মানুষের ভালোবাসাই তো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি,সফল হওয়ার পেছনে। " ছেলেটি বারবার আকাশ দেখে।
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা শ্যামলা বর্ণের ছেলেটি। নাম কথক। ঠিক কথকের মতই ওর চপলতা।
জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এক বাস্তবার দুর্ভেদ্য দেয়াল সে।
কী সফলতা ছিল না তার।
পোর খাওয়া পিতার তাড়া খেয়ে মায়ের কাছে মুখ লুকিয়ে কাঁদত ছেলেটি। অসাধারণ প্রতিভাবান ছিল।
মাঝরাতে যখন সবাই ঘুমে বিভোর ছিল, তখনও ছেলেটি একটানা কবিতা মুখস্ত করে যেত।
" টুইংকেল টুইংকেল ...................... "
কতই বা বয়স ছিল তখন।
তিন এর বেশি নয়।
স্কুলে ভর্তি হবার আগেই দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত সব কবিতা কণ্ঠস্থ ছিল। যে বয়সে ছেলেরা ১ আর ১ যোগ করলে কত হয় টা বলতে পারত না সে বয়সে সেই ছেলেটি সরল অংক করত।
কথকের বাবা ছিল নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া জুয়াড়ি।
পড়াশোনার বালাই নেই, তাই কথককে তার বাবার অভিশপ্ত দৃষ্টির বাইরে থাকতে হতো সবসময়।
আর ঠিক এ কারণেই কথক পড়ত মাঝরাতে, যখন চাঁদ পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তো, ঝিঁঝিঁপোকারা ডাকে মত্ত থাকতো।
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় ছেলেটি জেলায় প্রথম হল। ঠিক তখনই ছেলেটির প্রতি সবার নজর পড়ল। স্কুলের শিক্ষক, এলাকার গণ্যমান্যরা কথকের বাবাকে বুঝাতে লাগলো কথক যেন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকে।
কিন্তু তার বাবা নির্বিকার। এলাকার চেয়ারম্যান পর্যন্ত তার বাবাকে বোঝাতে পারে নি। কথককে পড়াশুনা করতে দেখলেই তার গায়ে হাত উঠত। তাকে বাসা থেকে বের করেও দেয়া হয়েছিল রোজগার করে না বলে। তবুও কথক পড়েছিল,অস্তিত্তের লড়াই করেছিল শেষ পর্যন্ত।
প্রথম যেদিন বৃত্তির টাকাটা হাতে পেয়েছিলো কথক, সেদিন তার মায়ের খুশিতে কথক ভুলে গিয়েছিলো তার কষ্টের কথা। কিন্তু বিধি মনে হয় এই সুখ সয় নি। ছোঁ মেরে কথকের বাবা টাকাটা নিয়ে গেছিলো নেশায় বুঁদ হতে।
এরপর..............................
জল অনেক ঘোলা হয়েছিল। জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় সে প্রথম হয়েছিলো।
এমনকি বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায়ও।
কিন্তু তারপর...........................
অভিমান পেয়ে বসে কথকের। তার নিজের প্রতি, বাবার প্রতি।
বন্ধুমহল, শিক্ষক, সবার বোঝানো সত্ত্বেও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে ছেলেটি। প্রথম দু বছরে একটা বিষয়ও পাশ করতে পারে নি কথক।
তাই বাধ্য হয়ে বুয়েট থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়।
তাই কথক আকাশ দেখে বারবার। এছাড়া ওর যে আর কিছুই করার নেই।
এটি বিরক্তিকর ছোটগল্পের মত মনে হলেও সত্যি ঘটনা।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক কথক আছে।
যারা সম্ভাবনা ছড়িয়ে হারিয়ে যায় কালের অতলে।
কিন্তু দায়ী কে?
ভাগ্য?
প্রকৃতি?
না অন্য কেউ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।