আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাস তৈরির কারখানা

মা বাবার সেবা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী এই রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সেবাদাস রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী আয়োজন চলছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যেমন ভারতীয়দের যূপকাষ্ঠে বলি দেয়া হচ্ছে, তেমনি এমন সব সর্বনাশা আয়োজন করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বেরই আর প্রয়োজনবোধ না করে। কিন্তু ভারত সরকার বা বাংলাদেশ সরকার কেউই এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পারছে না যে, এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তারা এমনকি নেপালের অভিজ্ঞতা থেকেও কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইছে না। বর্তমান সরকারের কোনো পদক্ষেপই এখন মনে হচ্ছে না যে, তারা এ দেশের স্বাধীন-সার্বভৌম অস্তিত্বের প্রতি মনোযোগী।

দীর্ঘকাল ধরে ভারত নেপালকে নিজেদের তাঁবে রেখেছিল। চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নেপাল সরকারকে সব সময়ই তারা অনুগত রাখার চেষ্টা করেছে। এমনকি রাজতন্ত্র অবসানের পর যে গণতন্ত্র সেখানে কায়েম হয়েছে, সেটিও সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য ভারত এখনো মরিয়া হয়ে কাজ করছে। কিন্তু শত জেদাজেদি সত্ত্বেও সে ব্যবস্খা কুক্ষিগত করা যায়নি। এখন যারা নেপালের সরকার পরিচালনা করছেন, তারা আর ভারতপন্থী বলে পরিচিত নন।

নেপালের বর্তমান সরকার স্পষ্ট করেই ঘোষণা করে দিয়েছে যে, তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতকে আর নাক গলাতে দেয়া হবে না। নেপালের মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচন্দ এখন আবারো সরকার গঠন করেছেন। গণতন্ত্রের একেবারে শুরুতে এই প্রচন্দই নেপালে সরকার গঠন করেছিলেন। কিন্তু আট মাসের মাথায় প্রবল ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মুখে সেই সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছিল। প্রচন্দ আবারো সরকারে ফিরে এসেছেন।

আবারো তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভারত মরিয়া হয়ে লেগে আছে। কিন্তু ব্যাপারটি এখন আর তত সুবিধাজনক নেই। ভারতকে সম্ভবত নেপালের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতেই হবে। নেপালে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক। এদের মধ্যে সামান্য কিছু লোকের গেরিলাযুদ্ধ ছাড়া যুদ্ধ করার কোনো অভিজ্ঞতাও নেই।

বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষ। যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে তখন এখানে লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। তার মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিশু ছাড়া প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সবাই এখনো ইন্তেকাল করেননি। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিলোপনের প্রকাশ্য প্রক্রিয়া শুরু করেছিল সেনাপতি মইনউদ্দিন আহমদের অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী সরকার।

সে সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড একে একে বিশ্লেষণ করে বলেছিলাম, সরকার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ওই মইনউদ্দিন ট্রয়ের ঘোড়ার মতো ছয় ঘোড়া নিয়ে যখন দেশে ফিরলেন এবং ভারতের সাথে মাথা নত করার রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কথা বললেন, তখনই আমরা প্রমাদ গুনেছিলাম যে, সামনে ঘোর দু:সময় আসছে। মইনউদ্দিন দেশকে রাজনীতিশূন্য করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার না-খায়েশ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতও তাকে ফুলিয়েছে। ।

মইনউদ্দিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন না। তিনি ছিলেন সেনাপতি মাত্র। কিন্তু তাকে ভারত রাষ্ট্রপতির মর্যাদায় সংবর্ধনা দিয়েছিল। এবং জোর গলায় বলেছিল, বাংলাদেশে এই প্রথম একটি সত্যিকার ভারতবান্ধব সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে।

