প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন আর নেই। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় তিনি কোমায় চলে যান। বিকেল পৌনে ৪টায় তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল হামিদ ডাবলুর বরাত দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান এ তথ্য জানান।
খোন্দকার দেলোয়ারের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার পাচুরিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মরদেহ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় তাঁর লাশ বাংলাদেশে পেঁৗছানোর কথা রয়েছে। পরে দেলোয়ারের আরমানিটোলার বাসা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সংসদ ভবন, মানিকগঞ্জের জন্মস্থানসহ কয়েকটি স্থানে জানাজা শেষে মানিকগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।
বুধবার সকালে খোন্দকার দেলোয়ারের শারীরিক অবস্থার আকস্মিক অবনতি ঘটে।
তাঁর শরীরের বিভিন্ন অর্গান অকেজো হয়ে যাওয়ায় দ্রুত মেডিক্যাল বোর্ড বসে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি। তাঁর মেয়ে দেলোয়ারা হোসেন পান্না বুধবার দুপুরে সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে জানান, অবস্থার উন্নতি ঘটায় তাঁর বাবাকে সোমবার হাসপাতালের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালে রক্তচাপ দ্রুত কমে যাওয়ায় তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরে নেওয়ার আগে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে দেলোয়ার চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি তিনি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। গুরুতর অসুস্থ দেলোয়ার হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৪ মার্চ সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিনভর কোরআনখানির আয়োজন করা হয়।
দলের নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এ ছাড়া পাঁচ দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমে শোকার্ত নেতা-কর্মীদের। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। একই অবস্থা দেখা যায় রাজধানীর আরমানিটোলায় খোন্দকার দেলোয়ারের বাসভবন ও এর আশপাশের এলাকায়।
খোন্দকার দেলোয়ারের নিজ নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুরসহ সারা দেশে শোক প্রকাশের খবর পাওয়া গেছে।
বিএনপির পাঁচ দিনের কর্মসূচি
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে পাঁচ দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে_১৭ মার্চ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন, ১৮ মার্চ বাদ জুমা দেশব্যাপী মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা-গির্জায় দোয়া ও প্রার্থনা, ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী কোরআনখানি, ২০ মার্চ শোকসভা এবং ২১ মার্চ মরহুমের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও মিলাদ মাহফিল। ১৭ থেকে ২১ মার্চ সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।
এ ছাড়া মহাসচিবের স্মরণে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শোক বই খোলা হবে।
খালেদা জিয়ার শোক
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল বুধবার দেওয়া শোকবার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে খোন্দকার দেলোয়ারের অবদান স্মরণ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থা জারির সময় খোন্দকার দেলোয়ারের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সময় গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক সরকারের আক্রমণ মোকাবিলায় তিনি (দেলোয়ার) যে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন, তা কোনো দিন ভোলার নয়।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমি বন্দি অবস্থায় তাঁর ওপর অর্পিত দলীয় মহাসচিবের দায়িত্ব তিনি অপরিসীম সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে বিএনপির ঐক্য, সংহতি ও পতাকাকে যেভাবে সমুন্নত রেখেছেন, সে জন্য আমাদের সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা তাঁর প্রাপ্য। ' তিনি প্রয়াত বিএনপির মহাসচিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, এম শামসুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
স্পিকারের শোক
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।
বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার বলেন, 'সাবেক সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করছি। ' সিঙ্গাপুর থেকে মরদেহ এলে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের শোক
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক জানিয়ে বিবৃতি দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণ সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির নিবেদিতপ্রাণ, একজন অনন্য বিশিষ্ট দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে হারাল।
সৈয়দ আশরাফ প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
জামায়াতের শোক
খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
তাঁরা বলেন, খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুতে জাতি একজন অভিজ্ঞ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্টারিয়ান ও সংগ্রামী নেতাকে হারাল।
তাঁরা মরহুমের রূহের মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।