আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

RAB এর নিষ্ঠুরতার শিকার এক HSC পরীক্ষার্থী

বিশেষ তেমন কিছুই আমার নেই। সাধারন একটা মানুষ আমি।

RAB এর নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় কান্নায় ভেঙে পড়ল লিমন হোসেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো উপযুক্ত কথা খুঁজে পাচ্ছিলেন না জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। কেঁদে ফেলেন তিনিও।

একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি এখনই, এই মুহূর্তে এ ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করুন। খুঁজে বের করুন, কে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যে এভাবে অস্ত্র প্রয়োগ করে একটি ছোট ছেলেকে পঙ্গু করে...। ’ আবেগে বাক্য আর শেষ করতে পারেননি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তবে নির্মম ঘটনা নিয়ে আগের মতোই বক্তব্য দিয়েছে RAB। RAB এর আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল গতকাল RAB সদর দপ্তরে টেলিভিশন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যেকোনো পক্ষের কেউ আহত বা নিহত হতে পারে।

কিন্তু আল্লাহর রহমতে কেউ নিহত হয়নি, একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ’ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেনের ছোট ছেলে লিমন। কাঠালিয়া পিজিএস কারিগরি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সে। গত ২৩ মার্চ বিকেলে লিমন মাঠ থেকে গরু আনতে বাড়ির বাইরে যায়। পথে স্থানীয় শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে RAB-৮-এর একটি দল তাকে সামনে পেয়ে শার্টের কলার ধরে নাম জিজ্ঞেস করে।

লিমন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু RAB এর এক সদস্য কথাবার্তা ছাড়াই তার বাঁ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে দেন। পঙ্গু হাসপাতালে আনলে চিকিৎসকেরা তার পা কেটে ফেলে দেন। এই নির্মমতার খবর গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দুই শতাধিক পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে ফোন করেন পত্রিকা অফিসে।

তাঁরা সবাই ঘটনার নিন্দা জানান, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন। লিমনের খবর জানতে সকালেই পঙ্গু হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে ছুটে যান গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকেই তাঁরা হতবাক হন ওয়ার্ডের দরজায় তালা দেখে। দুপুর পর্যন্ত কেউ সেখানে ঢুকতে পারেননি। দুপুরের দিকে সেখানে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

এরপর লিমনকে দেখতে পান গণমাধ্যমের কর্মীরা। ওই ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন আমিরুল ইসলাম জানান, সকালে পত্রিকা হাতে নিয়ে এক পুলিশ কনস্টেবল হাসপাতালে আসেন। এর পরই দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে ফোন আসতে থাকে। তাঁদের বলা হয়, আইজে ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে। লিমন যাতে কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফোনের নির্দেশমতো আইজে ওয়ার্ড থেকে অন্য সব রোগীর স্বজনকে বের করে দেয় পুলিশ। তারপর ভেতর থেকে দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হয়। ওয়ার্ডের অন্য রোগীর স্বজনেরা জানান, সকাল থেকে আসা গণমাধ্যমের কর্মীরা কক্ষের বাইরে অবস্থান করছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এসে দরজা খুলে দিতে বলেন। তাঁর সঙ্গে সংবাদকর্মীরা ভেতরে ঢোকেন এবং লিমনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান লিমনের কাছে জানতে চান সেদিন কী ঘটেছিল। লিমন তার ওপর RAB এর নির্মমতার পুরো বিবরণ দেয়। সে চেয়ারম্যানকে বলে, ‘স্যার, আমি জীবনে পিস্তল দেখিনি, আর এখন আমি অস্ত্র মামলার আসামি। আমার কপালে কালির দাগ লেগে গেল। ’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে তরুণ।

নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলেন না চেয়ারম্যান। তিনিও বারবার চোখ মোছেন। লিমনের সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলার পর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা সব বর্বরতাকে হার মানায়। পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজের কাছে এ ধরনের কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এভাবে আইন প্রয়োগ করেছে যে একজন ছাত্র পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি জানতে চান, অপরাধ সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে এভাবে গুলি করার অধিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কে দিয়েছে? তিনি এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানান। চেয়ারম্যান বলেন, ফিরে গিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে কমিটি গঠনের জন্য বলবেন। কমিশনের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।

লিমনের ওপর নির্মমতার খবর ছাপা হওয়ার পর সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঝালকাঠি ও রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামে যান। রাজাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন মাহমুদ বলেন, ‘লোকজনের কাছে শুনেছি, RAB একটি নিরীহ ছেলেকে গুলি করেছে। RAB এর কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতার জন্য এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। ’ ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির সদস্য মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবির বলেন, সরকারের কোনো বাহিনীকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন বলেন, অপরাধী হলেও কাউকে বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়া যায় না।

একজন তরুণ ছাত্রকে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম গতকাল ঝালকাঠির আদালতে গিয়েছিলেন মামলা করতে। এ জন্য তিনি একজন আইনজীবীও নিয়োগ করেন বলে জানা গেছে। লিমনের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি গতকাল RAB এর কর্মকর্তারা কয়েকজন টিভি সাংবাদিকের কাছে ব্যাখ্যা করেন। RAB এর আইন ও জনসংযোগ শাখার প্রধান এম সোহায়েল বলেন, ‘সব শীর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ থাকে।

ওই তথ্য ছিল আমাদের কাছে। আমাদের কাছে খবর ছিল তাদের কাছে অস্ত্র আছে। তাকে ধরতে গেলে একটা পর্যায়ে সে গুলি করে RAB সদস্যদের ওপর। RABও পাল্টা গুলি চালায়। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো পক্ষের যে কেউ আহত বা নিহত হতে পারে।

কিন্তু আল্লাহর রহমতে কেউ নিহত হয়নি। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। স্থানীয় লোকদের দ্বারাই সেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ’ ওয়ার্ডে তালা মারা থাকায় লিমনের বাবা তোফাজ্জল হোসেনও দুপুর থেকে ছেলের কাছে ঘেঁষতে পারেননি। কমিশনের চেয়ারম্যানের সুবাদে তিনি কক্ষের ভেতরে যান।

বিকেলে তিনি বলেন, ‘স্যার, এদ্দিন অভিযোগই করতে পারি নাই। এহন বোহে (বুকে) অনেক সাহস পাইছি। মুই এ্যার বিচার চামু। ’ RAB হইছে বইলা কি যা খুশী তাই করবে?? এটা কেমন আইন??? সকল সুনাগরিকের কাছে আমার প্রশ্ন??? : তথ্য সূত্র এখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।