This is my duty to expose the truth to all.
মূল: শায়খ ইমরান নযর হোসেন
অনুবাদ: মোঃ শিহাবউদ্দিন সাদী
বাস্তবতা এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন ইসরাঈলকে সমগ্র আরব বিশ্ব, পাকিস্তান ও ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পথ সুগম করে দিবে।
বর্তমান আরব গণজাগরণের কী ব্যাখ্যা হতে পারে, মুসলমানদের অনবরত এই জিজ্ঞাসার উত্তর, ইসলামি বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই অত্যন্ত সাবধানতার সাথে দিতে হবে। ঠিক যখন ইউরো-ইহুদী ইসরাঈল রাষ্ট্র ও তার কর্মকান্ডের বৈধতার প্রশ্ন আপাতদৃষ্টিতে প্রবল হচ্ছিল, তখনি বর্তমান আরব বিশ্বের একের পর এক ঘটনা অধিকাংশ মানবজাতিকে হতবাক করে দিয়েছে। তাই এই বিষয়ে লেখার সময় যথেষ্ট সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ইসরাঈলের সুবিধাজনক অবস্থান এখন হুমকির মুখে পড়ে গেছে, কিন্তু আসলে এরই ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতা।
অবশ্যই এই গণজাগরণের ভিতর দিয়ে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে, তবে ঠিক এখনি এর পিছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে তা আলোচনা করার দরকার নেই, কারণ ইতোমধ্যেই ক্রুসেডরত পাশ্চাত্য মিডিয়া নির্লজ্জ ও বেপরোয়া আক্রমণের মাধ্যমে সেটাই প্রকাশ করে দিচ্ছে যা অনেকে আগেই সন্দেহ করেছিল।
উপরন্তু মিশর, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, হেইতি ও অন্যান্য দেশের অবর্ণনীয় দারিদ্রের পিছনে পাশ্চাত্যের যে অশুভ রিবা (সুদ) ব্যবস্থা কাজ করছে, তা এখন মুসলমানরা ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছে। আরবদের বর্তমান আন্দোলনের পিছনেও এই সীমাহীন দারিদ্রের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
আমাদের অবশ্যই সেই সকল তিউনিসীয় ও মিশরীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত, যারা সাহসিকতার সাথে নিষ্ঠুর ও জালিম শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাকি পৃথিবীর সামনে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সুযোগে অবশ্যই আমাদেরকে সকল ফেরকাবন্দি বিভেদ ও আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ইসরাঈলের উৎপীড়নের বিরুদ্ধে চুড়ান্তভাবে একতাবদ্ধ হতে হবে। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম (বিশেষভাবে আরব) প্রাণ হারাবার পরই আমরা ইসরাঈলের উৎপীড়নের অবসান ঘটাতে পারব।
তারপরও সকল অবশ্যম্ভাবী ক্ষতিকে মেনে নিয়ে আমরা এই সংকল্প থেকে পিছপা হবো না, কারণ আমরাই সেই “উম্মাহ” যাদেরকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার এবং অসত্য ও অন্যায়কে রম্নখে দাঁড়াবার (অর্থাৎ আম্র বিল্ মা‘রুফ ওয়ান-নাহি ‘আনিল-মুনকারের) মহান দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এই লেখাটি রচিত হয়েছে ভেনিজুয়েলার মনোহর শহর কারাকাসে বসে। এতে চেষ্টা করা হয়েছে বর্তমান মুসলিম গণজাগরণের সঠিক ইসলামি ব্যাখ্যা দিতে; এবং তার বিপরীতে ইহুদী-খ্রিষ্টান যায়োনিষ্ট সমর্থকদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে।
মুসলমানরা তাদের ধর্মগ্রন্থসমূহের মাধ্যমে অবগত রয়েছেন যে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র আদেশে ভুয়া নবী দাজ্জাল এবং তার আগাম বাহিনী ইয়াজুজ ও মাজুজ ধ্বংস হবে, এবং সেই সাথে প্রতারক রাষ্ট্র ইসরাঈলের ভাগ্যের ফয়সালা হয়ে যাবে। এবং তারা এও জানেন যে, একমাত্র সত্য নবী ঈসা (আঃ)-ই ভুয়া নবী দাজ্জালকে হত্যা করতে পারবেন; এবং স্বয়ং আল্লহ্ই ইয়াজুজ ও মাজুজকে ধ্বংস করতে পারবেন।
