত্র: প্রতিদিনের পত্র পত্রিকাগুলো)
৬ই মার্চ, ২০১৩
--------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ২৬৮/৩৬৫
(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দুঃখিত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।