একুশে বইমেলাতে লিটলম্যাগ চত্বরে আমার ভনের জন্য একটা স্টল ছিলো। আমি প্রতিদিনই স্টলে থেকেছি। শুরু থেকে শেষ অব্দি। একুশে বইমেলাতে অনেক রিপোর্টার লিটলম্যাগের উপর রিপোর্ট করতে এসেছেন। নতুন কি কি ম্যাগ বের হয়েছে ভনের স্টল থেকে খোঁজ-খবরটা নিয়ে গেছে।
ভনের ফেব্রুয়ারি সংখ্যা যখন বের হলো, দেখি অনেকেই আমার স্টলের অন্যদের ম্যাগের নাম লিখে নিচ্ছে কিন্তু ভনের নাম লিখছে না। এক রিপোর্টার যখন লিখছে না, তাকে বললাম, ভনের নতুন সংখ্যার নাম কেনো লিখছেন না? সে ঘাড় নেড়ে, মুখ দিয়ে গাইগুই শব্দ বের করতে লাগলো। আমি তার হেতু জানার উদ্দেশ্যে বললাম, ভনে কি লিটলম্যাগ মনে করেন না? সে এবার না সূচক ঘাড় দোলালো। আমি বললাম, ‘লিটল ব্রাদার, আপনি বলেন কেনো ভনে লিটলম্যাগ নয়! আর আমি বলি, ভনে কেনো লিটলম্যাগ!’ আমার বলার গলার জোর দেখে সে একটু দমে গেলো। আমি তাকে সাহস দেয়ার জন্য বললাম, ‘আপনি কবিতা লেখেন বলেই আমার ধারণা।
এবং লিটলম্যাগ সম্পর্কে আপনার একটা স্পষ্ট ধারণা আছে। ’ তখন সে খুশি হয়ে বললো, ‘হা আমার একটা কবিতার বইও আছে। ’ হুম আপনাকে আমি মুখ চেনা চিনি।
একদা আমাদের মহান গণতন্ত্র পা পিছলে তরমুজের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলো। ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক শেয়াল এসে সেই তরমুজ খেয়ে যাচ্ছিলো।
গণতন্ত্র তখন শেয়ালের পেটে। তখন এগাঁও ওগাঁওয়ের লোককে হাঁক ডাক করে জড়ো করে সেই শেয়ালকে পাকড়াও করে গণতন্ত্রকে তার পেট চটকে বের করে শেয়ালকে বন্য বিভাগের খোয়াড়ে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। এই শেয়াল পাকড়াও করার কাজে বেশি আগ্রহী ছিলো আমাদের রাখাল সমাজ। তাদের নেতাদের দু একজনকে রাজ দরবারে ঠাই দেয়া হলো। রাখাল সমাজ বেশ খুশি।
এখন তারা কি করে, তারা এবার একে অন্যের গোয়াল দখল করে নেয়, অপরের বকনা-গাভি-বলদগুলো দখল করে নেয়। তারা আগে বুঝতো শেয়াল আন্দোলন, এখন তারা বোঝে বলদ আন্দোলন। শেয়াল আন্দোলনের পর বলদ আন্দোলনের কালে কালে আদার ব্যাপারীরা মিডিয়া দোকান খুলে বসলেন। এই দোকানে কলম ঘষার জন্য কেরানী প্রয়োজন। যারা ভুল-ভাল বাক্যে-শব্দে পাড়ার মেয়েটির জন্য প্রেমপত্র লিখে মেয়েটির হাতে তুলে দিতে সাহস করে নি, এখন এইসব কেরানীরা এইসব মিড়িয়ার দোকানে খবর লেখার চাকুরি নিয়েছে।
যারা বলদ আন্দোলন বোঝে তাদের সাথে লিটলম্যাগ আন্দোলন নিয়ে কথা নাই-বা বললাম। পাঠক, লিটলম্যাগ নিয়ে কথা অনেক দিন ধরেই বলা যাবে, আজ আমি অন্যকথা বলবো বলে আরো বেশি বাজে কথা বলবো বলে, এই মধুর ভাষণ আপনাদের শোনাচ্ছি।
ভনের চারটি সংখ্যা লেখক ও প্রকাশকের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেয়া হলো। প্রথম ২/১টা সংখ্যা বলে-কয়ে বিজ্ঞাপন নিয়েছি। তারপর থেকে প্রায় সবগুলোই বিজ্ঞাপনদাতাদের অগ্রীম আগ্রহের কারণে দিয়েছি।
বিজ্ঞাপনের মূল্য নিয়ে একটা খসড়া আলোচনার মধ্য দিয়েই ব্যাপারটা গেছে। বিজ্ঞাপন ছাপা হবার পর, টাকা দেবার ব্যাপারে তাদের কাকুতি-মিনতি দেখে বারবার লজ্জা পেয়েছি। এদিকে বই বাণিজ্যের হাটও শেষ, তাই বিজ্ঞাপন দেবার ব্যাপারে লেখক-প্রকাশকের আগ্রহ কমে যাবেই। আর যেখানে টাকা পকেট থেকে বের হয়ে যাবার প্রশ্ন সেই পথে জান কোরবান করে না হাঁটবারই কথা। ফ্রেরুয়ারি সংখ্যাটা করার আগ দিয়ে আমি ফেসবুকে লেখকদের বই প্রতি ৫০০ টাকা বিজ্ঞাপন মূল্য ধার্য করে বিজ্ঞাপনের আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম।
একজন বিশিষ্ট গ্রামজ গবেষক, কাটপিস লেখক বেশ দম্ভ ভরে জানালেন, ‘আমি বইয়ের কোন বিজ্ঞাপন দিই না। ’ পরের দিন বাংলা একাডেমীতে চাকুরীরত জনাব কাটপিস লেখককে বাংলা একাডেমীতে দেখা হলো। নিজেই বেশ জোর শোরে হাসি দিয়ে বললেন, ‘আপনার দুঃসাহসী প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ। ’ তার হাসির থাপ্পড় খেয়ে আমি ম্যা ম্যা করে একটা হাসি দিয়ে ছিটকে আসলাম। লেখকরা মেলা শেষে দেশ উদ্ধার করে সারা পৃথিবী জয় করে ঘরে ফিরেছেন।
তারা এখন বিজয় উৎসবে ব্যস্ত। আমার দিকে মুখ ফেরাবার সময় কোথায় তাদের। আমার ফোন এখন অনেকেই ধরতে বিব্রত বোধ করেন। অনেকেই আছেন দিনের পর দিন বলে যাচ্ছেন দেখা করবেন। আমি মধুসূদন আশায় আশায় থাকি!