আরব মুসলমানরা বিশেষভাবে জানেন যে, মরিয়ম তনয় ঈসা (আল্লাহ্ তাদের দুজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত করুন) পৃথিবীতে ফিরে না আসা পর্যনত, তাদেরকে আরও অনেক বেশী অত্যাচার ও জুলুম সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাদের চরম উৎপীড়ক ইহুদীরা নিজেদেরকে আল্লাহ্-র “নির্বাচিত গোষ্ঠী” মনে করে। তারা (এবং সেই সাথে আণবিক শক্তিসম্পন্ন রাশিয়া ও চীন) সারা পৃথিবীর উপর শাসন করার জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছে। তবে বর্তমানে যে সকল অতি পরিচিত উৎপীড়কদেরকে চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, তলে তলে ইসরাঈলের স্বার্থরক্ষাই তাদের আসল উদ্দেশ্য।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানি দিতে প্রত্যাদিষ্ট হন।
সেই ঘটনার মধ্যে নিহিত রয়েছে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরদের (অর্থাৎ আরবদের) কুরবানির দৈব-বাণী। মনে হচ্ছে, বর্তমান আরব অভ্যুত্থান সেই পূর্বনির্ধারিত কুরবানির প্রস্তুতি পর্ব। তবে যে মুসলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, সে কখনো মৃত্যুকে ভয় পায় না।
পাঠকের এবিষয়টি জানা নাও থাকতে পারে, তাই বলতে হয় যে, ইসরাঈল মনে করে যে তারা মানবজাতির জন্য আল্লাহ্র বাছাই করা ত্রাণকর্তা। সেই মিথ্যা দাবীর ভিত্তিতে, আরব অঞ্চলসহ সারা পৃথিবীতে তারা রাজত্ব কায়েম করতে চায়।
এই কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে, ভুয়া নবী (অর্থাৎ দাজ্জাল) অধিকৃত জেরম্নজালেমে সমাসীন হয়ে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত সত্য-নবী বলে দাবী করতে পারবে।
আমরা “পবিত্র কুর’আনে জেরুজালেম” (২০০২ সালে প্রকাশিত) গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম, যেখানে তিনি বলেছেন: ভুয়া নবী দাজ্জাল (শৃঙ্খলমুক্ত হবার পর) পৃথিবীতে চল্লিশ দিন থাকবে, যার এক দিন হবে এক বছরের মত, এক দিন হবে এক মাসের মত, এক দিন হবে এক সপ্তাহের মত, আর বাকি দিনগুলি হবে তোমাদের দিনগুলির মত - (সহীহ মুসলিম)। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছিলাম যে, দাজ্জালের এক বছরের মত প্রথম দিন-কে চিহ্নিত করা যায় Pax Britannica, অর্থাৎ পৃথিবীব্যাপী ব্রিটিশ আধিপত্য হিসাবে। এই সময় ব্রিটেনের আবির্ভাব হয় তিনটির মধ্যে প্রথম ত্রাতা-রাজ্য বা messianic ruling state হিসাবে। একইভাবে দাজ্জালের এক মাসের মত দ্বিতীয় দিন-কে চিহ্নিত করা যায় Pax Americana, অর্থাৎ পৃথিবীব্যাপী মার্কিন আধিপত্য হিসাবে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় ত্রাতা-রাজ্য হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়।
আমরা আরও সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে, ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় এখন এক সপ্তাহের মত তৃতীয় দিন শুরু হয়ে গেছে, এবং অতি শীঘ্রই Pax Judaica, অর্থাৎ পৃথিবীব্যাপী ইহুদী আধিপত্য দৃষ্টিগোচর হবে, যখন সুচতুর প্রতারক ইসরাঈল-রাষ্ট্র, তৃতীয় বা সর্বশেষ তথাকথিত ত্রাতা-রাজ্য হিসাবে সক্রিয় হবে।
