...........................
৮৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হাওয়ার্ড রিচার্ডসন কে এখন আমেরিকাতে একজন জাতীয় বীর হিসেবেই দেখা হয়। কারন বিমান চালনার ক্ষেত্রে মার্কিনী ইতিহাসের অন্যতম সেরা নজির তিনিই দেখিয়েছেন। নিজের কাছে তিনি কত টুকু বীর?তবে বন্ধু মহলে তার রয়েছে অগাধ সম্মান, বিমান বাহিনীও তাকে দিয়েছে সাহসিকতার সর্বোচ্চ পদক। কিন্তু অনেকের কাছেই তিনি আবার এমন এক খলনায়ক যিনি মার্কিন উপকূলীয় জলসী্মায় একটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিলেন,যে বোমা এখন ও খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তা এখন ও সমানভাবেই বিপজ্জনক !
১৯৫৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী। মধ্যরাত পার হয়েছে কিছুক্ষন আগে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ স্ট্র্যাটেজিক ফ্লাইট কমান্ডের অধী্নে একটি টপ সিক্রেট মিশন নিয়ে আকাশে উড়লেন তরুণ মেজর হাওয়ার্ড রিচার্ডসন।
সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে তখন স্নায়ু যুদ্ধ তুঙ্গে। দূ্রপাল্লার বিমান হামলার মহড়া দিতে হয় প্রায় প্রতিদিনই। এমনই একদিনের মহড়ার অংশ হিশেবে ফ্লোরিডার বিমান ঘাঁটি থেকে বি-৪৭ বোমারু বিমান নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার কোন একটি বিশেষ এলাকার উদ্দেশে রওনা হন হাওয়ার্ড। মহড়া যতটউকু সম্ভব বাস্তবসম্মত করার জন্য বিমানে ছিল একটি শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা। খুব সম্ভবতঃ বোমাটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তাকে রাশিয়াতে ফেলতেই হত!
নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ৩৮ হাজার ফুট উপরে হটাৎ করে হাওয়ার্ডের বিমানের সাথে সংঘর্ষ হয় আরেকটি মার্কিন যুদ্ধ বিমানের।
মুহূর্তেই তার বিমানের একটি ডানা ভেঙ্গে ফুটো হয়ে যায়। বিমানের নিয়ন্ত্রন ফেলে হাওয়ার্ড সেদিন মনে করেছিলেন তার সময় শেষ হয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও দ্রুত মাটিতে পড়তে থাকা বিমানটিকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছিলেন না তিনি। ২০ হাজার ফুট নেমে আসার পর বিমানটি কিছুটা তার নিয়ন্ত্রনে আসে। তখনই তিনি ও তার সহকারী পাইলট এমন একটা সিদ্ধান্ত নেন যা শুধু তার জীবনই রক্ষা করেনি, রক্ষা করেছিল নীচে মাটিতে থাকা আরও কয়েক লক্ষাধিক জীবনও।
হাওয়ার্ডের মনে এখনও কোন সন্দেহ নেই, যে তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া তার সেই সিদ্ধান্তটিই সঠিক ছিল।
আর সেই সিদ্ধান্ত ছিল, পারমাণবিক বোমাটিকে কোন খালে বা নালায় ফেলেদিয়ে বিমানটিকে হাল্কা করা যাতে অবতরণের সময় বিমানটি্তে বিষ্ফোরন না ঘটে, বা অন্ততঃ বিষ্ফোরন ঘটলেও যাতে করে বোমাটিতে কোন আগুন না লাগে। স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের তত্বগত শিক্ষা বলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবার আগে বিমানের ক্রুদের প্রাণ বাচানোই প্রধান লক্ষ হতে হবে। কোন রকমে হাওয়ার্ড বিমানটিকে সাভানাহ্ উপকূ্লের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং টাইবি দ্বীপের কাছে অগভীর পানি ও বালুময় এলাকায় তিনি বোমাটি ছেড়ে দেন। এরপর অবশেষে তিনি ও তার ক্রুরা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদেয় অবতরণ করতে সক্ষম হন।
তাদের উদ্ধার হবার পর পরই একটি বড় উদ্ধার দল পাঠানো হয় বোমাটির খোঁজে। যেটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর এবং দেশের অন্যতম সুন্দর শহরের কাছাকাছি কোথাও পড়েছিল। কিন্তু সেদিনের সেই উদ্ধার অভিযান ছাড়াও বিগত ৫২ বছরে বেশ কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী অভিযান চালানো হলেও বোমাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপকূ্লের কোথাও পানির নীচে লুকিয়ে রয়েছে একটি জ়ীবন্ত পারমাণবিক বোমা, যে উপকূ্লে প্রতিদিন হাজারেরও বেশি নৌকা চিংড়ি সহ নানা মাছ ধরার জন্য জাল ফেলে। একদিন বোমাটা হয়ত কোন এক জালে হটাৎ করেই আটকে যাবে আর তারপর…
কিন্তু মার্কিন বিমানবাহিনী বারবার বলে আসছে, এটি তেমন বিপদজ্জনক নয়।
যেভাবে পড়ে আছে সেভাবে আর ও কয়েক বছর পড়ে থাকলেও সমস্যা নেই। অপরদিকে কর্ণেল হাওয়ার্ড বলেছেন, এটি একেবারেই নিরীহ গোছের একটি বোমা। কারন এটির সাথে কোন প্লুটোনিয়াম ট্র্রীগার নেই। ফলে এটির ধ্বংসক্ষমতাও তেমন নেই। তবে এখন পর্যন্ত বোমাটিকে খোঁজার জন্য একের পর এক অভিযানই প্রমাণ করে বোমাটি আসলে কতখানি শক্তিশালি ও বিপদজ্জনক ছিল!
শেষ কথা হল, এখনও এটি এমন একটি হুমকি যা বিষ্ফোরিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে।
আর কর্ণেল হাওয়ার্ডের জীবন কে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। তার মতে, এমন একটি ঘটনার পর ক্রু নিয়ে নিরাপদে অবতরণের পর বিমান বাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মানও পেয়েছি কিন্তু এটি যত না আমার ঘটনা, তার চেয়ে বেশি একটি পারমাণবিক বোমা হারানোর ঘটনা হয়েই রয়ে গেছে এই ৫২ বছর!
উইকি লিংক:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।