কমিউনিস্ট পার্টির মূল্যায়নে 'আত্মপ্রতারক' সেই মতিউর এখন কালের অন্ধকার গলির দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকই নন, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের চিহ্নিত খলনায়ক। মতিউর আবার মাঠে নেমেছেন। তার তৎপরতা বেড়েছে। নানা জায়গায় যখন তখন তার যাতায়াত ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জনগণের শক্তি উপেক্ষা করে রাজনীতির ময়দান থেকে নির্বাসিত করতে মাইনাস টু ফর্মুলার তত্ত্ব এনে জোরকদমে মাঠে নেমেছিলেন।
সেবার হেরে এবার নব উদ্যমে নেমেছেন।
এবারের টার্গেট শুধু দুই নেত্রী, রাজনীতিবিদই নন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের বারটা বাজানোর অ্যাসাইনমেন্টও সঙ্গে নিয়েছেন।
কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করার চেষ্টায় অভিযুক্ত মতিউরের বর্তমান ষড়যন্ত্রের আলামত এতটাই ভয়াবহ যে, তার পুরনো বন্ধুরা আজ-কাল তার সঙ্গে নৈশভোজের আড্ডায় বসতেও নারাজ। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেসব বন্ধু যারা রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত তারা তার টেলিফোনের নানা নিমন্ত্রণ ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
ষাটের দশকের ছাত্ররাজনীতির নায়ক বন্ধুরা আড়ালে-আবডালে তাকে 'শত্রু ভয়ঙ্কর' বলে ডাকেন। রসিকতার ছলে কিছুদিন আগে এক প্রখ্যাত সাংবাদিকের বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নৈশভোজে এক বন্ধুকে বলেছেন মতিউর ওয়ান-ইলেভেনে নায়ক হতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ভিলেন হিসেবে সমাজে চিহ্নিত হলেন। অপর বন্ধু বললেন, আমি তাকে বলেছি তুমি তো দুই নেত্রীর জন্য শত্রু ভয়ঙ্কর।
তাই নয়, কিছুদিন আগে একটি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনের এক অনুষ্ঠানে দুজন সম্পাদকের সঙ্গে মতিউর যখন খোশগল্পে মগ্ন তখন প্রাসাদ রাজনীতির জন্য খ্যাতি পাওয়া অনেক সরকারের মন্ত্রী এক রাজনীতিবিদ ডেকে এনে জানতে চাইলেন কী ভাই, এবার পরিবর্তন আনতে পারবেন? মতিউরের জবাব ছিল, 'আপনারা তো অন্দর মহল থেকে বের হয়ে আসেন না। পরিবর্তন হয় কীভাবে!' ওই রাজনীতিবিদকে আরেক রাজনীতিবিদ সতর্ক করে বলেন, 'ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়।
মতিউর সাহেব বারবার যান।
ওনাকে একাই খেলতে দিন। ঘষাঘষি করে নিজের সর্বনাশ ডেকে লাভ নেই। ' আরেক সম্পাদক বন্ধু মতিউরকে বলেন, 'দুই নেত্রীর ওপর অযথা রাগ করে নানা তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে লাভ কী? আল্লাহ দুই নেত্রীকে যেখানে রাজকপাল দিয়ে পাঠিয়েছেন সেখানে কপালে ইট ঘষে দেখুন নিজের ভাগ্য ঘোরে কি না। তাদেরকে তাদের জায়গায় থাকতে দিন।
আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন, দুনিয়ায় যেখানে কমিউনিস্টদের চরম পতন সেখানে আপনার কী নাটকীয় উত্থান। '
জানা যায়, দেশি-বিদেশি নানা শক্তি, তার দৈনিক ঘিরে তৈরি হওয়া তথাকথিত সুশীল সিন্ডিকেট মিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুকে নিয়ে এখন খেলছেন মতিউর রহমান।
এই সেই মতিউর রহমান যিনি ছাত্রজীবনের সোনালি সময় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্য ত্যাগের মহিমায় জীবন বাজি রেখে লড়েছেন আইয়ুবের বিরুদ্ধে, তখন তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মিষ্টি তরুণীর সঙ্গে গভীর প্রেমে মগ্ন থেকেছেন। বন্ধুরা রসিকতা করে বলেন, প্রেম করেছেন অনেকের সঙ্গে, ঘর করছেন আরেকজনের সঙ্গে। ছাত্র ইউনিয়ন করাকালে আলোচিত প্রেমিকাকে নেতার বাসরশয্যায় পাঠিয়ে আমুদে হেসেছেন তিনি।
এমন কমিউনিস্ট নাকি আসেননি পৃথিবীতে। তিনি সেই কমিউনিস্ট পার্টি করেছেন যে পার্টি করতে গিয়ে মণিসিংহ, বরুণ রায়ের মতো নেতারা বাপ-দাদার জমিদারি হারিয়ে রিক্ত-নিঃস্ব হয়েছেন।
সেখানে পল্টন মোড়ের মুচি গোপালের কাছে ছেঁড়া স্যান্ডেল সেলাই করিয়ে নেওয়া সেদিনের একতা সম্পাদক মতিউর এখন সাংবাদিক নন, দেশের অন্যতম ধনকুবের। সোভিয়েত পতনের মুখে গর্বাচেভ যখন সংস্কার প্রস্তাব দিলেন তখন লন্ডনে শায়িত মহান দার্শনিক কার্ল মার্কসের আত্মা ক্রন্দন করল। রুশ বিপ্লবের নায়ক কমরেড লেনিনের আত্মাকে অবমাননা করে মতিউর লিখলেন খোলা মন খোলা হাওয়া।
আর বুর্জুয়া গণতন্ত্রীরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখলেন ছাত্র ইউনিয়নের বালকদের হাতে পল্টনের কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে মতিউর কীভাবে লাঞ্ছিত হলেন। এই সেই মতিউর যিনি ধনিক গোষ্ঠীর লুটপাটের কাহিনী লিখে একপর্যায়ে এরশাদ জামানায় তা বই আকারে প্রকাশ করে বড়লোকদের ব্ল্যাকমেইল করার যাত্রা শুরু করেন। তার বন্ধুবান্ধব অনেকেই বলেন, সেকালের বামপন্থী কবিদের কবিতার নায়কদের যেভাবে কবিতায় পকেট শূন্য ছেঁড়া স্যান্ডেলের স্বপ্নবান পুরুষ হিসেবে দাঁড় করানো হতো,
একতা সম্পাদক মতিউর সেই ফ্যাশনের মুখোশ নিলেও অর্থনৈতিকভাবে কখনোই নাকি অসচ্ছল ছিলেন না। তার টাকা ভূতে জোগাত!
