কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
৩
“হোয়াট! ”
“হ্যাঁ”।
“তার মানে ওটা আমি ছিলাম? ”
“হ্যাঁ”।
“কই আমার তো এরকম কিছুই মনে পড়ছে না! ঐ উঁচু বিল্ডিঙের উপর থেকে পড়ে যাওয়া, উড়াউড়ি, সাঁতার বা বিস্ফোরণ - কিছুই তো মনে পড়ছে না আমার! ”
“মনে পড়ছে না, কারণ ঐ স্মৃতি তোমার মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে”।
নিশু একটা ঢোক গিলে বলল, “পরাবাস্তবে বিস্ফোরিত হবার সময়ে আমি আসলেই ঐ অনুভূতি পেয়েছিলাম? সত্যি? কই আমার গায়ে তো কোন কাটাছেড়া নেই, কই আমার আঙ্গুল তো কাটা নয়, কই আমার পায়ে তো কোন গুলি লাগে নি...”
ভদ্রলোক বললেন, “আমি আগেও বলেছি সমস্ত অনুভূতি তোমার মস্তিষ্কের। Your body has nothing to do with it.”
নিশু হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
অনেক কষ্টে স্মৃতি হাঁতড়ে সে এই জাতীয় কিছু স্মৃতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। বলা বাহুল্য, স্মৃতির কালো অন্ধকার ঘেঁটে কিছুই পেল না সে।
নিশু জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা এই জায়গাটা কি? ”
“নদীর নিচে সিমুলেশনের বিশাল হেডকোয়ার্টারস”।
“এটা কোন দেশ? ”
“যেটাই হোক”।
“আপনি জানেন না? ”
“জানি”।
“আমাকে বলবেন না কেন? ”
“প্রটোকলে নেই”।
“কিসের প্রটোকল? ”
“সিমুলেশন প্রটোকল”।
ভদ্রলোক নিশুকে একটা বড় মাঠের সামনে নিয়ে এলেন। মাঠে দুটো দলের মধ্যে ফুটবল খেলা হচ্ছে।
নিশু বলল, “এরা কারা? ”
“তোমাদের বিনোদনের জন্য”।
“আমাদের? ”
“প্রতিযোগীদের”।
“সবার জন্য একই বিনোদন? সবার তো ফুটবল খেলা ভালো না-ও লাগতে পারে”।
“তোমার তো লাগে”।
“আমার লাগে? ” নিশু অবাক হয়ে বলল, “আপনি জানেন কিভাবে? ”
“জানি”।
“কিভাবে? ”
“তোমার সাইকোলজিকাল প্রোফাইল অ্যানালাইসিস করে”।
“And what is that supposed to mean? ”
“তোমার মস্তিষ্কের ডাটাগুলো বিশ্লেষণ করে”।
“আমার মস্তিষ্কের ডাটা বিশ্লেষণ.... দাঁড়ান দাঁড়ান, এটা তো সম্পূর্ণ অবৈধ! আর আপনি আমার মাথার মধ্যে ইন্টারফেসও ঢুকিয়েছেন? এগুলো তো ইলিগাল! ”
“না। লিগাল”।
“কিভাবে? একটা মানুষের অনুমতি না নিয়ে আপনি কিভাবে এগুলো করাকে বৈধ বলছেন? ”
“অনুমতি আমরা নিয়েছি”।
“কে দিয়েছে অনুমতি? ”
“তুমি”।
“আমি? আবারও অবাক হল নিশু, “কখন? কবে? কেন? ”
ভদ্রলোক তার পকেট থেকে একটা ছোট কার্ড বের করলেন। ওটা স্পর্শ করতেই একটা হলোগ্রাফিক নিশু ভোজবাজির মত উদয় হয়ে তাদের সামনে এসে বলতে লাগল, “আমি নিশু, স্বেচ্ছায় সিমুলেশনের একজন প্রতিযোগী হিসেবে নাম নিবন্ধন করলাম। আমার সাথে যা করা হবে তার সবই আমার অনুমতি নিয়েই করা হবে। সিমুলেশনের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, থাকবেও না”।
খেলার মধ্যবিরতির বাঁশি পড়ল।
খোলোয়াড়রা একে একে মাঠের বাইরে চলে আসতে লাগল।
নিশু বলল, “এটা তো সত্যি নাও হতে পারে। হয়তো আপনারা আমার মস্তিষ্কে ভুল ডাটা ইনপুট করে এইসব বলিয়ে নিয়েছেন। অথবা হয়তো এগুলো আমি বলিই নি। এটা হয়তো আপনাদের প্রোগ্রামেরই তৈরি করা অ্যানিমেশন”।
