'জীবন' হলো এক কাপ গরম চা আর একটা জ্বলন্ত বেনসনের মতো। গরম চা একসময় জুড়িয়ে যাবে, বেনসনের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।
(সংবীধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: শুধুমাত্র বিবাহ করতে ইচ্ছুক পাত্ররা পড়বেন। আপুদের প্রবেশ কঠিনভাবে নিষেধ। )
যে সকল ছোট বা বড় ভাই এখনও বিবাহ করেন নাই কিংবা যাদের বিবাহের কথা বার্তা চলতাছে, তাগো লাইগা এই লেখাটা পড়া পুরাই ফরজ।
আশা করি এই লেখা পড়ার পর আপনেরা বুঝবার পারবেন, আমেরিকা যাওন কতটা জরুরী, বিশেষ কইরা বিয়ার বাজারে সুযোগ্য, দামী পাত্র হিসাবে আমেরিকাগামী পাত্র সব থেইকা উপরে। বাপ-মায়ে নিজের মাইয়ারে হাসতে হাসতে আমেরিকার পাত্রের হাতে তুইলা দিব, কুনো কোয়েশ্চন জিগাইবোনা।
গত ৯ এপ্রিলের কথা কইতাছি। আমার জীবনের স্মরণীয় দিন ছিল ওইটা। স্মরণীয় কারণ, ওই দিনের পর থেইকাই রাইতে খালি দু:স্বপ্ন দেখতাছি।
ছোটকালে একবার টিভিতে নায়েগ্রা ফলস দেখছিলাম, কাইলকা রাইতে স্বপ্নে দেখি আমি আমেরিকা গিয়া নায়াগ্রা ফলসের ধারে বাদাম বেচতাছি। যাই হোক, পুরা ব্যাপারডা আপনাগো লাগে শেয়ার না কইরা পারতাছিনা। ঘটনাটা তাই সংক্ষেপে বিস্তারিত কইতাছি।
বিয়ার বয়স হইছে আমার। বাসা থেইকা এদিক-ওদিক পাত্রীর খোঁজ চলতাছে।
বেশ কিছুদিন আগে আমার ফ্যামিলির একজন একটা সম্পর্ক আনছিল। পাত্রী একটা পেরাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেইকা ব্যাচেলর শেষ কইরা অখনে বিবাহ কইরা ডিম থেইকা বাচ্চা ফুটানির লাইগা প্রস্তুত। মাইয়ার বাপে ডাক্তার। মিডল ক্লাস ফ্যামিলি, বাড়ি উত্তরবঙ্গে।
সপ্তাহখানেক আগে মেয়ের আর্মি অফিসার খালুজান আমারে ফোন কইরা কইলেন, তাঁরা নাকি আমার লগে কথা কইতে চান।
সুতরাং ৯ এপ্রিল, ২০১১, দুপুর তিনটা ত্রিশ মিনিটে আমি যেন বেইলী রোড বুমারস-এ তাগো লগে দেখা করি। আগের জমানায় পাত্রের আত্মীয়-স্বজন যাইতো পাত্রী দেখতে। অখনে যুগ বদলাইছে। মাইয়ার আত্মীয়-স্বজন পাত্র দ্যাখে আগে।
কথা মতো আমি ওইদিন আমার ছোটমামারে নিয়া হাজির হইলাম।
নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১ ঘন্টা পর দেখি মেয়ের মা, বাবা, খালু আর বারডেমের জনৈক প্রফেসর আইলেন।
বুমারস-এর আলো আধারিতে চরম হিন্দী গান বাজতাছে। এরই মইধ্যে কথাবার্তা শুরু হইলো। মেয়ের বাপ-মা দেখি নিজেরা মুখ দিয়া কোন কথা কয়না। উনারা ইশারা করেন, আর সেই প্রফেসর আর মহামান্য খালুজান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন।
আমার নাম, পিতার নাম, দেশের বাড়ি, কি করি, আমার বাপে কি করতো -এই জাতীয় প্রশ্ন পর্ব শ্যাষে বারডেমের সেই প্রফেসর, যিনি পাত্রীর বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আমারে জিগায়, "”ভাই, তোমার কি আমেরিকায় সেটল করার আদৌ কোন ইচ্ছা আছে ?"” উত্তরে আমি তারে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে, ঢাকাতে আমি মোটামুটি ভালই একটা জব করতাছি। এইহানেই তো বেশ আছি, চারিদিকে বন্ধু-বান্ধব আছে, বেহুদা আমেরিকা গিয়া করুমটা কি?
