দেশে আইন আছে অথচ আইন কার্যকর হয় না। যেন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে আইনের বইগুলোতে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা এবং সে বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে বন্দী থাকার বা রাখার জন্য। এভাবে বাংলাদেশ ক্রমেই আইনবিহীন দেশ বা ‘ল-লেস’ দেশে পরিণত হতে চলেছে।
ট্রাফিক আইনসহ নানা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাব প্রায়শ দৃশ্যমান হয়। কিন্তু প্রতিবছর অসহনীয়ভাবে যে বাড়ি ভাড়া বাড়ছে সেদিকে সহজে কারো নজর নেই।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেন কিছুই করার নেই- এমন একটা মনোভাব। ভাড়াটিয়াদের সুযোগ সুবিধার প্রতি বাড়িওয়ালার কোন নজর নেই। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাড়াটিয়াদের সুযোগ সুবিধা দিতে কার্পণ্য করেন। কিন্তু নানা অজুহাতে প্রতিবছরই বাড়িভাড়া বাড়াতে তাদের নেই বিন্দুমাত্র অনীহা! এমন নজিরও পাওয়া যায় যে, একই বাড়িতে বছরে দু’বারও ভাড়া বাড়ানো হয়। ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করলে ‘বর্ধিত হারে ভাড়া দিতে না পারলে আগামী মাস থেকে বাড়ি ছেড়ে দেন’ বলে সোজা মৌখিক নোটিশ দিয়ে দেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম তো আছেই, এমন কি জেলা ও উপজেলা সদর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোতেই চলছে এই অবস্থা। এভাবেই মালিক ভাড়াটিয়াদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি হচ্ছে; ভাড়াটিয়াদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ।
বাড়ি ভাড়া ও ভাড়াটিয়াদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়- পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস নিয়ে বাড়িওয়ালার সঙ্গে নিয়মিত ঝগড়াঝাটি হয়। বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর আগে অনেক কুশলী বাড়িওয়ালা পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে উঠবে বলে ফন্দি আঁটেন।
আত্মীয়স্বজন বাড়িতে এলে কিংবা কোনদিন বাড়ি ফিরতে রাত হলে বাড়িওয়ালার কটুকথা হজম করতে হয়। ভাড়া দিতে দেরি হলে ‘বাড়ি ছেড়ে দিন’ হুমকি শুনতে হয়।
জরিপের বাইরেও বলা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে অনেক বাড়িওয়ালা আছে যারা ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কোন চুক্তি করে না এবং বাড়ি ভাড়া নেয়ার কোন রসিদ দেয় না। সহজে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না বলে নিরুপায় হয়ে ভাড়াটিয়া এসব উপেক্ষা করে বাড়ি ভাড়া নিতে বাধ্য হন। এ ধরনের ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে বাড়িওয়ালাদের মোটেই অসুবিধা হয় না।
ভাড়া বাকি পড়ার অজুহাতে অনায়াসে ভাড়াটিয়াকে তুলে দিতে পারে। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন থাকার পরও সে আইনের সামান্যতম প্রয়োগ নেই বলেই এমনতর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুঃখজনক হলো, বেশির ভাগ ভাড়াটিয়া ও অনেক বাড়িওয়ালা আইনের অস্তিত্বের কথাও জানে না। আইনের প্রয়োগ না থাকলে যা হয়!
অবাক হওয়ার মতো তথ্য যে দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন আইনী কিতাবে থাকলেও নিয়ন্ত্রকের পদটিই রয়েছে শূন্য। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দু’টি আইন।
তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ হওয়ার আগে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে অধ্যাদেশ আকারে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১’ করা হয়। তাছাড়া রয়েছে ‘রেন্ট কন্ট্রোল’ বিভাগ। তারপরও নেই আইনের কোন প্রয়োগ।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের বিধান সাপেক্ষে কোন বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক করা হলে উক্ত অধিক ভাড়া চুক্তিতে ভিন্নরূপ কিছু থাকা সত্ত্বেও আদায়যোগ্য হবে না।
মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। এমনকি কোন চুক্তি থাকলেও তা কার্যকর হবে না। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে নিয়ন্ত্রক কোন বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এতসব থাকার পরেও ভাড়াটিয়াদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাড়িভাড়ার রসিদ প্রদান, বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ প্রদান, বাড়িভাড়ার চুক্তিসহ বিভিন্ন আইনী বিধান থাকলেও বাড়িওয়ালারা এসব বিধানের তোয়াক্কা করে না।
বরং ইচ্ছেমতো ভাড়া বৃদ্ধি, যখন-তখন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েই যাচ্ছে যাতে হাজার হাজার ভাড়াটিয়া অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। জনস্বার্থে বিশেষ করে মানবিকতা ও মানবতার স্বার্থেই সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের বিষয়টি নিয়ে ভাবা ও বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন। দেশে বসবাস করে দেশের আইন না মানা বা তোয়াক্কা না করা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার সামিল।
এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যাশা সরকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনতিবিলম্বে কার্যকর করতে, আইনের প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হবেন। প্রয়োজনে দু’দশক আগে প্রণীত আইনকে সময়োপযোগী করার জন্য সংসদে সংশোধন করতেও কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়।
সরকার ভাড়াটিয়াদের দুর্দশার কথা সভানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করলে কাজটি সহজতর হবে বলে আমাদের ধারণা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।