নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ মডারেশন চাই
২০০৪ সালের রমজান মাস। তখন আমি ছাত্র। আশুলিয়ার নরসিংহপুর আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমি ভার্সিটিতে ক্লাস করে বিকালে আশুলিয়া চলে যাই। পরদিন ডিউটি করে রাতে ঢাকায় বাসায় চলে আসি।
এভাবে সপ্তাহে ৩ দিন যেতাম।
আশুলিয়া বাজারের কাছে একটা রেস্টুরেন্টে আমার এক বন্ধু জব করত। আমি ঢাকা থেকে প্রথমে ওর ওখানে যাই। রাত ৮টার দিকে বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় দাড়াই গাড়ির অপেক্ষায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা ম্যাক্সি এসে দাঁড়ায় আমার সামনে এবং আমি উঠে পড়ি।
ম্যাক্সির একেবারে শেষের সিটে তিনজনের মাঝে ফাঁকা সিটে বসে পড়ি।
সাথে সাথেই গাড়ি চলতে শুরু করে। গাড়িতে আমি সহ প্রায় ৮/৯ জন ছিলাম। আমার হাতে একতা শপিং ব্যাগে ১ টা শার্ট ছিল। তখন শিতকাল ছিল তাই কুয়াসার কারনে বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
হঠাত দেখি আমার পাশের জন তার ব্যাগ থেকে একটা সাধারন ফল কাটার চাকু আমার সামনে থাকা এক লোককে দিচ্ছে। লোকটা চাকুটা শুন্যে ঘুরিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলছে- " খাপো! আমরা ডাকাইত। কোন রাও করবি না। যা আছে দিয়া দে!!" এটা বলার পরেই সে তার সামনে থাকা এক প্যাসেঞ্জারের ঘারে ধরে নিচু করে কনুই দিয়ে পিঠে মারতে থাকে। আমি সব দেখেও না দেখার ভান করি।
আমার ডান পাশে থাকা ছেলেটা বলল- "ভাই, বাইর করেন। " আমি মুচকি একতা হাসি দিয়ে আমার মানিব্যাগ বের করি। আমার কাছে ছিল প্রায় ৫০০/৬০০টাকা, ৫ হংকং ডলার, একটা সদ্য কেনা সীমকার্ড, আর একটা ৩০০টাকার রিচার্জ কার্ড।
ওরা সব রেখে আমার মানিব্যাগ ফেরত দেয়। সাথে সীমটাও ফেরত দেয়।
ভাগ্যিস আমার সাথে কোন সেট ছিলনা। আমার বা পাশের ছেলেটা আমার গলায় হাতিয়ে জিজ্ঞেস করে-" চেইন নাই?" আমি বলি-" নারে ভাই! কই পামু?"
দেখলাম গাড়িতে আমরা প্যাসেঞ্জার মাত্র ৩ জন আর বাকী সবাই ছিনতাইকারী। তো ওদের লিডার (চাকু হাতে) একজনকে চোখে মলম ডলে দিচ্ছে। বিচ্ছুবাম এর সাথে মরিচের গুড়া মিশিয়ে সেটা বানানো। লোকটা আহা-উহু করছে।
আমি আমার পাশের চোরাকে বলি-" ভাই, দিয়া দিছিতো। মলম লাগাইয়েন্না"। ছেলেটা আমাকে আস্বস্ত করে। হঠাত গাড়ি থেমে যায়। বাকী প্যাসেঞ্জারকেও মলম দেয়া হয়।
ওই দুই জনকে নামতে বলা হয়। আমি সবার লাস্টে। আমি মাথা নিচু করে ভেতর থেকে গেটের দিকে যাচ্ছি এমন সমন লিডার বলে-" এই, এইতারে দেখি মলম দেওয়া হয় নাই!!" আমি বললাম-"ভাই, না দিলে হয় না?" (আমি কেন জানি ভয় পাচ্ছিলাম না। মজাই লাগছিল)। লোকটা বলল- "একটু দিমু।
কিছু হইব না। " আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে স্বেচ্ছায় আমার মাথাটা তার দিকে এগিয়ে দেই। সে তার তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি আমার দুই চোখে রেখে ডলতে থাকে। ডলা শেষে আমি তাকাই আর মলমের মহিমা বুঝতে চেষ্টা করি। লোকটা হেসে দিয়ে বলে-" এইরে! ভাইয়ের চোক্ষে মলম লাগে নাই।
" এটা বলেই একহাত দিয়ে আমার মাথ পিছন থেকে চেপে ধরে আর অন্য হাতে মলম মেখে তার দুই আঙ্গুল আমার দুই চোখের কোনা দিয়ে প্যাত করে ঢুকিয়ে দেয়। সাথে সাথে একশন!!! শুধু - আআআহহহ!! আআআহহহ!! ওদেরই একজন আমাকে ঠেলে নামিয়ে দিয়ে বলল-" নিচে দোবায় পানি আছে। চক্ষু ধুইয়া লইয়েন। " বলেই গাড়ি টান। আমরা তিনজন চোখ ধরে কতক্ষন চেচালাম- "ডাকাইত!ডাকাইত!!"
রাস্তা পুরা সুনসান।
সাঁই করে বাস যাচ্ছে। আমি চোখ ডলতে ডলতে বদে পড়ি আর গোঙ্গাতে থাকি। চোখের ভেতর মনে হয় নরক জ্বলছে..........
আঙ্গুল ব্যাথা করতাছে এখন। আর টাইপ করতে পারুম্না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।