অনেকদিন আগে ব্লগটা খুলেছিলাম...অনেক কথা লেখার ছিল...কিন্তু লেখা হয়নি। এখন ভাবছি লিখব...আগেই লেখা উচিত ছিল!
সেদিন আমার এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। কথা শুরু হয়েছিল, আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপ ২০১১এর বাতি ঝলমলে ঢাকা নিয়ে...সেই কথা গড়িয়ে গেল আলোর নিচের অন্ধকারে...রাস্তায় ঘুমন্ত অগনিত ভাসমান মানুষে। গভীর দীর্ঘশ্বাসে আমার বন্ধু বলছিল মানুষ হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতার কথা...আমাদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা, কিছু করতে না পারার যন্ত্রনা! ঠিক কি করা উচিত তা বুঝতে না পারা। কিন্তু কিছু যে করবে, কতোটাইবা করবে...সমস্যা যে অগনিত!
এ ব্যাপারে আমার ভাবনা একটু ভিন্ন।
আমি সুবিধাবঞ্চিত মানুষ নিয়ে ভাবি, কিন্তু তাদের গোটা সংখ্যা নিয়ে ভাবি না, আমার ক্ষমতাই বা কি! নিজের মত করে যা পারি, যতোটা পারি ততোটা যেন ঠিক মত করতে পারি! সবার জীবনে আলো জ্বালাতে হবে এমনতো নয়...বা জ্বালাবো এমন সাধ্য কই...তাই বলে কিছু মূহুর্তের জন্য, কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাঁবার যে সামর্থ্য আমার আছে, তা সমগ্র সমস্যার কথা ভেবে বা সবার জন্য করতে পারছিনা বলে, দুঃখে কাতর হয়ে বাকীদের বঞ্চিত করব কেন!
কত ভাবেইতো মানুষের মুখে হাসি ফোটাঁনো যায়। আমরা যে মানুষ, মানুষ হিসেবে আমাদের যে একটা দ্বায়িত্ব আছে এটা মাথায় রেখে একটু দাগের বাইরে পা ফেলতে হবে, ভাবতে হবে নিজেকে অন্যের জায়গায় বসিয়ে। মুখ বাঁকিয়ে চললে চলবে না, মানুষকে আপন করে নিতে হবে, ভাবতে দিতে হবে যে আমি তোমাদেরই একজন। আর কিছুনা হোক শুধু একটু আন্তরিক আচরণ, একটু উষ্ণ দুটো কথা...এও কিন্তু অনেকের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারে, তাইনা?
আমি যে পাচঁতারা হোটেলে কাজ করি, সেখানে সৌদি এরাবিয়া এয়ারলাইন্সের ক্রুরা প্রতিদিন দুই গ্রুপে থাকতে আসেন। তো স্বভাবতই সৌদি থেকে বাঙ্গালিরা এদের মাধ্যমে দেশে স্বজনদের জিনিসপত্র পাঠান।
আর এই জিনিসপত্র যারা নিতে আসেন, তারা বেশীর ভাগই নিতান্তই সাধারণ মানুষ, কাপড়ে চমক নেই...নেই ইংরেজীতে কথা বলার জ্ঞান, শুধু ওদের হাতে থাকে একটুকরো কাগজ, যাতে লেখা থাকে ক্রু’র নাম বা আইডি নাম্বার। আমাদের ব্যস্তদিনে এরা সেই কাগজ হাতে বারবার জানতে চায় যে সেই ক্রু এসছে কিণা বা এসে থাকলে একটু কথা বলে দেয়ার জন্য। কিন্তু আমার বেশ কিছু কলিগই ওদের রুম নাম্বার দিয়ে হাউস ফোন দেখিয়ে দেয়। তখন সেই লোকগুলোর চেহারায় দেখা যায় অসহায়ত্বের ছায়া...কারন ও যে ইংরেজী জানে না, পাঁচতারায় পা দিয়ে এমনিতেই তো হীনমণ্যতায় ভোগে, তার ওপর এই ইংরেজীর যন্ত্রণা! আমি সামনে থাকলে প্রথমেই কলিগকে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করি লোকটা স্যুট পরে এলেও কি ও একই আচরণ করতো? তারপর এগিয়ে যাই ফোনে ওদের মধ্যে যোগাযোগ করাতে। দেখতে পাই আমার এই হীনমণ্যতায় ভোগা দেশী মানুষটার চোখে কৃতজ্ঞতার ছায়া!
এতো গেলো একটা উদাহরণ...এমনি ঠিক অনেক ছোট ছোট কথা, চিন্তা, ইচ্ছা বা ঘটনা দিয়ে আমরা অন্য মানুষদের খুশী করতে পারি, পারি দাড়াঁতে অন্য মানুষের পাশে।
আরও যেটা পারি সেটা হচ্ছে, আমারা যে মানুষ সেটা বাকীদের জানান দিতে। কে জানে হয়তো যারা মানুষের ঘরে জন্মে আজও মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি, তাদেরও মানুষ হয়ে ওঠার ইচ্ছে জাগতে পারে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।