আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুত, একজন রশীদ আর আমার তারুন্যে

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।

১৯৯৮ সালের ঘটনা। সারা দেশে বন্যার পানি। থই থই ভাসছে দেশ।

দেশের প্রায় ৫৫টি জেলা আক্রান্ত। যে কয়টি জেলা বেঁচে যায় তাদের মধ্যে কুমিল্লা আছে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে কুমিল্লার গুমতি’র পার ভাংগে। নিয়তি ক’দিন আগে যাদের বাঁচিয়েছিল-সেই নিয়তিই আবার ভালবাসার(!) বানে ভাসিয়ে দিল কুমিল্লাবাসীকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পারে পানি অবিচল আর দক্ষিন পারে পানি নেই।

রশীদ একজন রিক্সাচালক। রিক্সা যার জীবিকা, জীবন। কিন্তু রিক্সা নিয়ে যাবার পথে এমন মধুর গান তার কন্ঠে-অনেকেরি ভাল লাগে। কিন্তু ভাল লাগে না রশীদের কিছু আচরন। রাস্তায় মেয়ে দেখলে রশীদের চোখ কেমন জানি করে উঠে।

এ্টা সেটা নানান কথা বলে-তার কথা শুনে মেয়েরা লজ্জায় মুখ লুকায়। ওড়নার আঁচল টেনে মুখ ঢাকে। আর মনে মনে বকা দিয়ে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে। কে শুনে কার কথা। রইস্যা থামে না।

এই যুগের ভাষায় রইস্যা একজন ইভটিজার। এলাকার সিনিয়র মানুষেরা বকা দেয়-কাজে লাগে না। ছোট বেলা থেকেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার সখ আমার। কিছুটা পড়ালেখার ভান আর কিছুটা গল্পের বই অথবা ২ভাইয়ে বসে আ্ডডা। মধ্য রাতে রইস্যা যখন রিক্সা নিয়ে যায় আর গান গায়, মুগ্ধ হয়ে শুনি।

বেশ ভাল লাগে এই মধ্য রাতে শুনশান নীরবতা ভেঙ্গে তার গান গেয়ে চলা। তার চলার পথে ২টি বিরাট বট গাছ, গাছের নীচে পাশে কালী মন্দির তারপর লোকালয় পেড়িয়ে বড় শস্যক্ষেতের পরে তার গ্রাম। রশীদের কন্ঠস্বর অনেক দূর থেকে শোনা যায়। কোন এক কুক্ষনে রইস্যা’র মাথায় শ্রেফ পাগলামী খেলা করে। কালী মন্দিরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।

মন্দিরে কেউ নেই এখন। কাছে যায়। মট করে প্রতিমার ঘারটা ভেঙ্গে দেয়। দিয়ে তার রিক্সা নিয়ে চলে যায়। পরদিন এলাকায় ছড়িয়ে পরে রশীদের প্রতিমা ভাঙ্গার কাহিনী।

বেশ ক’দিন আর তাকে এই রাস্তায় দেখা যায়নি। কিছুকাল গেল। সব আবার আগের মত। রইস্যা আবারও রিক্সা নিয়ে চলে। গুমতি’র বাঁধা ভাঙ্গা বন্যায় রিক্সা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গ্যারেজে রেখে হেঁটে হেঁটে বাড়ি যায়।

কষ্ট হয় রশীদের। মাঝে পানিও পেরুতে হয়। একদিন মধ্যরাত। রশীদ রিক্সা রেখে হেঁটে চলছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বটগাছটার কাছে পাতাগুলো কেমন জানি নড়ছে শব্দ করে। একটু ভয় ভয় লাগে। মন্দিরের দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হয়। অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ডাকছে-এই রশীদ কাছে আয়, তোর সাথে গল্প করি।

এই রশীদ দেরী করিস কেন-কাছে আয়! রশীদ বুদ্ধি-বিবেচনা হারিয়ে ফেলে-রশীদের ভয় লাগে—ভীষন ভয়। দৌঁড় দেয়-সে কি দৌঁড়। পানি, কাঁদামাটি মেখে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে। সেই রাত থেকেই অনেক জ্বর তার। একদিন বেঁচেছিল রশীদ।

মারা যাবার আগে তার বউকে সব বলেছিল আর বলেছিল তার হয়ে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে সেই প্রতিমা ভাঙ্গার জন্যে। এই পরবাসে বসে আমার রশীদের গান এখনও কানে বাজে। আজকে ব্লগে ভুত নিয়ে বেশ ক’টা লেখা পড়ে মনে পড়ল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।