বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকেই ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের দাবী উঠেছিল। শেষতক বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এই প্লান্ট স্থাপনে উদ্যোগী হয়। এ বিষয়ে ২০১০ সালের ২১ মে বাংলাদেশ রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। পাবনার রুপপূরে ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২ টি প্লান্ট স্থাপনের জন্য এই চুক্তি করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১২ সালে কাজ শুরু হতে যাওয়া এই দুটি স্থাপনা ২০১৮ সালের মধ্যে পূর্ণ ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে।
কিন্তু গত ১১ মার্চ,২০১১ ভূমিকম্প আর সুনামির কারণে জাপানের ফুকুশিমায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে বিস্ফোরণ হওয়ায় বাংলাদেশে এ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। উদ্বেগের মূল কারণ হচ্ছে প্লান্টগুলো থেকে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ-প্রবণ দেশ। তাই বাংলাদেশে প্লান্ট স্থাপনের পর এরকম কোনো দূর্যোগ হলে তা প্লান্টগুলোকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করবে,আর যদি বিষ্ফোরণ হয় তার ক্ষতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে একটি বিষয় লক্ষনীয় যে গত শতাব্দীতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে এ ধরনের উল্লেখযোগ্য বিস্ফোরণের ঘটনা মাত্র একটি, আর সেটি হল ১৯৮৬ সালে চেরোনোবিল দূর্ঘটনা।
আর এই শতাব্দীতে জাপানেই প্রথম। আর জাপানের যে প্লান্টটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে তা চল্লিশ বছরের পুরনো একটি প্লান্ট।
এদিকে বাংলাদেশে যে প্লান্ট দুটি স্থাপন করা হবে তা হবে তৃতীয় প্রজন্মের প্লান্ট অর্থাৎ বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ২য় প্রজন্মের প্লান্টগুলো থেকে আরও বেশি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।
এই প্লান্টগুলোতে “প্রেসারাইজ্ড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর” সুবিধা থাকবে যেখানে পানি প্লান্ট রিঅ্যাক্টর থেকে উদ্গত তাপকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশমিত করবে। এর ফলে কমে যাবে বিস্ফোরণের ঝুঁকি।
আর এগুলোকে রিখটর স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প পর্যন্ত প্রতিরোধক্ষম করে নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া এই প্লান্ট দুটি এমন একটি নদীর কাছাকাছি নির্মাণ করা হচ্ছে যা সুনামি জাতীয় দুর্যোগে আক্রান্ত হওয়ার যে কোনো ধরনের আশঙ্কা থেকে মুক্ত।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে নিউক্লিয়ার প্লান্ট স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আসোসিয়েশন অব নিউক্লিয়ার অপারেটরস এর সদস্য হতে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর সব নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্লান্টের অতি উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চতকরণে এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্লান্টগুলোর নিরাপত্তাজনিত আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বাধ্য করে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি এজেন্সি(আইএইএ) রুপপুর প্লান্টের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করবে।
বিশ্ববাজারে তেলের দামের উর্ধগতি,দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের সীমাবদ্ধতা,কয়লা নীতি নিয়ে উদ্ভূত জটিলতা দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে করেছে আরও নাজুক। তাই বর্তমানে যে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রাকে ব্যাহত করছে তা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন জ্বালানী বিশেষজ্ঞগণ। যখন উন্নত দেশ যেমন ফ্রান্স,জার্মানি,রাশিয়ার সাথে সাথে চীন, ভারতের মত দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক বেশি করে নিউক্লিয়ার পাওয়ারের দিকে ঝুঁকছে,তখন এই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারই হবে বাংলাদেশের জন্য একান্ত কাম্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।