ভদ্রলোক বললেন, “তুমি বিশ্বাস কর আর না-ই কর আমাদের তাতে কিছু আসে যায় না। শুধু মনে রাখবে এই অনুমিতটার জোরেই তুমি আমাদের কাছে বন্দী”।
“আচ্ছা ধরুন আমি আপনাদের কথা শুনলাম না। পরের সিমুলেশনগুলোয় অংশ নিলাম না। তাহলে কি হবে? ”
“তাহলে তোমাকে মার্শাল ল-র মাধ্যমে সাররিয়েল ডেথ দেয়া হবে”।
“সাররিয়েল ডেথ? ”
“পরাবাস্তবে তোমাকে একশবার পুড়িয়ে মারা হবে”।
“না, না, আমি এখানে থাকব না”, চিৎকার করে বলল নিশু, “এখান থেকে বের হবার উপায় কি? আমি এখানে থাকব না, আপনারা সবাই পাগল......... আপনারা......”
“এখান থেকে বের হওয়া? নিশু, বাইরের পৃথিবীর সবাই জানে তুমি মৃত”।
“হোয়াট! ”
“হ্যাঁ”।
“কেন? ”
“সেটার গল্প পরে ম্যানুয়ালি তোমার মস্তিষ্কে ঢোকানো হবে”।
“আমি কিছু”, প্রচণ্ড অবাক ও আতঙ্কিত নিশু, “বুঝতে পারছি না”।
“জাস্ট এটুকু জেনে রাখো, তোমার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল”।
“হোয়াট! ”
“হ্যাঁ”।
“কেন? ”
“Because you killed your husband! ”
“হোয়াট! ”
“হ্যাঁ”।
নিশু মাথা ধরে মেঝেতে বসে পড়ে। তারপর বলে, “আমি ঘুম থেকে উঠে আবিস্কার করলাম আমি কে, আমি কোথায় - কিছুই জানি না।
এতক্ষণ আপনি আমাকে পরাবাস্তবের গাঁজাঘুরি শোনালেন। আর এখন বলছেন, আমি নাকি আমার হাজবেন্ডকে হত্যা করেছি। আবার আমার নাকি ফাঁসিও হয়েছিল। আপনি কি বুঝতে পারছেন how ridiculous are them to my ears?
ভদ্রলোক কাঁধ ঝাঁকালেন।
নিশু মাঠের দিকে তাকাল।
সেকেন্ড হাফের খেলা শুরু হয়েছে। হঠাৎ সে দেখল এক দলের একজন খেলোয়াড় বিপক্ষের ডিফেন্ডারের মাথায় এক হাত উপর দিয়ে লাফিয়ে উঠে ফুটবলে চমৎকার একটা শট নিল। আগুনের বেগে ধেয়ে গেল বল। গো-ও-ও-ও-ল।
নিশু অনেকটা ঠাট্টাচ্ছলেই বলল, “এত উঁচুতে লাফ দেয়া কি সম্ভব? আচ্ছা, এই খেলাটাও কোন সিমুলেশন নয় তো? ”
ভদ্রলোক বললেন, “হ্যাঁ।
এই খেলাটাও সিমুলেশন”।
নিশু প্রচণ্ড অবাক হয়ে মাঠের দিকে দৌড়ে গেল। একটু পরেই একটা বড় স্ক্রিনে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে।
ভদ্রলোক এসে তার পাশে দাঁড়ালেন।
নিশু অপ্রকৃতিস্থের মত বলল, “এটা বলবেন না যে আপনিও সিমুলেশন”।
ভদ্রলোক একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আসলে শুধু আমি না। তুমিও। এই মুহূর্তে তুমি একটা সিমুলেশন বা প্রোগ্রামের মধ্যে আছ, তোমার আশেপাশে যা আছে কিছুই সত্যি নয়”।
নিশু অবাক হয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। তার আশে পাশের পৃথিবী কেমন অদ্ভুতভাবে মুছে যেতে লাগল।
৪
“চমৎকার! চমৎকার! ”
মূলত চিৎকারটা শুনেই চোখ খুলে গেল নিশুর। উঠে সে দেখল বেশ খানিকক্ষণ আগে পরাবাস্তবে যে সাদা বিছানায় সে শুয়ে ছিল সেটাতেই এখন সে শুয়ে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটু আগে দেখা কোট টাই পরা ভদ্রলোক।
নিশু মাথা নাড়াতে গিয়ে টের পেল তার মাথার পিছনে কি যেন শক্ত করে বাঁধা। প্রবল ব্যথা।
নিশু আর্তনাথ করে উঠল ব্যথায়।
ভদ্রলোক তার চোখের দিকে তাকালেন। প্রবল হাসিতে উদ্ভাসিত হল তার মুখ। তিনি আবার বললেন, “চমৎকার! ওয়েলকাম ব্যাক, মিস নিশু! ”