মইন যখন ক্ষমতা স্খায়ী করার ফন্দি-ফিকির করছিলেন, ভারত নীরবে তাতে সমর্থন জুগিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা তখন দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিই নিই করছিলেন। তারপর অবশ্য পরিস্খিতি ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। অযোগ্য, ব্যর্থ, অদূরদর্শী মইনের ওপর আস্খা রাখতে পারছিল না তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে। ফলে তার বিদায়ের ঘন্টা বাজতে শুরু করে।

দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা। এবং ওই একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে নিয়ে আসা হয়। শেখ হাসিনার সরকার রাখঢাক করেনি। সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অকপটে বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে তারা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির কথামতো চলেননি বলে ক্ষমতায় আসীন হতে পারেননি। অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকার কবুল করে নিয়েছেন যে, ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য তারা জনগণের ওপর যতটা না নির্ভরশীল, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরশীল সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির ওপর।

সে বিবেচনায় এবার নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা এবার সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীদের শর্ত মেনেই ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। ড. ইউনূস বিতর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সে কথা শেখ হাসিনাকে তার টেলিসংলাপে স্মরণ করিয়ে দিতে ভুল করেননি। অর্থাৎ জনগণ নয়, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির দুষ্ট ও নষ্ট চক্রের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বর্তমান সরকার সেনাপতি মইনউদ্দিন সরকারের ধারাবাহিকতাই ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। জনগণ এখানে নীরব দর্শক ছিলমাত্র। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর দেয়া শর্তেই যেহেতু এ সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে, সুতরাং রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ তাদের কাছে আর মুখ্য থাকেনি।

ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর দেয়ার যে উন্মত্ত সিদ্ধান্ত এ সরকার গ্রহণ করেছে, তাতে আর বলে দেয়ার দরকার পড়ে না যে, কী শর্তে ২০০৮ সালের আঁতাতের নির্বাচনে শেখ হাসিনা গংকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। এর প্রধান শর্তই যে ছিল বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা, তা এখন আর অস্পষ্ট নেই। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই যে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওপর প্রথম আঘাত হয়নি সেটা এখনো অপ্রমাণিত। বিডিআর বিদ্রোহের তদন্তকালে এই প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব মেলেনি। এক দিকে সেনাবাহিনীর সাতান্নজন কর্মকর্তাকে একযোগে হত্যা করা হলো, অপর দিকে আরো শতাধিক কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অপসারণ করা হলো।

তার ওপর নিপুণ কৌশলে মুছে দেয়া হলো বিডিআর বাহিনীকে। বিলুপ্ত করা হলো সে বাহিনীর অস্তিত্ব পর্যন্ত। দ্বিতীয় পদক্ষেপে যা করা হলো তা হলো, ট্রানজিট-করিডোরের নামে ভারতকে অবাধে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অধিকার দেয়া। যে শর্তে এই অধিকার দেয়া হলো, ভারতের নিজস্ব ভূখণ্ডেও কোনো রাজ্যের কাছ থেকে ভারত এই সুবিধা আদায় করতে পারত না। প্রথম প্রথম আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতা-পাতিনেতারা মুখে ফেনা তুলে বলতে থাকলেন যে, ভারতকে করিডোর-ট্রানজিট দিলে হাজার হাজার কোটি টাকা ফি বাবদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে থাকবে।

বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। আহ্, কী মজা! আওয়ামী ঘরানার অর্থনীতিবিদ নামধারী চাপাবাজরা টেলিভিশনের টকশোতে টেবিলে চাপ্পড় মেরে অবিরাম বলে গেলেন, আর দেরি নয়, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হলো বলে। এখন সরকার বলছে, সরকার নাকি এতটা অসভ্য নয় যে, ট্রানজিট-করিডোরের জন্য ভারতের কাছে ফি দাবি করবে। এরাও একটি স্বাধীন দেশের মন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! আর অর্থনীতিবিদ নামধারী যে দুষ্টচক্র খুশিতে টইটম্বুর হয়ে ভারতের পক্ষে বগল বাজাচ্ছিলেন, তারা এখন মুখে কুলুপ এঁটে একেবারে গর্তে সেঁদিয়ে গেছেন। যদি সৎ হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের মতো এসে বলুন, ফি ছাড়া ট্রানজিট নয়।

