আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা লাগবে এইবারে আমাদের

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

আমাদের দেশের যে হাল, তাতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আমাদের সবাইই উম্মুখ থাকেন। তা উপজেলা চেয়ারম্যানই হোক, আর সংসদ সদস্যই হোক না কেন। আগেকার দিনে যা ছিল জমিদারি, এখনকার দিনে তাই হয়েছে স্থানীয় সরকার। ফলে গুণগতভাবে কোনই পরিবর্তন হয় নাই কোথাও।

যারা যে পদে নির্বাচিত হয়, তারা সেই পদকে বাপ-দাদার সম্পত্তি বলেই মনে করে। কেউই তাদের নির্বাচিত পদ এবং সে সাথে অর্পিত দায়িত্বকে জনগণের পবিত্র আমানত বলে মনে করেন না। আমাদের সংসদ সদস্যগণ মনে করেন যে তারা যে শুধু স্থানীয় জমিদারীই প্রাপ্ত নন, তারা একই সাথে দেশের ভালো-মন্দের দায়িত্ব প্রাপ্ত। তাই তাঁরা স্থানীয় সরকারকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবেই গণ্য করেন। তাই উপজেলা পদ্ধতি বহাল হলেও তা কার্যকর হতে পারে না।

এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা কিনা আমাদের স্থানীয় সরকার পদ্ধতিকেই প্রশ্নের সম্মুখিন করেছে। এই সব বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে একটু সংবিধান থেকে উদ্ধৃতি দিতেই হয়। না হলে পাঠকরা ভাববেন যে লেখক আইনকানুন তেমন জানেন না! তাই বলছি, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে' মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে। " আরো বলা আছে, [ অনুচ্ছেদ ৫৯(১) ] 'আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে। ' এর ব্যত্য় করা যাবে না।

এই বিধানাবলীর উপরে কোন সংশোধনীও আসে নি আজ পর্যন্ত। স্থানীয় উন্নয়নের জন্য 'বাকশাল'-এ প্রতিটি মহকুমাকে জেলা ঘোষনা করে তাতে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করা ছিল স্থানীয় প্রশাসনে সরকারী হস্তক্ষেপের প্রথম পদক্ষেপ। এরপরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে জেলা সমন্বয়কারী করে প্রতি জেলায় একজনকে দায়িত্ব দেয় দেশ উন্নয়ন সমন্বয় করতে। এরশাদ জমানার শেষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলাসহ তা বাতিল করা হয়।

এ সংক্রান্ত মামলার রায়ে উচ্চ আদালত স্থানীয় সরকার নির্বাচিত করার নির্দেশ দেয়। বিএনপি উপজেলা ও জেলা পরিষদ পুনর্বহাল না করলেও '৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে দীর্ঘ আলোচনা, মতবিনিময় শেষে উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য পুনর্বহাল করে। কিন্তু নানা কারণে তা আর হয়নি। বিএনপি জোট এসে নির্বাচন করতে পারেনি। ড. ফখরুদ্দীনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলা ও উপজেলা পরিষদে নিয়োগদানের তালিকা চূড়ান্ত করতে বললেও সাংবিধানিক কারণে তা করতে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা নির্বাচন করলেও তা ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যানরা আন্দোলনে। এখন শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক হিসাবে নির্বাচনের মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে মনোনীত প্রশাসক নিয়োগ দিতে আগ্রহী। এর পেছনে উনার ভয়েরও কারন আছে। পৌর ও উপনির্বাচনে হোঁচট খাওয়া শাসকদল এ মূহুর্তে বিরোধী দলের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির মুখে জেলা পরিষদ নির্বাচনও আয়োজন করবে না।

কিন্তু সংবিধান মোতাবেক তা হবার নয়। আমাদের মনে হয় আমাদের দেশে যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান আর সংসদ সদস্যদের ভেতরেই মারামারি চলছে, সেখানে কয়েকজন এমপির উপরে এমন করে জেলা প্রশাসক বসালে সেই গন্ডোগোল আরো বেড়া যাবে। ফলে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে দেশের ভেতরে দুঃখজনকভাবে হানাহানি আরো বেড়ে যাবে। তাই আমাদের প্রস্তাব হলো আমাদের আইনসভাকে দুই কক্ষ বিশিষ্ট করা উচিৎ। তাতে নিম্ন কক্ষে প্রতিনিধি হিসাবে থাকবেন উপজেলা চেয়ারম্যানগণ।

তারা প্রতি তিন বছর পর পর নির্বাচিত হবেন। তারা স্থানীয় উন্নয়ন দেখভাল করবেন, আর বছরের যে সময়গুলোতে আইনসভা অধিবেশনে থাকবেন, সে সময় অবশ্যই অধিবেশনে যোগদান করবেন। যতগুলো উপজেলা, অতগুলো প্রতিনিধি থাকবেন নিম্নকক্ষে। এমন কি অধিবেশন চলা কালে উপজেলা চেয়ারম্যানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ পালাক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসকগণ নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন বলে তারা উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধি হবেন।

তারা নিম্ন কক্ষে পাশ করা আইনগুলোকে ভেটিং করবেন। তাঁরা নতুন আইন তৈরীর প্রস্তাব নিম্ন কক্ষের নিকট পাঠাতে পারবেন। এ ছাড়া তারা সংখ্যায় কম বলে তাঁদের যে কোন সময়ে দ্রুত বৈঠকে বসার সুযোগ থাকবে। জরুরী আইন জারির ক্ষমতা এদের হাতে দেওয়া যেতে পারে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট দুই কক্ষের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন।

অথবা, এমনও করা যেতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী একে অপরের পার্টনার হিসাবে সরাসরি ভোটে জিতে আসতে পারেন, এবং তারা যে সরকার গঠন করবেন তা দুই কক্ষেই আলাদা আলাদা ভাবে অনুমোদিত হতে হবে। দুই কক্ষের প্রতিনিধিরাই নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধয়ায়কের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সেটা নিশ্চয়ই ঠিক করা এমন কঠিন কোন কাজ হবে না। এবং দুই কক্ষে নির্বাচিত হবার জন্য কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াই লাগবে, এমন কোন বিধান করা যাবে না। এতে করে সৎ বা কর্মবান লোকেরাও আইনসভাতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় এখানে আলোচনা করা হল না। কিন্তু প্রয়োজনে সে সব আলোচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর মত একটি উদ্ভট ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে, তা হলে স্থানীয় সরকার আর এমপিদের ভেতরে কাইজ্যা বন্ধের জন্য উপরের প্রস্তাবটি কি আলোচনা করা যায় কিনা তা পাঠকদের অনুরোধ করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।