নিশুর মাথার পিছন থেকে হ্যাঁচকা টানে কি যেন একটা জিনিস কে যেন বের করে ফেলল। ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠল নিশু।
তার ধীরে ধীরে মনে পড়তে লাগল সব।
“ডাটা রিআপলোড প্রোগ্রামটা কেমন ছিল? ” ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।
“কি প্রোগ্রাম? ”
“ডাটা রিআপলোড প্রোগ্রাম। তোমার মস্তিষ্কের মুছে ফেলা ডাটা পুনর্বার মস্তিষ্কে ঢুকানোর জন্য এই প্রোগ্রামটা তৈরী করা হয়েছিল। দারুণ কাজ করে কি বল? ”
নিশু চেষ্টা করে দেখল, তার আসলে সবই মনে পড়ছে।
সে কে, সে এখানে কেন, এটা কি জায়গা - সবই মনে পড়ছে তার।
সে নিশু। সে চাকরি করত একটা মেয়েদের স্কুলে। তার স্বামী ছিল মোটামুটি আয়ের একজন প্রোগ্রামার। সুখের সংসারই ছিল তাদের।
ভালোই কেটে যাচ্ছিল চখাচখীর দিনকাল।
হঠাৎ দুর্যোগ নেমে এল তাদের সুখের সংসারে। তার স্বামীর সঙ্গে পরিচয় হল চরম সুন্দরী জনৈক মহিলার। যে তার স্বামীকে বলা চলে নিশুর তার থেকে ভাগিয়েই নিয়ে গেল।
নিশুর পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এল।
সে শুনতে পেল তাকে নাকি তার স্বামী ডিভোর্স দেবার চিন্তাভাবনা করছেন। নিশু অনেক ভেবেচিন্তে বাপের বাড়ি চলে গেল, কিন্তু যাবার আগে নিজেদের বেডরুমে কিছু লুকোনো মাইক্রোফোন রেখে গেল। সে চলে যাবার পরদিনই তার স্বামী ও ঐ মহিলা তারই বেডরুমে মিলিত হল – সে মিলনের শীৎকার ঘৃণাভরে শুনল সে। তাদের কথা শুনে বুঝল, কালকে আবার হবে।
নিশু কাউকে কিছু না বলে সন্ধ্যার দিকে তাদের বাসায় গেল এবং রান্নাঘর থেকে বাটিটা নিয়ে শান দিয়ে বেডরুমের খাটের নিচে শুয়ে রইল।
রাতের দিকে তার স্বামী ও ঐ মহিলা বাসায় এল। একটু পরেই শুরু হল তাদের কামলীলা। নিশু চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগল।
শীৎকার শুনে নিশু রাগে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেল এবং তাদের চরম পুলকের সময় সে বিছানার নিচ থেকে বের হয়ে বটি দিয়ে কুপিয়ে দুজনেরই ধড় থেকে মাথা আলগা করে দিল। অতঃপর সে তার স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে মহিলার হাতের মধ্যে ধরিয়ে পুলিশকে একটা ফোন দিল।
পুলিশ এসে যখন তাকে গ্রেফতার করল তখন সে স্বামীর কম্পিউটারে একটা গেম খেলছে। পুলিশকে দেখে সে কোন প্রতিবাদ করল না, তাদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করল না। এমনকি আদালতে তাকে নেবার পর সে নিজের স্বপক্ষে কোন উকিল উপস্থাপন করল না। তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলে সে তা মাথা পেতে নিল এবং চুপচাপ নিজের সেলে চলে গেল।
ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবার আগের দিন রহস্যময় কোন আগন্তুক তার সাথে দেখা করতে চাইল।
সে নিতান্ত অনিচ্ছায় দেখা করল আগন্তুকের সাথে। সেই মানুষটা তাকে বলল, “বাঁচতে ইচ্ছা করলে এই কার্ডের লাল বোতামটা স্পর্শ করো”, বলে তাকে একটা কার্ড দিল সে।
নিশু তাচ্ছিল্যের সাথে কার্ডটা সেলের এক কোণায় ফেলে দিল। ফাঁসির রাতে ফাঁসির একটু আগে সে নিতান্ত কৌতূহলবশত পা দিয়ে কার্ডের লাল বোতামে হালকা চাপ দিল।
