আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ মুজিবের পতন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকায় তৎকালীন বিশ্লেষন

দেশ কে ভালবাসি এই যদি হয় আমার অন্যায় তবে আমি অপরাধী

শেখ মুজিবের পতনের কারন কি? এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগ কখনো তার অবস্থান পরিস্কার করেনি। জাতির সামনে যে প্রোপাগান্ডাটি অনবরত চলতে থাকে তা হল কতিপয় বিপথগামী সেনা অফিসারের ক্যুতে শেখ মুজিব নিহত হয়? স্বাধীনতা পূর্ব নেতা মুজিব কে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর মুজিবকে কোন অবস্থাতেই আমি একজন নেতার আসনে বসাতে পারিনা। সেটা যতটা না মুজিবের অন্যায় আর অবিবেচক সিদ্ধান্তের জন্য তার থেকে তার চারপাশের চাটুকারদের জন্য। মুজিবের আশেপাশে যত চাটুকার ছিল তারা ব্যাক্তি মুজিবকে একটা “মহাপুরুষ” এর আবরন দেবার চেষ্টা করছিলো আর ব্যাক্তি মুজিব তোষনকারীদের পছন্দ করত।

তো এই মহাপুরুষের আবরনটা এমনই ছিল যে কেউ কোন অন্যায় করে শুধু মুজিবের নাম বললেই সেই অন্যায় জায়েজ হয়ে যেত। মুজিব হয়ে উঠেছিল “পরশ পাথর”। অথচ ব্যাক্তি মুজিব ছিলেন দোষে গুনে মিলিয়েই মানুষ। হ্যা এটা অস্বীকার করার উপায় নেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাক্তি মুজিব এক বিরাট প্রভাব রাখছে। মানুষ ও তাকে সেই ভাবে শ্রদ্ধা করছে।

কিন্তু সেই প্রভাব স্বাধীনতা উত্তর কালে অন্যায় ভাবে মানুষের দূর্বিষহ যন্ত্রনা দিয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ সেটাতো ভুলে নাই। কেন একজন অসাধারন নেতা যার কথায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল অথচ চার বৎসরের মাথায় তার মৃত্যুতে মানুষ কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে? এনিয়ে সামাজিক ইতিহাসবেত্তাদের অনেক কিছু গবেষনার আছে। একটা অসাধারন ক্রস সেকশান হতে পারে ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতাদের সামনে অথচ বর্তমানে সেই চল্লিশ বছরের পুরানো ভূত আবারো আমাদের মাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যেটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা।

আসলেই কি শেখ মুজিব হত্যাকান্ড কি কতিপয় সেনা অফিসারের আক্রোশ? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে দেশের সাধারন মানুষদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? ততকালীন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কি ভাবে নিয়েছিল শেখ মুজিবের হত্যাকান্ড? প্রথমে আমরা তাকাই দেশের ভেতরে। আপনারা জানেন ততকালীন বাকশালী নজরদারীতে মাত্র ৪টি পত্রিকা প্রকাশিত হোত। এরমধ্যে অন্যতম হল দৈনিক ইত্তেফাক। আগষ্ট ১৭, ১৯৭৫ সাল ইত্তেফাকে পরিস্কার বলা আছে মুজিব হত্যায় মানুষজন স্বস্ত্যির নিঃশ্বাস ফেলছে এমন কি মানুষজন কোলাকুলি ও করেছে। আসুন দেখি বিদেশী পত্রিকাগুলো কি লিখছে মুজিবের পতন সন্মধ্যে? হংকং থেকে প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিকমানের সাপ্তাহিক হোল “ফার ইষ্টার্ন রিভিউ”।

এর ২৯ আগষ্ট সংখ্যায় শেখ মুজিবের পতনের কারন নিয়ে বিশ্লেষন করা হয়েছে। সেখানে পরিস্কার লেখা আছে অহং সর্বস্ব কর্তৃত্ববাদ, ব্যাক্তিগত অতিরিক্ত ক্ষমতার মোহ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী নিরসনে অক্ষমতা শেখ মুজিবের পতন ডাকিয়া আনে। এই পত্রিকায় আরো বলা আছে, স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৭৫ সালের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে শেখ মুজিব যে আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে সে আসনের তিনি উপযুক্ত না। এমনকি পাকিস্তানী শাষনের আড়াই দশকেও এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি, দূর্নিতি কালোবাজারী সংস্কৃতি দেখা যায়নি। দৃশ্যতঃ তিনি তোষামোদে নন্দিত হয়েছিলেন বাহ্যিক ভূমিকায় তুঙ্গে উঠেছিলেন।

