আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবই এবং সবাই আছে, নেই শুধু চির দুখি আমাদের দুখু মিয়া।

চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পুটারের চেয়েও প্রখর
গতকাল প্রথম আলো পত্রিকা সহ আরো বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা বাংলা নববর্ষ ১৪১৮ নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। প্রথম আলোর "বৈশাখ-১৪১৮" নামে বিশেষ সাপ্লিমেন্ট ছিল দেখার মত। সেখানে এসেছে লালন শাহ, কবি চন্দ্রাবতী ভনে, আরজ আলী মাতুব্বর, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, মণসুর উদ্দিন, শাহ আবদুল করিম সহ মোট ১১ জনের নাম। যেখানে সুকৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে আমাদের জাতীয় কবি, চির অসাম্প্রদায়িক কাজী নজরুল ইসলামকে একটি হাস্যকর যুক্তির মাধ্যমে। যেখানে কতৃপক্ষ বলেছে "নববর্ষের এই দিনে আমরা স্মরণ করতে চাই আমাদের মাটির নায়কদের, যাঁদের জীবন আর কর্মের বৈশিষ্ট্য হলো মৃত্তিকালগ্নতা, যাঁদের অবদানে পুষ্ট হয়েছে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি।

" হুম ঠিকাছে, নজরুল কোন অবদান নাই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে। কিন্তু সম্পাদকীয় পাতায় পহেলা বৈশাখ নিয়ে দুটি লেখায় কোন অজুহাতে নজরুলকে অবজ্ঞা করা হল? যেখানে পত্রিকা সম্পাদক মতিউর রহমান তার সম্পাদকীয় লেখা শেষ করেছেন, "এই দিনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে আমরা বলি: বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। " আর ঠিক তার পাশে উপসসম্পাদকীয় কলামে কথাসাহিত্যিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার হে নূতন, নিষ্ঠুর নূতন, সহজপ্রবল শিরোনামে লেখা তার কলামে যেন আগাগোড়া রবীন্দ্র গুনকীর্তন করেছেন। তার লেখা শুরু হয়েছে, "১৩০৫ সালের ৩০ চৈত্রের ঝড়ের দিনে শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘বর্ষশেষ’ কবিতাটি..." এর মাধ্যমে আর শেষ করেছেন এই লাইন দিয়ে..."সত্য যে কঠিন, এখন এই কঠিনেরে ভালোবাসতে হবে। সেটি অসাধ্য কিছু নয় শেষ বিচারে এবং আমাদের অভয় দেন রবীন্দ্রনাথ, যে কখনো করে না বঞ্চনা।

" মানে শুরু রবিন্দ্রনাথ দিয়ে শেষও সেই রবীন্দ্রনাথ দিয়ে। মধ্যখানে আমাদের চির দুখি দুখু মিয়া বাদই থাকলো। অথচ স্যার আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তারই প্রতিষ্ঠালগ্নে আপনার এই বিশ্বকবির ভুমিকা কি ছিল সেটা আপনি ভাল জানেন। সর্বক্ষেত্রে আজ কাজী নজরুল ইসলামকে যেভাবে অবজ্ঞা আর অবমাননা করা হচ্ছে তা দেখে আর শঙ্কিত হয়না এখন আগের মত। কারন যারা অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে সাম্প্রদায়িকতা চড়াচ্ছে তাদের চিনতে সবাই ভুল করলেও আশা করি তরুণ প্রজন্ম এদের চিনতে ভুল করবেনা।

কি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আর কি প্রিন্ট মিডিয়া কোথাও আজ নজরুল নেই। নজরুলকে তাদের এত ভয় কিসে?? জাতীয় কবিকে নিয়ে সবচেয়ে বেদনাদায়ক আর চরম অবমাননাকর যে ব্যাপারটি আমাকে গতকাল পিড়া দিয়েছিল সেটা আমারই শহর চট্টগ্রামের একটি বিষয়ে। বিগত জোট সরকারের সময় চট্টগ্রাম শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে অবস্থিত ডিসি হিল পাহাড়টিকে জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য "নজরুল স্কয়ার" নামকরন করা হয়। এবং এর দুইপাশের প্রবেশমুখে বসানো হয় জাতীয় কবির বিশাল দুইটি মুর‍্যাল। এই পাহাড়টির সাথে কবির রয়ছে অনেক স্মৃতি।

দুঃখজনক হলেও সত্যযে, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার রাতেই কে বা কারা জাতীয় কবির এই মুর‍্যালে কালিমা লেপন করে তার প্রতি যে অবমাননা আর অবহেলার সুচনা করেছিল সেটা আজকের দিন পর্যন্ত বিদ্যমান। চট্টগ্রামের বর্ষবরনের মুল অনুষ্ঠান এখানে হয়। যেহেতু সরকারিভাবে এখনো জায়গাটির নাম "নজরুল স্কয়ার" আছে সেহেতু নিয়ম অনুযায়ী তা ব্যবহার করা সবার কর্তব্য। কিন্তু বর্ষবরন নিয়ে প্রকাশিত সকল ব্যনার, পোস্টার, প্রকাশনাতে "নজরুল স্কয়ার" ব্যবহার না করে ডিসি হিল ব্যবহার করা হয়েছিল। আর আমাদের মিডিয়াও এক কাঠি সরস।

চট্টগ্রামের বর্ষবরন নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন এবং পত্রিকায়ও এটিকে "নজরুল স্কয়ার" এর পরিবর্তে আগের ডিসি হিল ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে আজ আমাদের নজরুলকে যেভাবে অবজ্ঞা আর অবহেলা করা হচ্ছে তাতে সময় আর বেশিদিন যখন আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম বলবে, নজরুল!! উনি আবার কে?? যেখানে এখনকার কবি নির্মেলেন্দু গুণ আর মিডিয়া ব্যক্তিত্ত রামেন্দ্র মজুমদারও এটিকে নজরুল স্কয়ার না বলে ডিসি হিল বলেন। নজরুল স্কয়ার (ডিসি হিল) এর প্রবেশ মুখ। ছবির ডানদিকে নজরুল ইসলামের মুর‍্যালের সামান্য দেখা যাচ্ছে। সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত্রি যেভাবে রবীন্দ্র সঙ্গীত আর রবীন্দ্র দর্শন নিয়ে আমাদের মিডিয়া সরব থাকে তাতে আমি বলি কি কি দরকার কাজী নজরুল ইসলামের মত একজন যাযাবর আর পথ-ঘাট থেকে উঠে আসা কবিকে জাতীয় কবির মত ভারি বস্তু দিয়ে শুধু শুধু কষ্ট দেয়া।

তার ছেয়ে বরং সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হওয়া, জমিদার শ্রেণীর প্রতিনিধি, কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের সাথে আজীবন আত্মিক সম্পর্কে গড়ে উঠা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথকেই এই পদবী দিয়ে দেয়া হোক। কত কিছুইতো পরিবর্তন হচ্ছে। এটাও হলে তেমন কিছু যায় আসেনা। কারন গরিবের বন্ধু নজরুলকেতো আর মিডিয়া এবং প্রভাবশালীরা ভালবাসেনা যে প্রতিবাদ হবে। সুতারাং আমাদের চির দুখি দুখু মিয়া নজরুলকে আমাদেরই মত সাধারনের মাঝে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া হোক।

অসাম্প্রদায়িক, আজীবন সংগ্রামী, বিপ্লবী আর আপোষহীন আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম আমদের মাঝে বেঁচে থাকবে যতদিন বাংলা আর বাংলাদেশ থাকবে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।