ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
এখনো সময় আছে আলোচনায় বসুন তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে বেগম খালেদা জিয়ার আহবান। পক্ষান্তরে সরকারি দলের এক গো; তারা তত্ত্বাবধায়কে ফিরে যাবেন না।
ইতিমধ্যে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে এসেছে, দেশ পুনরায় আরেকটি জেদাজেদির জাঁতাকলে পরছে। এটা কোন আদর্শের সংঘাত নয়। অনিবার্য কোন সমস্যাও নয়। এটা নিছক জেদ আর একগুঁয়েমির ফলে সৃষ্ট সংঘাত।
১৯৯৪ সালে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে অনুষ্ঠিত মাগুরা উপনির্বাচনে যে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল।
ঐ নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট চুরির যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছিল তাতে দলিয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিরোধীদলের জন্য এক রকম অসম্ভবই করে তোলে। ফলে বিরোধীদলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন যৌক্তিক ভিত্তি পায়।
পাগল ও শিশু ছাড়া নিরপেক্ষ লোক নেই এ ধরনের তত্ত্বকথা বিরোধীদলের দাবিকে অযৌক্তিক প্রমাণের জন্য তখন আর যথেষ্ট থাকে না। তথাপিও তৎকালীন সরকার প্রধানের জেদের ফলেই দেশবাসীকে ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে দেখতে হয়েছে। সেদিন জেদের জয় হয়নি, যুক্তিই জয়লাভ করেছে।
ঠিক একইভাবে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের গোঁয়ার্তুমির কারণেই এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল । সে সময় চারদলীয় জোট সরকার বিরোধী দলকে এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে পাত্তা না দিয়ে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে সেনা সমর্থিত এক-এগারোর সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে। যার কোন বিকল্পও ছিল না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা যেমন বিএনপির স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই প্রথম অনুভূত হয়।
তেমনি এর গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার জন্য যা কিছু করার দরকার তার সব ব্যবস্থাও তারাই করেছেন। যার অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
মজার বিষয় হল তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে তোলার পুরো দায়ভার যাদের কাঁধে আজ তারাই এর হিতাকাঙ্ক্ষী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এই ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে যাদের অবদান সবথেকে বেশি আজ তারাই এর হন্তারক। যার পেছনেও যুক্তি নয়, জেদই কাজ করেছে।
অথচ বর্তমান সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ না করে এর প্রধান কে হবেন সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতেন এবং তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার যে সব দুর্বলতা ছিল তা সংশোধনের উদ্যোগ নিতেন। তাহলে তা একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হত। তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে যে আশংকা প্রকাশ করছেন তারও অবসান হত। কিন্তু তা করা হয়নি। কেন?
এখানেও যুক্তি নয়, জয়ী হয়েছে জেদ।
আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলের যতখানি সাফল্য তাকেও ম্লান করে দিয়েছে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর এই জেদ।
পক্ষান্তরে বিএনপির বিগত শাসনামলের সকল ব্যর্থতা ছাপিয়ে আজ যে গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক হয়ে নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সে সুযোগটিও করে দিল আওয়ামীলীগের অহমিকা আর জেদ। আজ ডুবন্ত নৌকায় অবস্থান করেও নিজেদের ভুল বুঝতে তারা অক্ষম।
এমন কোন গ্রহণযোগ্য যুক্তিই নেই যা, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিপরীতে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম।
সরকার তাদের সময়ে অনুষ্ঠেয় যে সব নির্বাচনের উদাহরণ দিচ্ছে তা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিপরীতে দলিয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতে বিভিন্ন কারণেই সমর্থন করে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন কখনোই সরকার পরিবর্তনের কারণ হতে পারে না। কাজেই এসব নির্বাচনে কোন দলের সমর্থক প্রার্থী জয়লাভ করল এটা বড় কথা নয়। সাধারণত এসব নির্বাচনে সরকারী দলও খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে যায় না। তা ছাড়া উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যতটা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের ৩০০ আসনের ক্ষেত্রে ততটা সম্ভবও নয়।
সরকারী দল থেকে বারবারই বলা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক এলে এবার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অবস্থা আর ভয়াবহ হবে। তারই বা ভিত্তি কি? কেন ভয়াবহ হবে?