উপরে তিনি কর্তৃত্ব দেখালেও ভেতরে তিনি ছিলেন অন্তঃসার শূন্য। ফার ইষ্টার্ন রিভিউয়ের মতে প্রথমতঃ তাহার অতিরিক্ত ব্যাক্তিগত ক্ষমতার মোহ ছিল, দ্বিতীয়তঃ তাহার একটি হীনমন্যতা ছিল তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবজাত, তৃতীয়তঃ বাংলার বুদ্ধিদীপ্ত তর্কবাজ বুদ্ধিজীবিদের সাথে শেখ মুজিব কখনো সহজ হতে পারেনি, প্রাজ্ঞ আমলাদের সহিত ও তিনি কখনো স্বাচ্ছ্যন্দ অনুভব করেন নি। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। মুজিব নিহত। ডেইলি টেলিগ্রাফ ১৬ ই আগষ্ট লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলী টেলিগ্রাফে মুজিব হত্যা নিয়ে বলা আছে সেনাবাহিনীর প্রতি শেখ মুজিবের অনাস্থা এবং নিজের ক্ষমতা সংহত করার উদ্দ্যেশ্য ব্যাক্তিগত বাহিনী পোষন ই শেখ মুজিবের নিহত হবার প্রধান কারন।

ওই একই আর্টিকেলে শেখ মুজিবকে শোচনীয় রকম দূর্বল শাষক বলে অভিহিত করা হয়েছে। আরো বলা আছে চোখের সামনে তাহার পার্শ্বচরদের এবং দেশ ব্যাপী চরম দূর্নিতীর সাথে আপোষ ও মুজিব পতনের অন্যতম কারন। গার্ডিয়ান ১৬ই আগষ্ট গার্ডিয়ান লিখেছে, মান্ধাতা রাজনীতিকদের মত হীন ধূর্ততা শেখ মুজিবকে তলিয়ে দিয়াছে। নিজের মর্যদা পূনোরুদ্ধার এবং পরিস্থিতি অনুকূলে আনার উদ্দ্যেশ্য একচেটিয়া ক্ষমতার দাপট ও বামপন্থার পায়তাড়া মুজিব পতনের কারন হিসাবে এই পত্রিকাটি দেখিয়েছে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হবার পর ১২০০ কোটি পাউন্ড ষ্টার্লিং বৈদেশিক সাহায্য পাবার পরও দেশে দূর্ভিক্ষ আর দূর্নিতীবাজ চাটুকারদের দ্বারা পরিবৃত শেখ মুজিব অন্ধের মত তাদের সাপোর্ট দেয়া তার পতনকে ত্বরান্বিত করে।

সবশেষে গার্ডিয়ান লেখে, মুজিব তার দেশের নিকট অনেক অঙ্গীকার দিয়েছেন কিন্তু কার্যকরী করেছেন খুব কম। সানডে টাইমস সানডে টাইমসের ১৭ই আগষ্ট ১৯৭৫ এ এ্যান্থনী মাসকারেনহাস লিখেছেন চার বছরের মাঝে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গশত্রুতে পরিনত হয়েছে। তিনটি কারনে মুজিবের পতন হয়েছে এক, নিজে সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হয়েও সেনাবাহিনীর সাথে বিমাতাসূলভ আচরন, এক্ষেত্রে তিনি মেজর ডালিমের স্ত্রীকে শেখ মুজিবের অনুচর গাজী গোলাম মোস্তফা কৃত অপমানের কথা উল্লেখ্য করেন। মেজর ডালিমের স্ত্রীকে গাজী গোলাম মোস্তফার ভাই নিগৃহিত করলে প্রতিশোধ স্পৃহায় তিন ট্রাক আর্মি অফিসার গাজীর বাড়ী ঘেরাও করে। গোলাম মোস্তফা জানের ভয়ে শেখ মুজিবের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