আমাদের মতে, ঠিক যেমন ধোকাবাজি করে ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাউন্ড স্টার্লিং ও মার্কিন ডলার-কে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় পরিণত করে সারা বিশ্বে তাদের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছিল, তেমনি ইসরাঈল, electronic money, অর্থাৎ অদৃশ্য মুদ্রা প্রচলিত করে আন্তর্জাতিক মুদ্রাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করবে। বলা বাহুল্য, এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে যায়োনিষ্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার হাতে। তথাকথিত ইসলামিক ব্যাংকগুলি বিনা বাক্যে এই পরিষ্কার ধোকাবাজ অর্থব্যবস্থার পক্ষে কাজ করবে। আমি এখন পর্যন্ত কোনো ইসলামিক ব্যাংক পাইনি, যেখানে দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও দিরহামকে (রৌপ্যমুদ্রা) অর্থ হিসাবে প্রচলনের পক্ষে ন্যূনতম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আমরা যুক্তি দেখিয়েছি যে, সারা বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে মহাযুদ্ধের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ হত্যা করেছিল, ঠিক একইভাবে ইসরাঈলও সারা বিশ্বে রাজত্ব করার উদ্দেশ্যে ভয়ঙ্কর মহাযুদ্ধের সূচনা করবে যা পূর্বের চেয়ে আরো অনেক বেশী মানুষের (প্রধানত আরবদের) মৃত্যুর কারণ হবে। তাছাড়া, যতক্ষণ পর্যন্ত ইহুদীরা তাদের তাওরাতে বর্ণিত (যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট) সীমানাকে নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের ভূমিকে দাউদ (আঃ) ও সোলায়মান (আঃ)-এর পবিত্র ইসরাঈল বলে কোন যৌক্তিক দাবী পেশ করতে পারছে না। অতএব, সেই লক্ষ অর্জনের উদ্দেশ্যে তারা আরবদের উপর শোষনের মাত্রা বাড়াতেই থাকবে।
আমরা ২০০২ সালে সিডনী শহরে “১১ই সেপ্টেম্বরের উপাখ্যান - মুসলমানদের ভবিষ্যত কোন্ দিকে মোড় নিচ্ছে” শিরোনামে এক বক্তৃতায় বলেছিলাম, ইসরাঈলের এই যুদ্ধগুলি শুরু করার পথে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ও পাশাপাশি ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনা, এদুটিই বড় ধরনের বাধা, যা ইসরাঈল অবশ্যই ধ্বংস করতে চায়। অবশ্য, তখন আমরা এটা শনাক্ত করতে পারিনি যে, ইসরাঈলের ভিতরে ও চারপাশে অবস্থিত তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন আরব জনগণও একটি বড় বাধা, যাদেরকে অবশ্যই তারা অপসারণ করতে চাইবে।
বর্তমান এই রচনার মূল বিষয় হলো আরবদের অভ্যুত্থান, (সেটা স্বতস্ফূর্ত হোক বা নাই হোক)। এই অভ্যুত্থান অতি সন্ত্বর্পণে ইসরাঈলকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে যার অপেক্ষায় তারা রয়েছে। এই সুযোগ হাতে পেয়ে তারা আত্মরক্ষার নৈতিক অধিকারের ধুয়া তুলে শুরু করবে আরব গণহত্যা।
পাশ্চাত্য সমর্থিত স্বৈরশাষক মিশরের হোসনী মোবারক ও তিউনিসিয়ার বেন আলীর মত ঘৃণিত নেতারা আরব বিক্ষোভের সামনে নতি স্বীকার করেছে। এই অবস্থা স্বাভাবিক হবার আগেই সৌদি আরব, ইয়েমেন, জর্ডান, লিবিয়া ইত্যাদি দেশের নেতৃবর্গ, যারা হয় অনেক দিন ধরে রাজত্বে বহাল রয়েছেন, অথবা পশ্চিমা পরাশক্তির সামনে হাঁটু ঠেকিয়ে দিয়েছেন, একই পরিণতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন।