কার্ডের ভিতর থেকে ঘচ করে একটা ছোট পিন বের হয়ে নিশুর পায়ে ঢুকে গেল।
নিশুর মনে হল তার পায়ে কে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, সেই আগুন ক্রমেই উপরে দিকে উঠছে।
নিশু জ্ঞান হারাল। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখে এই জায়গায়, লাল বোতামে চাপের সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিমুলেশনের জন্য নাম নিবন্ধন করে ফেলেছে সে।
এখন তার সবই মনে পড়ছে। এই লোকটার নাম রাকিবিল হাসানাত।
সে সিমুলেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। সেই নিশুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এখানে এনেছে। কার্ডের পিনের সাথে সাথে নিশুর শরীরে এমন একটা ড্রাগ প্রবেশ করেছিল যার কোন তথ্য এখনো পৃথিবীর ডাটাবেসে নেই। এই ড্রাগ death trance সৃষ্টি করেছিল নিশুর শরীরে, সবাই ভেবেছিল নিশু মারা গেছে। কার্ডটা দেখেও কিছু বোঝার উপায় ছিল না, কারণ কার্ডের ভিতর অটো-ডেসট্রাক্ট প্রোগ্রাম দেয়া ছিল।
বিষপ্রয়োগের সাথে সাথে ওটা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও কিছু পাওয়া যায় নি। মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে নিশুর শরীরকে হস্তান্তর করা হয়েছিল নিশুর পরিবারের কাছে। তারা নিশুকে কবর দিয়েছিল পারিবারিক কবরস্থানে। পরে রাতের অন্ধকারে রাকিবিল হাসানাতের লোক কবর খুঁড়ে নিশুকে বের করে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়।
সে রাতেই তাকে পুনঃ জাগ্রত করা হয়। প্লেনে করে নিয়ে যাওয়া হয় পৃথিবীর দুর্গমস্থলে স্থাপিত সিমুলেশন হেডকোয়ার্টারে।
নিশুকে সব বুঝিয়ে বলেছিলেন রাকিবিল হাসানাত। বলেছিলেন, প্রতি বছরের সিমুলেশনে তারা প্রথম দশজনের মধ্যে থাকে তাদেরকে অনেক টাকা পয়সাসহ ছেঁড়ে দেয়া হয়। তাদের জন্য নতুন পাসপোর্ট, নতুন পরিচয় - সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়।
আর যারা দশজনের মধ্যে থাকতে পারে না তাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এখানে রেখে দেওয়া হয়, বিভিন্ন সিমুলেশনে ব্যবহার করা হয়, অন্যান্য এক্সপেরিমেন্টে লাগানো হয়। বলা বাহুল্য, সেগুলো তাদের জন্য খুব একটা ভালো হয় না। কারণ একটু আগে পরাবাস্তব ডাটা রিআপলোড প্রোগ্রামে পরাবাস্তব রাকিবিল হাসানাত পরাবাস্তব নিশুকে সিমুলেশনের যে গল্পটা শুনিয়েছেন সেটা পুরোটাই সত্যি। একটা মানুষের মধ্যে তার ইন্টারফেস ঢোকানো হবে তার CNS disorder হবার চান্স তত বেশি। তাই আগে আগে প্রথম দশজনের মধ্যে থেকে বের হয়ে যাওয়াটাই লাভজনক।
অবশ্য এখন নিউরাল স্টেম সেল দিয়ে কৃত্রিম ব্রেইন তৈরী করার চেষ্টা চরছে, বলেছিলেন রাকিবিল হাসানাত, কৃত্রিম ব্রেইন তৈরি করতে না পারলেও অন্তত স্টেম সেল দিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভ সেল গুলোকে প্রতিস্থাপিত করা যাবে। তখন আর CNS disorder গুলো থাকবে না। তখন একেক প্রতিযোগী অনেকদিন পর্যন্ত খেলতে পারবে। আর তখন সিমুলেশনগুলো হবে আরও ভয়াবহ। আর রোমাঞ্চকর।
রাকিবিল হাসানাত বললেন, “এখন কেমন লাগছে”?
