আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

♥♥♥♥♥ রহস্যময়ী মোনালিসা...♥♥♥♥♥

Ami odvut and ami real matal na.kobitai matal.

মোনা লিসা (ভুলভাবে মোনালিসা) একটি বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম। ইতালীর শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৬ শতকে এই ছবিটি অংকন করেন। ধারণা করা হয়, বিখ্যাত এই ছবিটি মোনা লিসার দ্বিতীয় পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ স্মরণে অঙ্কিত হয়। অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন। শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনা লিসার এই ছবিটি আঁকেন। চিত্রকলার ইতিহাসে এই চিত্রকর্মটির মতো আর কোনটি এত আলোচিত ও বিখ্যাত হয়নি। এর একমাত্র কারণ মোনা লিসার সেই কৌতূহলোদ্দীপক হাসি যা পরবর্তীতে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এটি প্যারিস শহরের ল্যুভ জাদুঘরে রাখা আছে। এটি ছিল শিল্পীর সবচেয়ে প্রিয় ছবি এবং তিনি সবসময় এটিকে সঙ্গেই রাখতেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সেই ঐতিহাসিক চিত্রকর্ম 'মোনালিসা'-এর মোনালিসাকে চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইতালির শিল্প ইতিহাসবিদ সিলভানো ভিনচেটি। এ জন্য তাঁরা ইতালির এক অভিজাত নারীর সমাধি খনন করবেন। সেখানে ওই নারীর দেহাবশেষ দেখে মোনালিসার পরিচয় বের করার চেষ্টা করবেন গবেষকরা। ভিনচেটি মনে করেন, লিসা গেরারদিনিই ছিলেন মোনালিসা চিত্রকর্মের মডেল। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া এক ডেথ সার্টিফিকেট থেকে জানা যায়, গেরারদিনি ফ্লোরেন্সে পড়াশোনা করতেন এবং তিনি সেখানে ১৫৪২ সালে মারা যান।

এ তথ্য থেকে তিনি আগামী মাসে সেন্ট ওরসোলায় অনুসন্ধানের কাজ শুরু করবেন। মোনালিসার হেয়ালিপূর্ণ হাসির পেছনের রহস্য জানার জন্য শিল্পবিশেজ্ঞরা গত ৫০০ বছর ধরে ধাঁধায় বয়েছেন। ভিনচেটি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, 'আমরা আশা করছি শতাব্দীর এই বিতর্ক শেষ করতে পারব এবং এটাও বুঝতে পেরেছি, লিওনার্দোর সঙ্গে মডেলের কী সম্পর্ক ছিল। ' মোনালিসা ছবিটির ভৌত কাঠামোই অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্ব ও রহস্যকে উপস্থাপন করেছে। গেরারদিনির মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করে এর রহস্য উন্মোচন করা হবে।

তাঁর মুখমণ্ডল পুনর্নির্মাণ করা হবে। গেরারদিনি ছিলেন একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর সহধর্মিণী। ভিনচেটি ও তাঁর দল ইতিমধ্যে ওই মাথার খুলির ভিত্তিতে মুখমণ্ডল পুনর্নির্মাণ করেছে। এ নিয়ে তিনি মাসব্যাপী গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, তিনি মোনলিসা চিত্রকর্মের গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন এবং ভিনচেটি বিশ্বাস করেন, গেরারদিনিই মোনালিসা চিত্রটির প্রকৃত মডেল।

পেইনটিংটি বর্তমানে প্যারিসের লোভার জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। সূত্র : বিবিসি, এপি, অনলাইন। ♥ দ্য ভিঞ্চি তাঁর মডেলদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ কে, কবে, কোথায় তাঁর ছবির মডেল হয়েছেন তার খতিয়ান খেরোখাতায় টুকে রাখতেন। কিন্তু মোনা লিসার চিত্রকর্মটির মডেল সম্পর্কে কোন তথ্য তাঁর খাতায় পাওয়া যায়নি। কিন্তু কেন? তাহলে কে তার চিত্রকর্মের মডেল হয়েছিল? - এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বেল ল্যাবের ডঃ লিলিয়ান শোয়ার্টজ।

