মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিক্ষোভরত সমর্থকদের ‘শিগগিরই’ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মুরসির সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড গতকাল রোববার মাঠ না ছাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ফলে দেশটিতে আরও রক্তপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ‘খাদের কিনারা’ থেকে ফিরিয়ে আনতে সব রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। শনিবার ভোররাতে মুরসির সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক গুলিবর্ষণে ১২০ জন নিহত এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার ব্যক্তি আহত হয় বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
গতকাল ভোরেও বন্দর নগর পোর্ট সাইদে মুরসির সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কয়েক দিন গণবিক্ষোভ চলার পর ৩ জুলাই মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরের সেনাবাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করা হয়। তখন থেকেই মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন তাঁর সমর্থকেরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিম শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী মুরসির সমর্থক বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
মুরসির সমর্থকেরা কায়রোর যেখানে অবস্থান নিয়েছেন, সেখানকার লোকজন তাঁদের অসুবিধা হওয়ার অভিযোগ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। নিরাপত্তা বাহিনী ‘যতটা সম্ভব ক্ষতি কমানোর জন্য’ চেষ্টা করবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী ‘রক্তপাত রোধ’ করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, (বিক্ষোভকারীরা) বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং রক্তপাত রোধে তাঁরা এই বিক্ষোভের ইতি টানবেন। ’ শনিবার মুরসি-সমর্থকদের ওপর গুলি চালানোর খবর অস্বীকার করে তিনি অভিযোগ করেন, ব্রাদারহুড ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করছে। শনিবারের ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ওই দিন গুলিতে ১২০ জন নিহত হয়েছে বলে ব্রাদারহুড দাবি করলেও সংগঠনটির একজন মুখপাত্র পরে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৬৬। এ ছাড়া ৬১ জন ‘ক্লিনিক্যালি মৃত’। মুখপাত্র আরও বলেন, আহত ব্যক্তির সংখ্যা সাড়ে চার হাজার এবং এর মধ্যে ৭০০ জন গুলিবিদ্ধ। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, ওই দিনের সংঘর্ষে নিহত ও আহত ব্যক্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৮১ ও ৭৯২।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মুরসির হাজার হাজার সমর্থক রাবা আল-আদাউইয়া মসজিদের পাশে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন।
ব্রাদারহুড বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র জিহাদ আল-হাদ্দাদ বলেন, মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা ওই মসজিদের কাছে অবস্থান করবেন।
ব্রাদারহুডের এই ঘোষণার পর আরও রক্তপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল ভোরেও সুয়েজ খালের পার্শ্ববর্তী শহর পোর্ট সাইদে মুরসির সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল টেলিফোনে মিসরের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মিসরের অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার দুই জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তাঁর গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটা মিসরের জন্য একটা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। মিসরকে খাদের কিনারা থেকে সরিয়ে আনতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে দেশটির সব রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাচ্ছে। ’ রয়টার্স ও আল জাজিরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।