নিশু বলল, “ভালো”।
“তুমি তো ফাটিয়ে দিলে”।
“থ্যাঙ্কস”।
“তুমি এত ভাল করবে আমি ভাবতেই পারিনি। প্রায় সবাই তোমার বিপক্ষেই বাজি ধরেছিল”।
নিশু হাসে।
অথচ তুমি বলা নেই কওয়া নেই, একেবারে ফার্স্ট হয়ে গেলে! ও, আই জাস্ট ক্যান্ট বিলিভ! শুধু তোমার কারণে বাংলাদেশ প্রায় ষাট কোটি ডলার জিতল!
“থ্যাঙ্কস”।
“রেস্ট নাও, মনকে টেনশনমুক্ত রাখ। নেক্সট সিমুলেশন পরের সপ্তাহে। আর মাত্র ৯ দিন আছে”।
“ঠিক আছে”।
“একদম টেনশন নিবে না। যখন যা লাগবে নার্সকে বলবে”।
“ঠিক আছে বলব”।
“গুড গার্ল।
যতদূর জানি সেকেন্ড সিমুলেশন ডিজাইন করেছে জার্মানির এক প্রফেসর। জার্মানরা কিন্তু একটু রাফ এন্ড টাফ”।
“মনে থাকবে”।
“গুড। রেস্ট নাও।
আর ইউ নো, আই লাইকড ইউর কুল হেড। ইটস সো কুল, কুলার দ্যান দি কুলেস্ট আইস”।
“থ্যাঙ্কস”।
“সেক্সের দরকার হলে বলো। স্বাভাবিক থাকার জন্য ওটাও প্রয়োজন”।
“বলব”।
“গুড”; চলে গেলেন রাকিবিল হাসানাত। নিশু চেয়ে চেয়ে তার চলে যাওয়া দেখল।
তার কাছে সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত লাগছে। এই যে স্বামী নামের শুয়োরটাকে হত্যা, ফাঁসির আদেশ, এখানে আসা, প্রথম সিমুলেশনেই ফার্স্ট হওয়া - সবই তার কাছে একটা ঘোরের মত।
নিশুর এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় যে একটা স্বপ্নের মধ্যে আছে, স্বপ্নটা শেষ হলেই সে জেগে উঠবে তার নিজের বিছানায়। স্বামীকে এক কাপ কপি করে দেবে সে। দুজন মিলে উপভোগ করবে শীতের সকাল। কিন্তু না, এই স্বপ্ন কখনো ভাঙ্গে না। কে জানে, হয়তো এটাই বাস্তব।
যে বাস্তবে সে তার স্বামীর হত্যাকারী, খুনের পলাতক আসামী।
নিশু বিশ্রাম নেয়। কিছুক্ষণ পর সে গ্র্যান্ড হলরুমে যাবে। অন্য সবার সাথে সেভাবে পরিচিত হবার কোন সুযোগ এখনও পাওয়া যায় নি। আজকেই প্রথম।
নিজের একাকীত্ব কাটাতে এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে সে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।