তাঁর মতে লিওনার্দো এ ছবিতে সুকৌশলে নিজেরই প্রতিরূপ অংকন করেছেন। স্বীয় বক্তব্যের তিনি পক্ষে প্রমাণও দেখিয়েছেন। তিনি প্রথমে দ্য ভিঞ্চির আত্মপ্রতিকৃতি ও মোনা লিসা ছবি দু'টিকে ডিজিটাল কাঠামোতে রূপান্তর করেন। এরপর কম্পিউটার ব্যবহার করে দা ভিঞ্চির আত্মপ্রতিকৃতিটি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেন এবং ছবি দুটিকে পরস্পরের সাথে যুক্ত করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে ছবি দুটির মুখাবয়বের বৈশিষ্ট্যগুলো আশ্চর্যভাবে মিলে গেছে।

অর্থ্যাৎ দ্য ভিঞ্চি নিজেকে নারীরূপে কল্পনা করে ছবিটে এঁকেছিলেন। ♥ তবে এবিষয়ে ভিন্নমতও আছে। অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন। মোনালিসা কে নিয়ে অনেক কবি কবিতা লিখেছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ এর কবিতা - মোনালিসা -নির্মলেন্দু গুণ চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই সদ্য-রজঃস্বলা এক কিশোরীরে− যে জানে না, কী কারণে হঠাৎ এমন তীব্র তুমুল আনন্দ-কাতরতা ছড়িয়ে পড়েছে তার নওল শরীরে।

মনুর ভাষায় গৌরী, এইটুকুনু মেয়ে চমকে ওঠে নিজের পানে চেয়ে− দেখে তার অঙ্গজুড়ে ফুলের উৎসব। মনে হয় ছড়িয়ে পড়েছে মর্ত্যে নার্গিস আর বার্গিসের স্বর্গপুষ্পঘ্রাণ। মাকে ডেকে মেয়েটি শুধায়− ‘আমার শরীরে ফুলের সৌরভ কেন? মেয়েরা বুঝি ফুলের উদ্যান?’ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা বলেন, ‘বোকা মেয়ে, কিচ্ছু বোঝে না,−আয়, আজ আমি কুসুমগরমজলে তোকে নিজ হাতে গোসল করাব। ’ মা’র বুকে মাথা পেতে মেয়েটি তখন নিজেই কখন যেন মা হয়ে যায়। এই লাভাস্রোত, এই সঙ্গকাতরতা তাকে শেষে কোথায় ভাসিয়ে নেবে জানে না সে; বোঝে না সে তার বৃক্ষপত্রে কার হাওয়া লাগে? অগ্নিকুন্ডে বায়ুর মতন ছুটে এসে কে তাকে জড়াবে আদরে, সোহাগে? জানে না সে, বোঝে না সে তার চোখে, ঠোঁটে, তলপেটে, ঘুমভাঙা স্তনে জেগেছে যে ঢেউ তার গন্তব্য কোথায়? আনন্দ পুরুষে? নাকি আনন্দ সন্তানে? এইসব দেহতত্ত্ব জানার আগেই, এইসব গূঢ় গোপন রহস্যভেদ হওয়ার আগেই আষাঢ়ের এক বৃষ্টিভেজা রাতে মোনালিসার বিয়ে হয়ে গেল− লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সাথে।

লিওনার্দো অতঃপর দীর্ঘ রাত্রি জেগে জীবনের শেষ রং দিয়ে তাঁর প্রিয়তমা তরুণী ভার্যা মোনালিসাকে ক্যানভাসে আঁকলেন। শিল্পের ঔরসে মোনালিসা গর্ভবতী হলে স্বর্গ থেকে মখলুকাতে পুষ্পবৃষ্টি হলো। সিন্ধুর বিজয়রথ পশিল নদীতে− শান্ত হলো ক্ষিপ্তোন্মত্ত সমুদ্রের জল। মোনালিসা, য়ুরোপের প্রথম রমণী− পুরুষের কান্ড দেখে হাসে। সত্যি বলতে, নারীর হাসিতে এই রহস্য এর কোন কূল-কিনারা খুজে পাওয়া যাবে না।