আর যখন লিবিয়ার মত কোন সরকার বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন পশ্চিমা বিশ্ব শুধু শাষকগোষ্ঠিকে সরানো নয়, লিবিয়ানদের অন্যান্য বিষয়েও নির্লজ্জভাবে হস্তক্ষেপ করে চলেছে।
আরব বিদ্রোহের লক্ষ্য সকল শাষকগোষ্ঠি; তারা খোলাখুলিভাবে পশ্চিমা সমর্থিত হোক বা নাই হোক। অতএব সামগ্রিকভাবে আরব বিক্ষোভে রয়েছে স্বাধীনতার নতুন দিগন্তকে উন্মোচিত করার অঙ্গীকার, যেখানে তারা তাদের পছন্দের শাষককে নির্বাচিত করতে পারবে। এই অঙ্গীকার রক্ষা হয় কিনা তা দেখার জন্য আমরা অবশ্যই অপেক্ষা করব।
আমরা আরো একবার জোর দিয়ে বলতে চাই যে, মুসলিম গবেষকদের জন্য এটা জানাটা গুরম্নত্বপূর্ণ নয় যে কারা পর্দার অন্তরাল থেকে গোপন অভিসন্ধি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন, কারণ লিবিয়াকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমাদের মরিয়া হয়ে উঠা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়।
বরং এটা বুঝতে হবে যে, মিশর ও তিউনিসিয়ার নিপীড়িত আরববাসী শোষনের বিরুদ্ধে তাদের জাগরণের অধিকার ব্যক্ত করেছেন, এবং শোষন থেকে মুক্তি চেয়েছেন। যেহেতু ইসরাঈল সব শোষকদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস, তাই এটা অনুধাবন করা আমাদের জন্য কঠিন নয় যে, এই নতুন রাজনৈতিক স্বাধীনতা এমন সব সরকারের উত্থান ঘটাবে যারা হবেন ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং ইসরাঈল-বিরোধী। ইতোমধ্যে ‘আল-কুদ্স’ (জেরুজালেম) অভিমুখে যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি ব্যক্ত করে বিভিন্ন আরব রাজপথে স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
আপাতদৃষ্টিতে এই নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন ইসরাঈলের নিরাপত্তার, এমনকি টিকে থাকার, প্রতি হুমকিস্বরুপ মনে হতে পারে। বাস্তবিকভাবে আমি মনে করি, পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের সংবাদ যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে (যখন তারা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করার কাজ থেকে বিরতি নিবে) আরব বিদ্রোহকে ইসরাঈলের অস্তিত্বের প্রতি এযাবতকালের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে দাঁড় করাবে।
সম্মানিত পাঠক! এটা জেনে রাখবেন যে, এই বিষয়ে বাহ্যিক দৃশ্য আর বাস্তব সত্য একে অপর থেকে সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন হতে পারে। এই মুহূর্তে ইসরাঈল এবং তার ইহুদী-খ্রিষ্টান যায়োনিষ্ট সমর্থকরা খুবই আনন্দিত। তারা সক্রিয়ভাবে সদ্য সঙ্ঘটিত আরব বিদ্রোহকে সমর্থন করছে, এবং অন্যান্যদেরও (যেখানে এখনো বিদ্রোহ দেখা দেয় নি) পতনের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। পাঠক স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হবেন যে, কেন ইসরাঈল পশ্চিমা সমর্থিত মিশর ও তিউনিসিয়ার প্রধানদের পতনে খুশি, তথা কেন তারা সৌদি শাষকবর্গের একই পরিণতির জন্য আকুলভাবে অপেক্ষা করছে, যদিও উইকিলিক্স ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে যে, সৌদিরা ইরানের উপর চড়াও করার জন্য ইসরাঈলকে তার আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে? বস্তুত, কেনই বা উইকিলিক্স সৌদি ও ফিলিস্তিনি (যার প্রধান মাহমুদ আব্বাস) পশ্চিমা সমর্থিত শাষকবর্গের কার্যকলাপকে বিদ্বেষপূর্ণভাবে ফাঁস করে দিচ্ছে, যা তাদের অস্তিত্বের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে?