এবার সিদ্ধান্ত হলো, আর বইয়ের বিজ্ঞাপন নয়।
ঢাকার এতো এতো কোম্পানী দরিয়া-মে বানের জল ঢালবার মতো টাকা ঢালতাছে, বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন কইরা পাবলিকরে পেরেশান করতাছে। তাদের দরবারে আমার মতো একটা মহা প্রাণী হাতির একটা পাড়া দিলেই ধেই ধেই কইরা নাচতে নাচতে কলাগাছ আলগাইয়া ধরবো। আমার পরিচিত হাউজে কথা বলতে গেলাম, তারা আমার কাগজে বিজ্ঞাপন দিলে কি লাভ হইবো জানতে চাইলো। কাগজটা কোন স্তরের পাঠকের হাতে যায়, তার সংখ্যা কতো? ঐ পাঠক শ্রেণি তাদের ক্রেতা কিনা বুঝতে চেষ্টা করলো, তারপর চা-কফি খাওয়াইয়া হাসিমুখে বিদায়ের কালে কইয়া দিলো, ‘আপনাকে আমরা জানাবো!’ আমি বইয়া আছি বন্ধুর আশায়!
এই ঢাকার শহরের বাটে আমার পরিচিত-বন্ধু-স্বজনের সংখ্যা নগণ্য। আমার তরে বইয়া নাই এমন কেউ যে, আমি তাদের কাছে গেলাম, আমার কথা শুনে গদ গদ হয়ে আমার কাজটা করে দিলো।
তাই হরে দরে পরিচিত, আধাপরিচিত সবাইকে বলছি। তারা এ অফিস সে অফিস পাঠাচ্ছে, চা-কফি খেয়ে আসছি। এটা আজীবন করে যেতে পারলে একদিন আমার বাবা কাঁধ ছুঁয়ে বলবে, ‘দেখিস তোর দিয়ে একদিন কিছু হবে!’ তার টাকার শেষ নাই, তার কোম্পানীর শেষ নাই, তার জমি দখলের শেষ নাই, তার অপরাধের শেষ নাই, আইন কানুনরে থোড়াই কেয়ার করতে পারে যে, মন্ত্রির টিনের বাক্সে তার টাকা ঢালনের হিসেব নাই। এমন একজন মহান ব্যাক্তির মিডিয়া হাউজে আমার আধা পরিচিত বন্ধুটি ‘জয় বসুন্ধরা জয় মা বসুমতি’ বলে চাকুরি করে। আমি হঠাৎ তারে আমার মামা বাড়ির আব্দারটা কইলাম! কইলাম, ‘মামা, আমার কাগজের জন্য একটা বিজ্ঞাপন জোগাড় করে দেন প্লিজ!’ সে উত্তরে কইলো, ‘আমারে দয়া করে আপনার কাগজে একটা চাকুরি দিতে পারেন?’ আমি আছাড় দিয়া পড়লাম।
কইলাম, ‘মামা, আমার চৌদ্দ পুরুষের সব পূণ্যি তোমারে দিলাম। আমারে এইবারে মাফ করো। আমার ভুল হইয়া গেছে। এ জীবনে আর আমার এমন ভুল হইবো না। ’ সে বেশ সুখ পেয়ে আমারে কইলো, ‘মনে থাকে যেন, তুই কেন, তোর চৌদ্দগুষ্ঠি যেন এই ভুল না করে!’
আচ্ছা মামুরা, আমি যে আজকে অনেক খারাপ কথা কমু কইয়া লিখতে বসলাম।
কোন খারাপ কথাই বলতে পারলাম না। মামার ধমক খাইয়া আমি আজকাল সিদা হইয়া যাইতাছি গা। জয় মামা! জয় বসুন্ধরা! জয় মা বসুমতি!
গতরাতে খোয়াবে দেখলাম এক টেকো বাউল একতারা হাতে গান গাইতাছে: হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।