"সাম্প্রদায়িকতা এবং সংখ্যালঘু" এই দুটি শব্দ আমার কাছে খুবই অপমানজনক এবং অশ্লীল দুটি শব্দ। এই শব্দ দুটি শুনলে আমার দীর্ঘশ্বাস থেকে আমি একটি শব্দ শুনি যা হল বিভাজন এবং আমাকে তা মনে করিয়ে দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি কতটা লজ্জিত, মানবতা আজ কতটা নিপীড়িত, যে স্বাধীনতা অর্জনে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা রক্ষা করেছিলাম আমাদের সোনার বাংলা। সঙ্খ্যালঘু মানেই নিপীড়িত, স্বাধীনতা এবং বিচার থেকে বঞ্চিত। সংখ্যালঘু মানেই ডান্ডি বা মালাউন, অধিকার বঞ্চিত। এই শব্দটি কে যখনি আমরা সমাজ থেকে উচ্ছেদ করার প্রয়াসে এগিয়ে যায় তখনি ধর্মান্ধ পশুরা মনে করিয়ে দেয় এই শব্দটি আর তখন মানবতা নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
মদ্রাসার এসব তথাকথিত মুমিন ছাত্ররা তাদের জিহাদি কার্যক্রম ভালই চালাচ্ছে। মন্দির প্রতিমা ভেঙে তা তো চুরমার করলই আবার প্রতিমার গায়ে শোভা পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার গুলো চুরি করল। মুমিন ভাইয়েরা এসব দিয়ে কি করবেন? হয়ত তা গনিমতের মাল, মুমিন ভাইদের হালাল অর্জন ! এই কি শিক্ষা দেয় তবে ইসলাম? এই কি শান্তি কামি মুমিনের রূপ ?
পরিচিত একজন ছাত্রের কাছ থেকে শুনলাম কালীবাড়ি ভাংচুরের সময় এক ব্রাহ্মণ বাঁধা দেয়ায় মাদ্রাসার ছাত্ররা তার পরিবারে হানা দেয়। সেই পরিবারে এস এস সি পরীক্ষার্থী এক মেয়ে ছিল তার। মেয়েকে মা বাথরুমে দরজা লাগিয়ে লুকিয়ে রেখেও পারে নি।
মাদ্রাসার ছাত্ররা বাসায় ঢুকে মা ও মেয়ে দুইজনকে নির্যাতন করে। এই তবে মাদ্রাসার শিক্ষা ? ইসলামের শিক্ষা ? হবে হয়ত কারণ জিহাদে তো দুশমন পক্ষের নারীরা দাসী এবং জিহাদের ময়দানে তাদের সাথে যা ইচ্ছা তা করা যায় ! প্রশ্ন শুধু নিজের বিবেকের কাছে... এটা কি আমার অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি ৭১ এর যুদ্ধবিধধস্ত বাংলাদেশ ?
এই ঘটনায় উস্কানি মুলক ভুমিকা পালন করছে এই গলাম আজম গ্যাং...। তালেবানরা হাজার বছরের বৌদ্ধ নিদর্শন ধংস করে আফগানিস্তানে ইসলামের ভিত শক্ত করতে গিয়ে, কী হাল করেছে আফগানিস্তানের ? এই দেশও কি আফগানিস্তান-পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করে জাহান্নামের পথে হাটছে ?
সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গা, মৌলবাদ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কে যেমন বিলুপ্ত করছে তেমন আবার সামনের প্রজন্মকেও ঠেলে দিচ্ছে এক ভয়াবহ কুৎসিত প্রতিহিংসার দিকে।
জানি না এই রাজনীতির খেলা, ধর্মান্ধতার এই হানাহানি কখন বন্ধ হবে ! সব ধর্মই স্বীয় স্থানে সম্মানিত এবং সত্য। মানব ধর্মই পরম ধর্ম।
কিন্তু মনে হয় এখন লালন সাঁই ঝি এর মত দীর্ঘশ্বাস ফেলে এটাই বলতে হবে-
"যেদিন হিন্দু মুসলমান, বুদ্ধ খ্রিস্টান, জাতি বিভেদ নাহি রবে-------এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে ? "
পাদটীকাঃ
ছোটবেলায় গল্পে পড়তাম রাম এবং রহিম বন্ধু। এভাবেই মা বাবা এবং শিক্ষকরা শুরু করতেন। কিন্তু দেশে আজ যে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে আমি ভীত এবং শংকিত যে হয়ত আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে বলতে পারব না হাসিমুখে যে রাম এবং রহিম দুই বন্ধু, পারব না হয়ত বলতে এটা সম্প্রদায় মুক্ত রাষ্ট্র। তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি এবং আমৃত্যু বলব-
আমি একটা অসাম্প্রদায়িক,রাজাকার মুক্ত এবং সম্প্রীতির সোনার বাংলা চাই। সময় এসেছে স্বাধীনতা বিরোধী কীটদের উপড়ে ফেলার।
জাতি আজ দু'ভাবে বিভক্ত। একদল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এবং অন্য মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের এবং আমরা চিনি ফেলেছি তারা করা ! আমরা রুখে দিব মা ! ভয় নাই,-
"আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে-
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা-
প্রতিবাদ করতে জানি। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।