এমনতো হতে পারে এবার আর তারা গতবারের মত ভুল করবে না। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে তারা আসবে এবং সে লক্ষ পূরণ করেই প্রস্থান করবে। যে প্রত্যাশা এর পূর্বে জনগণও করেছিল। যা পূরণে ফখরুদ্দিন সরকার ব্যর্থ হয়েছিল।
এবার তারা তো ব্যর্থ নাও হতে পারেন। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিছু ব্যবসায়ী ও নির্দিষ্ট কিছু রাজনীতিবিদ। তাদের কুষ্ঠি বিচারে খুব কি অন্যায় করা হয়েছিল তাদের সাথে? সেটাও আলোচনার দাবী রাখে। ফখরুদ্দিন সরকারের দুই বছরের শাসনামলে সাধারণ মানুষ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা তাদের অভিজ্ঞতার অভাব আর সর্ব মহলের অসহযোগিতার ফলেই। দায়বদ্ধতার অভাবে নয়।
কাজেই আবার তত্ত্বাবধায়ক এলে বা এক এগারোর সৃষ্টি হলেই যে দেশ রসাতলে যাবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বরং উল্টোটাও ঘটতে পারে। তবে সব কিছুর পড়েও দেশ অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কবলে পড়ুক এটা নিশ্চয়ই কেউই চায় না। তারপরেও এ ধরনের আশংকা প্রকাশ করে মানুষকে ভোলানো কঠিন। এখন মানুষ রাজনীতিবিদদের যে কোন দাবীর পেছনে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দাবী করে।
নেতৃবৃন্দের কথা জনসাধারণের কাছে এখন আর বেদবাক্য নয়।
আওয়ামী লীগ নিজেদের আন্দোলনের ফসল নিজেরাই কেন বিনষ্ট করতে চাইছে এ প্রশ্ন আজ দেশবাসী স্বাভাবিক কারণেই করছে। প্রচলিত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় যদি কোন সমস্যা থাকে তাকে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু এ ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করতে হবে কেন? এক এগারোর মত আর যেন কোন সরকার তিন মাসের স্থলে ২ বছরের অধিক কাল ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে না পারে সে মতে বিধি বিধান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণের যাতে সাহস না পায় সে জন্য এক এগারোর সরকারে যারা ছিলেন তাদের আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।
কিন্তু বর্তমান সরকার সে পথে না গিয়ে এই ব্যবস্থাটিকেই বাতিল করে দিলেন। এতে লাভটা কার হবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন অনির্বাচিত কারো হাতে তিনি আর ক্ষমতা দিবেন না। নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই হবে। যদি সে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণই না থাকে তাহলে সে নির্বাচনই কি গ্রহণযোগ্য হবে? যেখানে আমাদের দেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার মাপকাঠিই হচ্ছে ক্ষমতায় যেতে পারলাম কিনা সেখানে কোন কারণে সব দল অংশগ্রহণ করলেও কি তা পরাজিত গোষ্ঠী মেনে নেবে?
বর্তমান প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে হেরে যায় তাহলে তারা তো বলবেই; সেই সাথে যে কেউই বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, ক্ষমতাসীনরা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছে। নাকি সরকার হেরে প্রমাণ করবে যে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম? তাতেই বা কি লাভ? ক্ষমতায় আরোহণ করে বিএনপি বা আঠার দলিয় জোট যে পরবর্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখবে? তারই বা নিশ্চয়তা কি?
আমার প্রশ্ন হল; ধরে নিলাম আওয়ামী লিগের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল।
এবং বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করল। আওয়ামী লীগ কি সে রায় মেনে নিবে?
গণতন্ত্রকে জিইয়ে রাখার স্বার্থে যদি তারা মেনেও নেয় পরবর্তীতে মাগুরার ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি হয় তখন আওয়ামী লীগ কি করবে?
তারা কি আবার নতুন ফর্মুলা নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে না?
আওয়ামী লীগ কি আজ এই অঙ্গিকার করতে পারবে যে তারা কোনদিন কোন অবস্থাতেই তত্ত্বাবধায়ক বা এই ধরনের ব্যবস্থার জন্য দাবী তুলবে না?
জানি পারবে না, সঙ্গতও নয়। কেননা প্রয়োজনের তাগিদেই এক এক সময় এক এক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আর তা বিলুপ্তও প্রয়োজনের তাগিদে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই করতে হয়। জেদের বসে নয়।
তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই ডাকুন না কেন একে বিলুপ্ত করতে হলে পূর্বে নির্বাচন কালীন সময়ের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন। যে সব দেশের উদাহরণ দিচ্ছেন সে সব দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তো-
আত্মসম্মানবোধে বলিয়ান, তারা নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিদেশিদের দ্বারস্থ হন না।
তারা তো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার জন্য বিদেশিদের কাছে আবদার করে না।
নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য উগ্র সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয় না।
তাদের কাছে দেশ আগে।
তাই সেখানে ক্ষমতার পালা বদল হলেও দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন পরিবর্তন হয় না। কাজেই তাদের তুলনা দেয়ার আগে দয়া করে তাদের মত হন।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী মহোদয়, যুক্তির কাছে অবনত হন। জেদের কাছে নয়। আজ আপনার সিদ্ধান্তের উপর এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অনেকখানি।
সাধারণ মানুষকে ভোট দেয়ার আগে ভাবতে দিন তারা কাকে ভোট দিবে। একদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। আরেকদিকে অহমিকার। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে লুটপাট। একদিকে আবহমান বাংলার হাতছানি অন্যদিকে কর্পোরেট কালচার।
তবু তো চিন্তার খোরাক থেকে যায় অনেকটাই। হুজুক না সে সম্ভাবনাকেও ধূলিসাৎ করে দেয়!
আমরা সাধারণ জনগণ পাঁচটি বছর স্বেচ্ছাচারিতার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে একদিনের বাহাদুরি ফলাতে গিয়ে আরও বড় স্বেচ্ছাচার হয়ে যাই। বারংবার তাই ভুল করি। এবার অন্তত সুযোগ দিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।
- See more at: http://www.aponvubon.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।