এই কথা কওনের সাথে সাথেই দেখি, মেয়ে পক্ষের সবার মুখ কালো হইয়া গ্যালো। তখন প্রফেসর সাহেব কইলেন, ”"তুমি শিক্ষিত মানুষ, তোমার মুখে এই কথা মানায় না। এই দেশে থেকে করবেটা কি? আমার ছেলে মেয়েরা ওখানেই মানুষ। ওখানকার কালচার তারা এডপট করে নিয়েছে।
যদিও মনে প্রাণে তারা বাংলাদেশি। আর এই দেশেরতো কোন ভবিষ্যত বলে কিছু নাই। সুতরাং এ দেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি আমেরিকাতে কেটে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ”। "
এরপর তিনি দীর্ঘ প্রায় তিরিশ মিনিট ধইরা এই দ্যাশ ও জাতির ভবিষ্যত নিয়া একটা লেকচার দিয়া ফেলাইলেন। আমি আড়চোখে তাকায় দেখি, সামনের চেয়ারে বসা পাত্রীর বাপ-মা-ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তাছে।
ইতিমধ্যে মুরগীর রান আইলো, তন্দূরী রুটি আর কোক আইলো। প্রফেসর সাহেব মুখ ভর্তি খাওয়া নিয়া রসায় রসায় কথা শুরু করলেন আবার। আর আমি কাচুমাচু হইয়া বইয়া রইলাম। মাঝখান দিয়া আমার ছোট মামায় আবার জিগায়, ”"স্যার, বিদেশে না গিয়ে দেশে থাকলে তো দেশের উপকার হয়। ”"
এই কথা শুইনা তো প্রফেসর সাহেব ছ্যাৎ কইরা উঠলেন।
ডায়েট কোকে চুমুক দিয়া একটা জোরে ঢেকুর তুইলা কইলেন, ”"এই দেশে বেশি মেধার দরকার নাই। বেশি মেধা মানে বেশি মারামারি। ছোট দেশে বেশি মেধা দিয়ে হবেটা কি? আর হাচড়ায় পাচড়ায় আমেরিকা ঢুকতে পারলে একবার, পরের জেনারেশন তো এট লিস্ট মানুষ হবে। ”"
ইতিমধ্যে দেখি পাত্রীর আর্মি অফিসার খালুজান এট্টু লইড়া চইড়া বইলেন। পাত্রীর মায়ের ইশারায় তিনি আমারে জিগাইলেন মাইয়া ইংলিশ মিডিয়ামে পইড়া মানুষ, তারে আমি হাছাই বিদেশ নিয়া যাইবার পারুম কিনা।
আমি মনে মনে আল্লাহরে ডাকলাম। কিয়ের মধ্যে যে আইয়া পড়ছি। সাহস কইরা সামনের চেয়ারে বসা পাত্রীর বাপের মুখের দিকে তাকাইলাম। বুঝলাম, হ্যায় মনে মনে কইতাছে, ”"চান্দু, তোমার হাতে তো আমার মাইয়া এমনে এমনেই তুইলা দিমুনা। হ্যারে আমি ফার্মের মুরগীর মতন পাইলা পুইষা পেরাইভেটে পড়াইছি মেলা টেকা খরচা কইরা।
অহনে আমেরিকাগামী পাত্রের হাতে না দিবার পারলে পুরা টেকাই লস। "”
সবশেষে প্রফেসর সাহেবের সাফ কথা হইলো, হোক ছেলে বাংলাদেশের নামকরা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেইকা পাশ করা একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার , কিংবা ভালো কোন একটা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত- এসব কিছুরই আসলে মূল্য নাই। মূল কথা হইলো, যেমনেই হোক, ছেলেরে আমেরিকা বা কানাডা যাইতেই হইবো। নাইলে লাইফ নষ্ট। এই দ্যাশে থাইকা কুন লাভ নাই।
প্রায় দুইঘন্টা লেকচার শ্যাষে যখন ছাড়া পাইলাম, তখন আমি আর মামায় পুরা বিধ্বস্ত। মনে মনে কইলাম, "আমি তো শ্যাষ। এখন আমার কি হইবো?"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।