বাস্তবতা এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন শীঘ্রই ইসরাঈলকে সমগ্র আরব বিশ্ব, পাকিস্তান ও ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পথকে সুগম করে দিবে।
মিশরীয় সৈন্যবাহিনী, যারা সন্দেহজনকভাবে অনুগত থেকে মিশরের বিদ্রোহকে সমর্থন করেছে, তাদের কাছ থেকে এখন সম্ভবত একটি সন্দেহজনক মুক্ত ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন আশা করা যায়, যার মাধ্যমে মিশরের “ইসলামিক আন্দোলন” রাষ্ট্র শাসন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
আর যদি তা হয়ে যায়, তাহলে ঘটনাবলী এমন মোড় নিবে যখন ইসরাঈল দাবি করতে পারবে যে, মিশর তাদের ইহুদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তথাকথিত “সন্ত্রাসবাদী” হামাসের সহায়তা করছে। তখন গাজার শত্রুভাবাপন্ন আরব অধিবাসীদের উপর ইসরাঈল আরেকটি বর্বর পাল্টা-আক্রমণ চালাবে, যার ফলস্বরূপ সকল গাজাবাসী মিশরে যেতে বাধ্য হবে, যা মিশর প্রতিহত করবে পারবে না।
আমরা যদি এই একই চিত্রকে বর্ধিত করে সমগ্র আরব অঞ্চলের উপর প্রয়োগ করি, তাহলে অনুমান করতে পারব, ইসরাঈল আক্রমণাত্মকভাবে সমগ্র বিশ্বকে বোঝাবে যে, আরবরা এখন ইউরো-ইহুদী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। (যদিও এটা সেই বিদ্রোহের ফলাফল যাকে ইসরাঈল এবং তার পশ্চিমা বন্ধুরা উৎসাহ ও সমর্থন দিয়েছে)। তখন এই অজুহাতকে ব্যবহার করা হবে যুদ্ধের বৈধতা হিসাবে, যার মাধ্যমে ইসরাঈল তার ধর্মগ্রন্থে (মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে) বর্ণিত পবিত্র ভূমির সীমানা পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্যকে বর্ধিত করার চেষ্টা করবে।
যদি ইসরাঈল এই ধরনের যুদ্ধ শুরু করতে পারে, এবং তাদের ইচ্ছাকে বিতাড়িত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত আরবদের উপর চাপিয়ে দিতে সমর্থ হয়, তাহলে তারা সমগ্র বিশ্বকে শাসন করার রক্তমাখা লক্ষ্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
কিন্তু মূল সত্য হলো, ইসরাঈলের প্রতি হুমকি বা আক্রমণ মুসলিম বিশ্ব থেকে আসবে না, বরং তা আসবে উত্তরে অবস্থানকারী “মাজুজ”-দের পক্ষ হতে: মাবুদ আমাকে বলেছেন, “এই দেশে (অর্থাৎ পবিত্র ভূমি জেরুজালেমে) তাদের সকলের উপরে উত্তর দিক থেকে বিপদ বন্যার মত বেগে আসবে। আমি উত্তর দিকের রাজ্যগুলোর সমস্ত জাতিকে ডাক দিচ্ছি। ” - ইয়ারমিয়া ১:১৪-১৫। [কিতাবুল মোকাদ্দস, পৃ-১০৮৯, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ]।
আমার লেখা An Islamic View of Gog and Magog বইয়ে (দেখুন আমার ওয়েবসাইট, http://www.imranhosein.org), আমি রাশিয়ার নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চলের জোটকে পবিত্র কুর’আনে বর্ণিত “মাজুজ” বলে চিহ্নিত করেছি। বর্তমানে রাশিয়ার চারপাশে ন্যাটো বলয়ের ক্রমবিস্তার এটাই প্রমান করে যে, ইহুদী-খ্রিষ্টান যায়োনিষ্টরা, যারা এখন লন্ডন, ওয়াশিংটন ও জেরুজালেম থেকে সারা পৃথিবীর উপর শাসন করছে, উত্তর দিক থেকে আসতে পারা এই বিশাল আক্রমণ সম্পর্কে সমপূর্ণরূপে অবগত আছে। তা সত্ত্বেও, তারা সমগ্র মানবজাতিকে এই বুঝিয়ে ধোকা দিচ্ছে যে, মুসলিম মিশর, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন ও অন্যান্য আরব অঞ্চলের জনপ্রিয় গণজাগরণ ইসরাঈলের জন্য সম্ভাব্য সকল হুমকির মধ্যে সবচেয়ে বড় - এই চালাকি তাদের জন্য বয়ে আনবে সেই তথাকথিত আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের পর্যাপ্ত বৈধতা।
পবিত্র কুর’আন সতর্ক করে দিয়েছে যে, শত্রুপক্ষ পরিকল্পনা করে, তার বিপরীতে মহান আল্লাহ্ তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা করেন, এবং আল্লাহ্র পরিকল্পনাই জয়লাভ করে। মহান আল্লাহ্ তাঁর কি পরিকল্পনা তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন: একদিন তিনি ইয়াজুজ ও মাজুজকে একে অন্যের বিরম্নদ্ধে এক প্রচ- মহাযুদ্ধে লিপ্ত করবেন।
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
