বাস্তব-ন-বাস্তবের ঘোরে
(Ambrose Bierce এর ছোটগল্প An Occurrence at Owl Creek Bridgeৎ এর ছায়া অবলম্বনে)
সামিও শীশ
নিকষ অন্ধকার, সহ্যাতীত গরম। সন্ধ্যা থেকে এই নিয়ে তিনবার লোডশেডিং। রাস্তার ল্যাম্পগুলোও জ্বলছে না। আজহার আলির মেজাজ বিগড়ে আছে। আট বছরের ছেলেটা ঘ্যাঁনরঘ্যাঁনর করে এখন একটু থেমেছে।
ছেলেটা দিন দিন মাথায় উঠছে। গতকাল কিনেছে কালো সানগ্লাস। কয়েকদিন আগে কোন বন্ধুর কাছ থেকে দেখে তারপর খ্যাঁচখ্যাঁচ করে শেষ পর্যন্ত একটা খেলনার বন্দুক কিনেছে। মাঝে মাঝে আসলে একটু মাইর দেওয়া দরকার, নইরে বাচ্চাকাচ্চা ঠিক থাকে না। এই রকম কথা ভাবতে ভাবতেই বাতিটা জ্বলে উঠল, সিলিংয়ের ফ্যান ঘুরা আরম্ভ করল।
আজহার আলি সোফাতে গা এলিয়ে রিমোট কন্ট্রোলের নব ঘুরাচ্ছে। এলোমেলোভাবে চ্যানেল পরিবর্তন হচ্ছে। চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে খবর দেখে একটু থামল। সবাই বলে এখন অনেক স্মার্ট ছেলে-মেয়েরা মিডিয়া নিউজে এসেছে। আধো ঘুম চোখে খবর শুনছে, কিছু শুনতে পায়, কিছু কান দিয়ে ঢুকলেও সব কথা ঠিক মাথায় যাচ্ছে না,
“...বাহিনীর গুলিতে ....নিহত হয়েছে।
গোপন খবরের ভিত্তিতে গতরাতে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা... বাহিনীকে ল্য করে গুলি চালায়। আত্মরার্থে ...বাহিনীও তখন পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। দুই পরে গোলাগুলির এক পর্যায়ে .....গুলিবদ্ধ হয়ে মারা যায়। ” শুধু একটু নাম পরিবর্তন করে দাঁড়ি, কমাসহ ঠিক এই একই খবর ছয়বার পড়ছে।
ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার, ভ্যাঁপসা গরম আজহার আলি খালের উপরে ব্রিজের দাঁড়িয়ে আছে।
তার পিছনে তিনজন উঁচা-লম্বা লোক দাঁড়িয়ে। তাদের গা কালো শার্ট-প্যান্ট, মাথাও কালো কাপড়ে ঢাকা। এমনকি এই ঘন অন্ধকারেও চোখে কালো সানগ্লাস। আজহার আলি ব্রিজের একপাশে দাঁড়িয়ে। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের মধ্যে একজন তার দিকে বন্দুক তাক করছে।
গুলি ছোঁড়ার আগেই আজহার আলি লাফ দিয়ে খালে পড়ল। সে খালের পানিতে সাঁতার কাটে। সাঁতার কাটতে কাটতে খালের ধারে পৌঁছে। দূরে কোণায় দেখে কালো পোশাকদলের একজন দাঁড়িয়ে। তার মনে হচ্ছে গা বেয়ে গরম পানি ঝরছে।
সানগ্লাস পরা বিকট একজন দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বন্দুক। আজহার আলির দিকে তাক করা। আজহার আলি উল্টো দৌঁড় দিল। আজহার আলি ছুটছে।
রাস্তায় কোথাও কোনো বাতি নেই। অন্ধকারের মাঝেই সে দৌঁড়াচ্ছে। তার পিছনে কালো পোশাকে তিনজন হাঁটছে।
ঘটঘট আওয়াজ করে ঘরের দরজার কড়া নাড়ছেন আজহার আলি। বিদ্যুৎ নেই, তাই কলিং বেল কাজ করছে না।
ঘরের ভিতরে ঢুকে হাঁপাতে, হাঁপাতে সোফায় বসল। কান্তিতে গা এলিয়ে আসছে। হঠাৎ তার ছেলেটা চোখে সানগ্লাস পরে, হাতে বন্দুক নিয়ে তার দিকে তাক করছে। আজহার আলি উঠে দৌঁড়াতে যাচ্ছে, দেখে আরেক দিকে কালো কাপড়ে মাথা ঢাকা ও গায়ে কালো পোশাক পরা, কালো সানগ্লাস চোখে উঁচা-লম্বা তিনজন তার দিকে তাক করে আছে। হঠাৎ তাদের একজন বলল, “ক্রস ফায়ার।
”
শুয়ে শুয়ে আজহার আলি খবরে শুনছেন, “...বাহিনীর গুলিতে আজহার আলি নিহত হয়েছে। গোপন খবরের ভিত্তিতে গতরাতে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা ...বাহিনীকে ল্য করে গুলি চালায়। আত্মরার্থে ...বাহিনীও তখন পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। দুই পরে গোলাগুলির এক পর্যায়ে আজহার আলি গুলিবদ্ধ হয়ে মারা যায়। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।