এই সেই মতিউর যার সম্পাদিত একতা পার্টির নিবেদিত কমরেডরা সারাদেশে বাড়ি বাড়ি হেঁটে শুভাকাক্সক্ষীদের কাছে বিক্রি করে টাকা নিতেন, কিন্তু এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের নির্মম সত্যটি হচ্ছে পার্টি তহবিলের হিসাব তার কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র একতা ছিনতাই করতে গিয়ে পার্টির প্রতি অনুগত কর্মী সাংবাদিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
একতা থেকে রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে এরশাদ পতনের পর নাঈমুল ইসলাম খানের সম্পাদনায় তারুণ্যের দৈনিক আজকের কাগজ বের হলে পাঁচ হাজার টাকার বেতনে সাত ইঞ্চি লেখার জায়গা চেয়ে তিনিও রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। ভোরের কাগজ বের হলে তিনিও সেখানে যোগ দেন। এ সময় তিনি নানা ষড়যন্ত্রে নাঈমুল ইসলাম খানকে বের করে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠাতা সংবাদকর্মীদেরও গুডবাই জানান।
সারাদেশের ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট, ন্যাপ করা মানুষের সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে তার মতো অগ্রসর হন। একপর্যায়ে মালিক সাবের হোসেন চৌধুরী নজরদারি বাড়ালে তিনি লতিফুর রহমানের আশ্রয় নেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী উলফার টাকায় প্রকাশিত প্রথম আলোর সঙ্গে শুরু হয় তার পথচলা। যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো_ এই স্লোগান নিয়ে মতিউর ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের পথে অগ্রসর হন।
দেশের রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিদের চরিত্রহননের নগ্ন উল্লাসে একদিকে যেমন মেতে ওঠেন তেমনি আরেকদিকে একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি মাওলানা তাজউদ্দিনকে নিয়ে প্রথম আলোর কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ফর্মুলা দেন।
এ যেন ইবলিশ শয়তানের সঙ্গে মিডিয়া শয়তানের গভীর সখ্যের বহুল আলোচিত নির্মম চিত্র ছাড়া কিছু নয়।
একুশে আগস্ট নিয়ে গোয়েন্দারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে একুশ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে রিপোর্টও দিয়েছেন গোয়েন্দারা। অনেকের প্রশ্ন, সরকার ও বিরোধী দলের চাইতে মতিউর রহমান অন্ধকার জগতের এমন কী শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন যে, কেউ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারছে না। অথচ তিনি একের পর খেলে যাচ্ছেন!
২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের হৃদয়হীন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিনকে দিয়ে জঙ্গি তাজউদ্দিনকে বাদল নামে পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন।
কেউ বলে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন সেকালের দুশ্চরিত্রের কমিউনিস্ট মতিউর একালের আইএসআইর অন্দরমহলের মেহমান!
তাই তো 'বদলে দাও বদলে যাও' স্লোগান তুলে তিনি এতটাই বদলে গেছেন যে, মানুষ তাকে বলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফার ঢাকার শেল্টার মতিউর রহমান। মতিউরের মালিক লতিফুর রহমানের কাছে উলফার তহবিল এমন খবর অনেক পুরনো। উলফার টাকা খেয়ে, আইএসআইর প্রেসক্রিপশন নিয়ে, ড. ইউনূস গংদের সঙ্গে নিয়ে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে আবার ষড়যন্ত্রের প্রাসাদ কুটীরে ব্যতিব্যস্ত মতিউর প্রকৃত পক্ষে কোন শক্তির দাস? কাল পড়ুন, 'মাননীয় দুই নেত্রী কারাপ্রকোষ্ঠে বসে মতিউরকে মনে পড়েছিল? চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।