অর্থাৎ “আমি সেদিন তাদের এক দলকে আরেক দলের উপর তরঙ্গের আকারে (প্রচন্ডগতিতে) ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে (অর্থাৎ প্রতারক রাষ্ট্র ইসরাঈলের ধ্বংসের ঘোষণা দেয়া হবে)। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব (অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার আদেশে তাদের চূড়ান্ত ধ্বংসের জন্য)। ” - (সূরা আল-কাহাফ, ১৮:৯৯)। [লেখকের ভাষ্য ব্রাকেটের মধ্যে দেয়া হয়েছে]।
ইয়াজুজ-মাজুজদের পারমাণবিক মহাযুদ্ধ, যাতে অধিকাংশ মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে, ইহুদী-খৃষ্টানদের eschatology-তে অর্থাৎ পরকালতত্ত্বে Battle of Armageddon (শুভ ও অশুভ শক্তির শেষ যুদ্ধ) হিসাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা রয়েছে।
পারমাণবিক বিস্ফোরণে সৃষ্ট mushroom বা মেঘরাশী যা পৃথিবীকে ঢেকে ফেলবে, সম্ভবত সেই “দুখান” (ধোয়া) যার বর্ণনা শেষ সময়ের একটি চিহ্ন হিসাবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দিয়েছেন। (এ সমপর্কে আমার ওয়েবসাইটে দেখুন “Ten Major Signs of the Last day – Has One just occurred?”) সেই লেখায় চিহ্নিত করা হয়েছে ধূর্ত প্রতারক ইসরাঈল-রাষ্ট্র ও তার সমর্থকদেরকে, যাদের পরিকল্পনাকে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা দ্বারা প্রতিরোধ করা হবে। বর্তমান নাটকীয় আরব বিদ্রোহের বিপরীতে ইসরাঈলের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, সেটা বুঝার জন্য (এই লেখার মাধ্যমে) আমরা সেই context বা প্রসংগকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
উত্তর দিক থেকে আসা মাজুজদের আক্রমণের ফলে ইসরাঈলের ভাগ্য কি হবে, তা আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি। তারপরও পাঠকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী।
তিনি বলেছেন: মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তাদের পরাজিত করবে। অর্থাৎ, মাজুজদের হাতে ইসরাঈলের সামরিক শক্তি বিধ্বস্ত হবার পর, মুসলমানরাও তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, এবং তাদেরকে পরাজিত করবে। নবী (সঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী এটা সকলের কাছেই পরিস্কার যে, ওই সময় ইহুদীরা পলায়নরত অবস্থায় থাকবে এবং তারা প্রাণ রক্ষার জন্য গাছ ও পাথরের পিছনে লুকাবার চেষ্টা করবে।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “ততদিন পর্যন্ত শেষ সময় অর্থাৎ কেয়ামত আসবে না যতদিন পর্যন্ত না মুসলমানরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ইহুদীরা পাথর অথবা গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকবে।
তখন পাথর অথবা গাছ বলবে: হে মুসলিম, অথবা হে আল্লাহ্র বান্দা, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে রয়েছে, আসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু গ্বারক্বাদ বৃক্ষ তা বলবে না, কারণ এটা ইহুদীদের বৃক্ষ। ” (সহীহ মুসলিম, কিতাব আল-ফিতান ওয়া আশরাত আস-সা‘আ, খ- ৪১, হাদিস নং ৬৯৮৫)।
পাঠকের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত না যে, এখানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সকল ইহুদীদের কথা বলেছেন। বরং এখানে তিনি শুধু সেই সকল ইহুদীদের কথাই বলেছেন, যারা উৎপীড়নের সাথে জড়িত।
তাদেরকে সেই উৎপীড়নের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।
পৃথিবীতে অনেক ইহুদী রয়েছেন যারা ইসরাঈলের অবিচার ও শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জনসম্মুখে একে অভিযুক্ত করার পাশাপাশি শোষন ও অবিচার থেকে মুক্তির সংগ্রামকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন করছেন। এই সকল ইহুদীবর্গ এবং আরও যারা শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, তারাই হচ্ছেন সেই সকল আরব মুসলমানদের সম্ভাব্য মৈত্রী, যে আরবদের বিদ্রোহের মাধ্যমে মিশরের হোসনি মোবারক ও তিউনিসিয়ার বেন আলীকে সফলভাবে ক্ষমতাচ্যূত করা সম্ভব হয়েছে। শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর এই সাহসিকতার জন্য আমরা তাদের সালাম জানাই। এখনো প্রচুর মুসলিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, এমনকি আমার স্বদেশ ক্যারিবিয়ান দ্বীপ ট্রিনিডাডে রয়েছেন, যাদের উচিত সাহসিকতা ও চারিত্রিক বলিষ্ঠতার সাথে শোষকসমাজ ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর এই উদাহরণকে অনুসরণ করা।
