আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বৃক্ষের বাগান...

"I may disagree of what you say, but I will defend to the death - your right to say it." – Voltaire

আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা কে? কার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমগ্র জাতি এগিয়ে গেছে মুক্তির জয়গান গেয়ে? আমরা এতটা অকৃতজ্ঞ নই যে স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর অবদান অস্বীকার করব। আমরা যে দল বা গোষ্ঠী সমর্থন করি না কেন আমরা সবাই তো একথা মানি। “on behalf of Sheikh Mujib”- এ কথা বলে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করাতেই যে মেজর জিয়া বাঙ্গালীদের যুদ্ধে যেতে ঊদ্বূদ্ধ করেছেন তাতেও তো আমাদের কার দ্বিমত নেই। আমার মনে হয় আমরা স্বাধীনতার ঘোষক হিসবে জানি মেজর জিয়া কে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে? আমাদের কাছে প্রায় ভুলে যাওয়া একটি নাম – এম এ জি ওসমানী।

মুক্তিযুদ্ধে আমরা আমাদের সেনাবাহীকেও পেয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকেও পেয়েছি। তবে পাকবাহিনী কেন ভারতের জগজীৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করলো, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী তখন কোথায় ছিলেন তা সম্পর্কে আমি এমন কিছু জানতে পারি নি যাতে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি। আমাদের চার জাতীয় নেতার কথা মনে আছে কার? তাদের বউ-বাচ্চারা তো মূলধারার রাজনীতি থেকে অনেক দূরে। সে যাই হোক...যুদ্ধ পরবর্তি এই দেশে অনেক কিছু হয়েছে।

অনেক সামরিক অভ্যুথ্থান হল। জল অনেক দূর গড়াল...রক্তও গড়ালো। এখন দেশে চলছে নীরব গৃহযুদ্ধ। এক দল আরেক দলকে সহ্য করতে পারে নাহ। এক ধরনে তিতা তিতা সুখ লাগে যখন গণতন্ত্রের তসবি জপতে থাকা দলগুলোকে মূখোমুখি হতে দেখি।

তবে আমার মনে হয় আমাদের প্রজন্ম আস্তে আস্তে মূলধারা থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। আজ যদি কেউ আমাদের নেতা শেখ সাহেব কে নিয়ে কিছু বলার দুঃসাহস দেখায় তবে আমরা তার জন্য কাকে দায়ী করতে পারি? পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও –ধরে নিলাম সবাই মিথ্যে বলছে। কিন্তু চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে যাব কিভাবে? স্মৃতি এতটা দূর্বল ও নয়, প্রতারক ও নয়। হাসি পায় যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে ভোট যুদ্ধে জেতার জন্য একজন সামরিক শাসক,কিছু ফতোয়াবাজ কাঠমোল্লা আর বামপন্থীদের সাথে জোট বাঁধতে হয়। আমাদের উপর বিশ্বাস নেই? আমরা তো বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন আওয়ামী লীগ দেখতে চেয়েছিলাম।

সে যাই হোক...এখন দেশে যেমন চলছে তা হল – কেউ যদি বিএনপি করে তাহলে সে হল দূর্নীতিবাজ,রাজাকার এর সহযোগী। কেউ যদি জামায়াত করে তাহলে সে পাকিস্তানের দালাল,রাজাকার,পাক-বাহিনীর জারজ সন্তান। কেউ যদি আওয়ামী লীগ করে, তাহলে সে নিজেই নিরাপত্তাহীন; কখন কোন পাতিনেতা ধরে চর-থাপ্পর লাগায়। অবশ্য এখন সবাই নিরাপত্তাহীন। খুন,ধর্ষণ,লুট আর চাঁদাবাজী- যা ই হোক না কেন গ্রেপ্তার হবে শুধু বিরোধী দল।

একট কথা আমরা সবাই ভুলে যাই তা হল- মুজিব হত্যা, জিয়া হত্যা, রমনা বটমূল বোমা হামলা, ২১ আগষ্ট গ্রেণেড হামলা- এসব ঘটনার যদি পরিপূর্ন তদন্ত না হয় তাহলে এ জাতি নিরাপত্তা পাবে না কখনই। ক্ষমতা কোন দল/ব্যাক্তি চিরকাল পায় না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার হতে হয় দলীয় পরিচইয়ের ঊর্ধে। আজ আওয়ামী সরকার যদি নিজেদের পূণর্গঠন (তৃনমূল পর্যায় থেকে) এবং বিরোধী দলের বঞ্ছিতদের পূণর্বাসন করত তাহলে আমাদের মনে হত আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন সম্পুর্ণ ভিন্ন।

আমি যদি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনাও করে থাকি তাতেও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার এবং দেশদ্রোহি আখ্যায়িত হবার সম্ভাবনা প্রচুর। (এর মধ্যে যদি মারা যাই তাহলে তো লাশ নিয়ে কারাকারি পড়বে) তবুও খুব বলতে ইচ্ছে করে... দেশটা তো আমাদের সবার,তাই না? আসুন না...সবাই একট সহনশীল হই... নিজে যে দল করেন,তার বিরোধী দলের একজনকে নিয়ে বসে চা-নাস্তা খান...গল্প করেন। দেখবেন আপনারা সবাই বুকে পূষে রাখছেন একটি দেশ...বাংলাদেশ। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগরূক আওয়ামী লীগের উচিৎ এটা অনুধাবন করা যে মুজিব আমাদের সবার নেতা...আমাদের বট-বৃক্ষ। যার ছায়ায় আমরা স্বাধীনতার সীমানা খুঁজে নিয়েছি।

এটা নিয়ে এই প্রজন্ম দ্বিধাবিভক্ত নয়। সেই সাথে আওয়ামী লীগের এটাও অনুধাবন করা উচিৎ, এক বৃক্ষে বাগান হয় না। বৃক্ষের ছায়ায় অন্যদেরও বেড়ে উঠতে দিন। আমাদের স্বপ্ন দেখার অধিকার ছিনিয়ে নেবেন না...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।