আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই মতিউর রহমান, সেই মতি -২



মাননীয় দুই নেত্রী, ওয়ান-ইলেভেনে নির্জন কারাপ্রকোষ্ঠে বসে মতিউরকে মনে পড়েছিল? সেই মতিউর রহমান যিনি মস্কোর সমাজতন্ত্রের সুগন্ধি ছড়িয়ে নেতাজী শুভাষ চন্দ্র বসু থেকে জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবীদের কিংবদন্তির গল্প শুনিয়ে পার্টির কমরেড ও প্রেমিকার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সূচনা করেছিলেন। কত বিপ্লবী কমরেডের মরদেহ সামনে রেখে যিনি আজীবন সমাজতন্ত্রের লাল পতাকা ওড়ানোর শপথ নিয়েছিলেন কিন্তু বিপ্লব দূরে থাক মুক্তিযুদ্ধে কোন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতা-উত্তরকালে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ বঙ্গবন্ধুর ছায়ায় আওয়ামী লীগের হেরেমে প্রবেশ করলেও মতিউরের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। [/sb কথিত আছে, সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের কিংমেকার জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মতিউর রহমান কমিউনিস্ট পার্টিকে খাল কাটায় ঠেলে দিয়েছিলেন। তার জীবনের পথে পথে বিশ্বাসঘাতকতার একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সেনাশাসক এরশাদ জামানায় জেনারেল চিস্তির গোপন আজ্ঞাবহ দাস হয়েও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রেস, পত্রিকা ও জায়গা বরাদ্দের আবদার নিয়ে ঘুরেছিলেন।

দেশি-বিদেশি নানা মহলের অন্দরে যাতায়াতের একপর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এমনকি নিরন্ন মানুষের সঙ্গে দু মুঠো খাবার, মাথা গোঁজার ঠাঁই ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা যিনি চেয়েছিলেন। লোভ-লালসার ঊধর্ে্ব উঠে কমরেড তাজুলের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিলেও পরবর্তীতে নানা অন্ধকার গলি ঘুরে রাতারাতি বুর্জোয়া গণতন্ত্রী হয়ে যান তিনি। মুসলমান দেশে মধ্যদুপুরে গাজীপুরের এক বাগানবাড়িতে কোকিলের ডাক শুনে দুই-একজন লেখকের সঙ্গে বিদেশি মদের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার ছবি যেমন দেখা যায় তেমনি শোনা যায় রাতের আঁধারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের কাদের মোল্লার জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিদের সঙ্গে গভীর সখ্যে মেতে ওঠার খবর। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে কোনো কোনো মহল থেকে মিসকিনি সুযোগ-সুবিধা পেলেও ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে বড় ধরনের আবদার করে ব্যর্থ হন।

ভোরের কাগজে সুবিধা করতে না পেরে প্রথম আলো বের করে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে ওঠেন মতিউর রহমান ও তার মনিব, বিতর্কিত ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান। ২০০১ সালের নির্বাচনে লতিফের টাকা আর মতিউরের চতুরতা যোগ হয় ধানের শীষের পক্ষে। কিন্তু স্বার্থ হাসিল না হলেই মতিউরের স্বভাব চরিত্রহনন। খালেদা বা পুত্র তারেক রহমানের কাছে স্বার্থ আদায় না হওয়ায় উলফা ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত লতিফ-মতিউর জুটি বিএনপি সরকারের সঙ্গেই নয়, যেন দেশ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক অশুভ খেলায় নেমে যান। একসময় খদ্দর পরা যে মতিউর লাল বই বগলে নিয়ে হাঁটতেন, ফাইভস্টার হোটেলে যাওয়া মানুষকে দুশমন ভাবতেন, সেই মতিউরকে দেখা যায় ফাইভস্টার হোটেলের সুইমিং, জিম ও পানশালায়।

পরনে ব্র্যান্ডের টি-শার্ট ও হাফপ্যান্ট। বাপ নিজেই নয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকেও এখন বড় ব্যবসায়ী বানিয়েছেন। মতিউর দেশি-বিদেশি নানা মহলের সঙ্গে গভীর ষড়যন্ত্রেই লিপ্ত হননি পাকিস্তানি এক প্রখ্যাত সাংবাদিকের মাধ্যমে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও একটি পরোক্ষ সম্পর্ক গড়েছিলেন। সম্পর্ক কোন ধরনের তা জানা না গেলেও শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার অংশীদার জঙ্গি তাজউদ্দিনের সঙ্গে যে সম্পর্ক তা মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। যেখানেই স্বার্থসিদ্ধি হয় না সেখানেই নষ্টভ্রষ্ট কমিউনিস্ট মতিউরের হাতিয়ার হয়ে ওঠে কাশিমবাজার কুঠির দৈনিক প্রথম আলো।

মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর রুচিতে ঠাঁই না পাওয়ায় মতিউর তার পত্রিকা ব্যবহার করেছিলেন। স্পিকার আইনের পথ শক্তভাবে নিতে গেলে কমিউনিস্ট মতিউর আশ্রয় নেন উদার গণতন্ত্রী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর। মতিউর রহমান চৌধুরী ছিলেন হুমায়ুর রশীদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন। তাই নয়, খালেদা জিয়ার চারদলীয় জোটের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লেখার জন্য ২০০১ সালের আগে যে মতিউর রহমান মরহুম অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের গুলশানের বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতেন ডিকটেশন নেওয়ার জন্য। বিএনপি জোট শাসনামলে লতিফুর-মতিউরের স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় সাইফুর রহমানের গুষ্টিশুদ্ধ চরিত্রহননে নামেন তিনি।