সেই যুদ্ধ শুরু হবার আগে মধ্যকালীন অবস্থাঃ
এটা খুবই সম্ভব যে, আরব-ইসরাঈল মহাযুদ্ধ শুরু হবার এখনও দেরী আছে, অর্থাৎ আমাদেরকে এখনও বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত যে, বর্তমান বিদ্রোহ যে সকল নতুন সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে, ভন্ড নবী দাজ্জাল এই মধ্যকালীন সময়ে সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আরব জীবনে ইসলামের যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাও ধ্বংস করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাবে। এটা সহজেই অনুমেয় যে, এই নতুন স্বাধীনতা, দ্রুত একটি ধর্মহীন স্বাধীনতায় পরিণত হতে পারে, যেখানে অবৈধ বলে কিছুই থাকবে না, অর্থাৎ সব কিছুই অনুমতিযোগ্য হয়ে যাবে। এই অবস্থায় শুধুই যে “মহিলারা পোশাক পরেও নগ্ন” থাকবেন তাই নয়, বরং “দিন, দিনের সাথে মিলিত হবে” এবং “রাত, রাতের সাথে মিলিত হবে”। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বায়নের নতুন জোয়ারে স্রষ্টাবিবর্জিত বিশ্বসমাজে আরব শহরগুলিও সম্পূর্নভাবে মিশে যাবে।
এখানে অবশ্য আরেকটি সম্ভাবনা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তা হলো: ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে বৈকি, কিন্তু তারা সূদ বা রিবা-ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোনো ফলপ্রসু মোকাবিলা করতে সমর্থ হবে না, এবং সেই কারণে গরীব জনগণের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হবে, এবং সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। আর একটি সমস্যার কথা বলাই বাহুল্য। আর তা হলো, ইসলামিক খিলাফত কায়েমের সকল প্রচেষ্টাও কঠিন বাধার মুখে পর্যুদস্ত হবে।
মুসলমানরা এই সময় কি করতে পারে?
মুসলমানদের প্রধান করণীয় হলো, তারা যেন নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি অর্জনের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টাকে কখনই থামিয়ে না দেয়। এই মানসিকতা ধরে রাখার জন্য সৎ সাহচর্য বজায় রাখতে হবে।
পবিত্র কুর’আনের সুরা আল-কাহাফে উপদেশ দেয়া হয়েছে, যেন তারা অবশ্যই সবসময় মহান আল্লাহ্র সত্য বান্দাদের খোজ করে এবং তাদের সাহচর্য বজায় রাখে।
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
“তুমি নিজকে ধৈর্য সহকারে উহাদেরই সংসপর্শে রাখিবে যাহারা সকাল ও সন্ধ্যায় উহাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁহার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করিয়া উহাদিগ হইতে তোমার দৃষ্টি ফিরাইয়া লইয়ো না। তুমি তাহার আনুগত্য করিও না, যাহার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করিয়া দিয়াছি, যে তাহার খেয়াল খুশির অনুসরণ করে ও যাহার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে। ” (আল-কুর’আন, সূরা আল-কাহাফ, ১৮:২৮)।
সুরা আল-কাহাফ আমাদেরকে স্রষ্টাবিবর্জিত সমাজ বর্জন করারও উপদেশ দেয়।
আর তা অর্জন করার সম্ভবত সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে, আধুনিক নগর জীবনকে বর্জন করে ছোট ছোট মুসলিম গ্রামে বসবাস করা। এ সকল গ্রামের হাটবাজারে স্বর্ণ-মুদ্রা বা দিনারের, ও রৌপ্য-মুদ্রা বা দিরহামের প্রচলন শুরু করা যেতে পারে।
তদুপরি, দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদের উচিত প্রত্যেক জুম্মার দিন নিয়মিতভাবে “সূরা আল-কাহাফ” তেলাওয়াৎ করা, এবং সুন্নতসম্মত দোয়াসমূহ পাঠ করা।
ইনশা-আল্লাহ, পরবর্তীতে এ সম্পর্কে আরো বিশদভাবে লেখার ইচ্ছা রইল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।