আজ বৈশাখে
আমি হঠাৎ বড় হতে হতে থুক্কু বুড়ো হতে হতে
কেমন শিশু হয়ে যাচ্ছি। আমি বাসা থেকে বের হলেই
ছেলে বলে উঠে- বাবা দেখে শুনে রাস্তা পার হয়ো,
রাস্তায় অসহ্য ট্রাফিক জ্যাম। একদিন আমিই ওকে
রাস্তা পার হতে শিখিয়েছি। আমি এটা সেটা খেতে চাইলেই
গিন্নী বারণ করে- "বলে সুগার বেড়ে যাবে, কোলস্ট্রেরলটা
একবার দেখিয়ে নাও"। অথচ একসময় মা আমাকে
আইসক্রীম খেতে বারণ করতো, টনসিল ভোগাবে বলে।
মা চকলেট খেতেও বারণ করতো দাঁতে পোকা হবে বলে।
নিষেধের বেড়াজাল টপকে একদিন সত্যিই বড় হয়েছিলাম।
শিরদাঁড়া এতোটাই মজবুত ছিল যে কখনোই মাথা নোয়াবার
কথা ভাবিনি, সবকিছুতেই একরোখা ভাব। স্কুলের
কালাচাঁন স্যার একদিন বাবাকে ডেকে বলেছিলেন-
“ছেলে যা করতে চায় করতে দিন, শেকলে বাঁধবেন না”।
শেকলে আমি কখনোই বাঁধা পড়িনি, কেউ বাঁধতে পারেনি।
তবে পাখীরও বয়স হলে ডানা ঝাপটানো কমে আসে,
আকাশে উড়বার বাসনাও লোপ পায়। তবে-
পাখী যতই ক্লান্ত হোক, খাঁচায় সে কখনোই স্বাচ্ছন্দ নয়,
হোক তা সোনার খাঁচা। আমি নিজেও আজ অনেকটা ক্লান্ত।
ঠিক বুড়ো পাখীটার মতো। তফাৎ, আমার শুধু ডানা নেই,
খোলা আকাশের নীচে থেকেও আমি যেন সংসার খাঁচায় বন্দী।
নাহ্ ঠিক বন্দী নই। আমার পায়ে কোন শিকল নেই,
আমি উড়তে না পারলেও এদিক সেদিক ঘুরতে পারি।
শিশুকালে হাঁটি হাঁটি পা পা করে একসময় মায়ের আঁচল ধরে
কিংবা বাবার আঙুল ধরে হেঁটিছি এঘর থেকে ওঘর।
তারপর সেই প্যারামবুলেটর, অতঃপর নিজের পায়েই হেঁটেছি।
আজও হাঁটছি।
প্যারামবুলেটর সাথে নেই,
কল্পনায় একটা ছড়ির কথা ভাবছি।
ছড়ি ঘুরাতে ঘুরাতে যে বয়সটাকে এতোকাল দিব্বি শাসন করে এসেছি,
আজ সেই ছড়িই আমাকেই শাসাবে বলে মনে মনে হাসছি।
ধুর! ঐ ব্যাটাকে আমি কখনোই প্রশ্রয় দেবোনা,
কারণ একবার আমার হাতে জেঁকে বসলে ও আর কিছুতেই
আমাকে ছাড়বে না, সে সুযোগ ওকে আমি দেবোনা।
যে বছর চলে গেছে যাক- আজ পহেলা বৈশাখ।
নতুন বছর, সবকিছুই নতুন করে শুরু করা যাক।
আমার পরণে আজ টকটকে লাল পাঞ্জাবী,
আজ আমিও মাটির সানকিতে সবার সাথে পান্তা-ইলিশ খেয়েছি।
আজ আমিও বয়স ভুলে সবার সাথে আনন্দে মেতেছি।
আজ আমিও এটা ওটা করবো বলে আবদার ধরেছি।
আজ আর আমাকে কেউ কোন কাজে নিষেধ করেনি,
কোথাও এতোটুকু বাদ সাধেনি। আজ হঠাৎ যেন-
নিষেধের বেড়াজাল ছিঁড়ে যৌবন টপকে শিশুর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি।
আজ এই বৈশাখে আমি বুড়ো হতে হতে আবারো শিশু হয়ে গেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।