এই রহস্য চির-রহস্য, সৃষ্টির মুলধারে আছে এই রহস্য। তবে এই হাসি যুগ যুগ ধরে পুরুষের চিত্তকে ব্যাকুল বিহবল করে আসছে। আবার এই রহস্যময়ী নারীকে লিওনার্দো স্থাপিত করেছেন প্রকৃতির পটভূমিতে, যেমন করেছিলেন "দ্য লাস্ট সাপার" ছবিটিতে। ছবির পেছনের দৃশ্য হল-একটি পাহাড়, তার পেছনে পর্বতমালা আর একটি মৃদুমন্দ পানির নহর। প্রকৃতি থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন নয়।

ইউরোপীয় রেনেসাসের সময় শিল্পীদের এই বিশেষ উপলব্ধি ঘটে আর লিওনার্দোর মধ্যে তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। ছবিটিতে আলো-আধারের খেলা দেখানো হয়েছে অত্যন্ত নিপুনভাবে। তা এতই নিখুত যে দেখে মনে হয় ছবিটি একেবারে জীবন্ত। বলা হয়ে থাকে ভিঞ্চিই প্রথম শিল্পী যিনি ছবিতে আলোছায়ার খেলা এনেছেন। "দ্য লাস্ট সাপার" এ তা লক্ষ্য করা গেছে।

"মোনালিসা" তে আলোছায়ার প্রয়োগ করে রঙ দেয়ায় মুখের সুক্ষ মাংসপেশীর উত্থান-পতন সৃষ্টিতে শিল্পী আশ্চর্য নৈপুন্য দেখিয়েছেন। এইসব কিছু মিলিয়ে "মোনালিসা" হয়ে উঠেছে বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ চিত্র। ছবিটি এখন আছে প্যারিসের লুভ মিউজিয়ামে। সেখান থেকে ছবিটি একবার চুরি হয়ে গিয়েছিল। সেই চুরির কাহিনীও কিন্তু উপন্যাসের মতই চিত্রাকর্ষক।

বহুচেষ্টা, যত্ন ও কৌশলে তা পুনরুদ্ধার করা হয়। তারপর একে পাহারা দেয়ার এমন কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হয় যেন "মোনালিসা" সত্যি এক সম্রাজ্ঞী-যার নিরাপত্তাবিধান অতি কঠোর ও জরুরী ব্যাপার। "মোনালিসা"কে দেখার জন্য বিশ্বের লোকের এত আগ্রহ এত আকুতি যে, তা বলে শেষ করা যাবে না। কয়েক বছর আগে "মোনালিসা" জাপানে এক সরকারী সফরে যায়। তার নিরাপত্তার জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে তা কোন রাষ্ট্রপ্রধান এর বেলায় ও নেয়া হয়না।

আর তাকে দেখতে গিয়ে এমন ভিড় হয় যে, ভিড়ের চাপে কিছু সংখ্যক লোক মারাও যায়। রাজা-মহারাজা, সম্রাট-সম্রাজ্ঞীকে ছাড়িয়ে গেছে এই 'মোনালিসা'। আসলে মোনালিসা হচ্ছে নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক, যে সৌন্দর্য যুগ যুফ ধরে দেশে-দেশে পুরুষ চিত্তকে আকর্ষন ও আবিষ্ট করে রেখেছে। এ কারনেই মোনালিসাকে দেখার জন্য পুরুষের মধ্যে এক অধীর আক্ষেপ, এক ব্যাকুল ক্রন্দন জেগে উঠে। আর তাকে দেখে পুরুষ চিত্তের বাসনা ও বেদনা, আবেগ ও অনুভূতি প্রশমিত হয়।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।