তা না হলে জনগণ আপনাদেরও ছাড়বে না। এ তো বর্তমানকালের ঘটনা। সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই অনন্তকালের জন্য ভারতের তাঁবেদার বানাতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দাসমনোবৃত্তির শিক্ষায় গড়ে তুলতে চাইছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তুলে দিচ্ছে ভারতের হাতে। ভারতের কাছ থেকেই উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে ভারতের জন্যই রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

সেখানে কুলিমজুর ছাড়া বাংলাদেশের লোকদের জন্য আর কোনো কাজ নেই। নির্মাণসামগ্রী, উপকরণ-উপদেষ্টা, রড-সিমেন্ট সবই আসবে ভারত থেকে। বাংলাদেশীরা বড়জোর কুলিমজুরের কাজ করবে, তার বেশি কিছু নয়। সরকারের কী নীচ দাসমনোবৃত্তি যে, বাংলাদেশের পাঠ্যবইও ছাপার কাজ তারা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মোচিত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের শত শত প্রেস এখন মরচে ধরার উপক্রম।

শাহরুখ খানেরা ঢাকায় এসে উলঙ্গ নৃত্যে তরুণসমাজকে আফিম ধরানোর চেষ্টা করছেন। প্রভা কিংবা চৈতীরা সে নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছেন। এখন শিক্ষাব্যবস্খার মূল ধরেই টান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নবম ও দশম শ্রেণীর বাণিজ্যিক ভূগোলসহ বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে তরুণদের ভারতের সেবাদাসত্ব বরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ভূগোলের ৮৩ পৃষ্ঠায় একটি সৃজনশীল প্রশ্ন এ রকম : ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্খাপন না করে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করায় কী কী সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে? বিশ্লেষণ করো।

’ একই বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের সড়কপথের অনগ্রসরতা দূর করতে পরামর্শ দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদেশী সাহায্য গ্রহণ। ’ বইটির ৮৩ পৃষ্ঠায়ই সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ ও শক্তিসম্পদ বৃদ্ধিকল্পে বেশ কিছু বিকল্প পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে ব্যাপকহারে শক্তিসম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। ’ ৮৫ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্খা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৮৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, সড়কপথের উন্নয়নে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদনদীগুলো নাকি প্রতিবন্ধক।

ভাগ্যিস, লেখা হয়নি যে, অবিলম্বে বাংলাদেশের সব নদনদীর উৎসগুলো বন্ধ করে দিলে সড়ক যোগাযোগব্যবস্খার উন্নয়ন সম্ভব। এই বই যারা লিখেছেন কিংবা যারা লিখিয়েছেন, তারা একদিন নিশ্চয়ই এই সমাজের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে বিবেচিত হবেন। এবং তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্খা করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশ যখন আত্মনির্ভরশীলতার জন্য নিজস্ব সম্পদ ও অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত, তখন তরুণ প্রজন্মকে ঋণগ্রহণের মাজেজা, উৎপাদন না করে আমদানি­ এমন শিক্ষা কোন দুশমন দিতে পারে? বিদেশ থেকে ঋণগ্রহণ একটি জাতির নিয়তিতে পরিণত করার শিক্ষা যারা দিতে চান, তাদের এখনই চিহ্নিত করে ধাওয়া করা দরকার। সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার যে ষড়যন্ত্র করছে, দেউলিয়া করে দেয়ার যে চক্রান্ত করছে, এই পাঠ্যপুস্তক তারই অংশ।

জাতির বিবেক, সমাজের বিবেক, সুশীলসমাজ বলে যারা নিজেদের চিত্রিত করতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে আহ্বান, আসুন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের স্বার্থে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মমর্যাদায় বলিয়ান করার স্বার্থে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উচ্চকিত হই, সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।