সেখানে মেজর ডালিম উপস্থিত হলে তুমুল কথাকাটির পর মেজর ও তার স্ত্রীকে ছাড়িয়া দেবার আগে মুজিব জওয়ান দিগকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য চরম গাল মন্দ করে এবং পরে নয়জন অফিসার কে বরখাস্ত করে। দ্বিতীয় কারনঃ ইসলামের অমর্যদা, ১৯৭২ সালের প্রনীত সংবিধানে ইসলাম কে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত দেয়া হয়নি। “হাজার মসজিদের নগরী” র বাসিন্দাদের প্রানের দাবী ছিল ইসলাম হোক রাষ্ট্রীয় ধর্ম। তৃতীয়তঃ মুজিব জনগনের নিকট আকাশ কুসুম প্রলোভন দিত। এ প্রসঙ্গে আদমজী জুট মিলে বেতন দেবার ব্যাপারটি এ্যান্থনী মাসকারেনহাস উল্লেখ্য করেন।

এই বেতন দেয়া প্রসঙ্গে জাতিসঙ্গের এক কর্মচারী মন্তব্য করেন, “বঙ্গবন্ধুই বলে দিতেন আজ রোদ উঠবে না বৃষ্টি হবে”। মুজিব নিজের কফিনে নিজের শেষ পেরেক ঠুকেন পার্লামেন্টারী পদ্ধতি বিসর্জন দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি ও সোভিয়েত ক্যাডার পদ্ধতির এক বিচিত্র মিশ্রনে বাকশাল নামে একদলীয় শাষন ব্যাবস্থা প্রবর্তন। এই লেখা কোন মতেই ব্যাক্তি মুজিবকে খাটো করার উদ্দ্যেশ্য না। এ লেখার প্রতিটি লাইন রেফারেন্স দেয়া আছে। ব্যাক্তি পুজা বাদ দিয়ে আমাদের বাস্তবের দিকে নজর দিতে হবে।

জানতে হবে কেন মুজিবের মত নেতা ৪ বছরের মাথায় নৃষংশ ভাবে নিহত হয়েছিল। দুঃখ জনক হলেও সত্যি ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আর ইতিহাসের পূনারাবৃতি এভাবেই ঘটে। শেখ মুজিবের পতন এর কারন গুলো বিশ্ব প্রচার মাধ্যম যেভাবে বিশ্লেষন করেছে সেই একই ভূল এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা করছেন। জানিনা এর শেষ কি ভাবে হবে।

তবে এখন আর সেই জমিদারীর যুগ নেই রাজার ছেলে রাজা হবে। মানুষ যোগ্য নেতৃত্ব দেখতে চায়। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন মানুষ ছিল এক রকম অন্ধ। মাইক ছিল শুধু উনার হাতে। উনি যদি বলতেন সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠছে আমদের বিশ্বাস করতে হোত যে সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠছে।

এখন মাইক আমাদের হাতেও আছে। সেই সব বেদ বাক্য বিশ্বাস করার দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন বলতে পারি সূর্য পূর্ব দিক দিয়ে ওঠে। আর হ্যা যত তাড়াতাড়ি শেখ হাসিনা listening to the wind হবেন তত তাড়াতাড়ি উনার জন্য মঙ্গল আমাদেরও মঙ্গল। গোয়ার্তুমি করবেন না।

আপনার গোয়ার্তুমিতে শুধু আপনার না দেশের ও অমঙ্গল। নিজে বাচুন আমাদেরও বাচতে দিন। আর আপনার পিতাকে নিয়ে আপনার লোকজন যত কম মিথ্যাচার করবে তত মঙ্গল হবে। মান কিন্তু আপনার বাবার যাচ্ছে যখন মিথ্যা প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। একজন জাতীয় নেতার সন্মান রক্ষার্তে দয়া করে পর্নোগ্রাফির লেখক কে দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করবেন না।

আপনার কাছে কোনটা বড় আপনার বাবার সন্মান নাকি আপনার ক্ষমতার মোহ? প্রত্যেক জাতীয় নেতাকে তার তার যোগ্য সন্মান দিতে শিখুন। দেখবেন সবাই আপনার বাবাকে যোগ্য সন্মান দেবে। জোর করে সন্মান আদায় করতে হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।