জনগণের কাছে দুই নেত্রী, দুই পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রহননের ঝকঝকে অত্যাধুনিক প্রকাশনার এক ব্রডশিট বুকলেট হয়ে ওঠে অন্ধকার জগতের প্রথম আলো। নিরীহ, নিরহঙ্কারী, ভদ্র-বিনয়ী সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলে এই মতিউর রহমান হলুদ সাংবাদিকতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে 'বোমা মানিক' বানিয়ে প্রথম আলোয় নিরন্তর প্রচার চালান। মানিক যখন জেলে তখন তার শিশুসন্তানকে বলা হতো বাবা তোমার লন্ডনে। স্কুলে বাচ্চা ও মিসদের কাছে তার বাবা বোমা মানিক হয়েছিলেন, প্রথম আলোর গুণে। প্রথম আলো এভাবে দেশের একজন সংসদ সদস্যকে বোমা মানিক বানিয়ে আন্তর্জাতিক ময়দানে হাসিনাকে ছোট করেছিল।

ছোট করেছিল এ দেশের রাজনীতিকে। কিন্তু উচ্চ আদালত যখন সংসদ সদস্য মানিককে নিরপরাধ হিসেবে খালাস দিলেন তখন প্রথম আলো আর বোমা মানিক লিখল না। মতিউর রহমান মানিকে র চরিত্রহননের জন্য তার কাছে বা পাঠকের কাছে ক্ষমাও চাইলেন না। তাদের ষড়যন্ত্রের পথ উন্মোচিত হলো। মঞ্চে নাটক জমে উঠল।

ওয়ান-ইলেভেন এল হাঁকডাক করে। নেপথ্য কুশীলবদের সঙ্গে শয়তানের হাসি হাসলেন মতিউর রহমান। তখন তিনিই ওয়ান-ইলেভেন সরকারের থিঙ্কটাঙ্ক। তার পরামর্শ নেয় ফখরুদ্দীন সরকার। কে হবেন প্রেসসচিব, কে কোন মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন তা মতিউরই নির্ধারণ করতেন।

দিন-রাত নানা তৎপরতায় ব্যস্ত মতিউর শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে এ দেশের মাটি, মানুষ ও রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার পাকিস্তানি মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে জিহাদে নামেন। খালেদা জিয়ার সন্তানদের ওপর, ব্যবসায়ীদের ওপর, রাজনীতিবিদদের ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে না দেওয়া, খালেদা জিয়াকে জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়ে ঢাকায় লতিফুর প্রযোজিত মতিউর পরিচালিত প্রথম আলোর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় ঘটনা শুরু হয়। দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেনেহেঁচড়ে কারাগারে নেওয়া হয়। নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকেও।

মতিউর সেদিন লিখেছিলেন, 'দুুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে'। তিনি দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অগণতান্ত্রিক যুক্তি তুলে ধরে বলেন, 'সুস্থ ধারার সূচনা করতে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাড়াতাড়ি হলে দেশের জন্য মঙ্গল। ' সেদিন দুই নেত্রীর প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করে যারা ঘরে-বাইরে দুঃখ-বেদনা, ক্ষোভ, অশ্রু, আবেগ প্রকাশ করেছিলেন তারা অবাক বিস্ময়ে দেখলেন বহুরূপী মতিউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্পাদক কিংবা সাংবাদিকদের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়ে মেহমানের মর্যাদা দিয়ে চা পান করানো হচ্ছে। আবার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দরবারেও সিনিয়র সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় লাজলজ্জার খোলস ছেড়ে মতিউর দাঁড়িয়ে নসিহত করেন 'আপনারা হরতাল দেবেন না'।

হায় সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ! দুই নেত্রী জেল খাটেন। দুর্নীতির কলঙ্ক নেন। কারাগারে তাদের বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা হয়। রাজনীতিবিদদের রিমান্ড, জেল, নির্যাতন, মামলার মুখে পড়তে হয়। দুই নেত্রীর দুঃসময়ের পাশে থাকা বড় বড় ব্যবসায়ী জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন।

দুই নেত্রীর আত্মীয়স্বজনরা নির্যাতিত হন। কিন্তু ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের চলমান এক শয়তানের প্রতীক মতিউর রহমান ধরাছোঁয়ার বাইরেই নয়, রীতিমতো তাদের দুই নেত্রীর কাছাকাছি মাঝেমধ্যেই ডেকে নেওয়া হয়! টিভির পর্দায় দুই নেত্রীর কাছাকাছি মতিউরকে দেখে মানুষের মনে প্রশ্ন, জনগণের শক্তি দুই নেত্রীর চেয়েও কি লতিফ-মতিউর ক্ষমতাবান? কী তাদের ক্ষমতার উৎস? মাননীয় দুই নেত্রী মানুষের বড্ড জানতে ইচ্ছে করে_ আপনারা যখন কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়েছিলেন তখন কি মনে পড়েছিল বাইরে আপনাদের রাজনীতির কবর খুঁড়তে মতিউর রহমান কী করছিলেন। কাল পড়ুন সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে বায়তুল মোকাররমের খতিব মরহুম উবায়দুল হকের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মতিউর বলেছিলেন তওবা, তওবা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।