আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টান টান উত্তেজনাময় গল্পঃ হিমুর হাতে কয়েকটি নোবেল প্রাইজ

'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...'

১। আমি এখন দাড়িয়ে আছি বসুন্ধরা সিটির সামনে। আজকালকার ঢাকা শহরে বেশ একটা পরিবর্তন এসেছে। আগে রুপবতী তরুনীদের একা একা হাঠতে দেখা যেতো। এখন আর সেটা দেখা যায় না।

সব সময় রুপবতীদের সাথে একটা করে চ্যাংড়া ছেলে থাকে। আমি একটা চ্যাংড়া ছেলে আর একটা রুপবতী মেয়েকে ফলো করছি। এরা মার্কেটের ভিতরে হাত ধরাধরি করে হেটেছে। এখন মার্কেট থেকে বেরিয়ে একটা বাইকে উঠেছে। বাইক স্টার্ট দেয়ার আগে দেখলাম মেয়েটার হাত ছেলেটার বিশেষ যায়গা ছুয়ে গেলো।

আমার অবাক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হলাম না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি সবার জ্বিনে লিখে রেখেছে- "তুমি যখন তোমার বয় ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে উঠবে তখন আলতো করে তার বিশেষ যায়গায় ছুয়ে দেবে। নিজেদের জন্য এটা করবে না, করবে আমার নিয়ম মানার জন্য।

আমি নিয়ম বানিয়ে দিয়েছি। এই নিয়ম তোমাকে মানতেই হবে”। এ ব্যাপারে আমার বাবার একটা বানী ছিলো। কিন্তু বানীটা এখন মনে আসছে না। মনে করার চেষ্টা করছিলাম।

হঠাৎ পেছন থেকে কে জানি ডাক দিলো- - “এই হিমু!” আমি ঘুরে তাকালাম। চোখ পিট পিট করে চারিদিকে খেয়াল করলাম। দেখলাম পিছনে বোরখা পরে কে জানি দাঁড়িয়ে আছে। নেক-আপ দিয়ে মুখ ঢাকা। - “কিরে! চিনতে পারছিস না? আমি তোর সাহারা খালা।

সাহারা খাতুন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছি। দাড়া। নেক-আপ খুলি। নেক আপ খুললে চিনতে পারবি।

” সাহারা খালা নেক-আপ খুলে আমার সামনে দাড়ালেন। আমি আনন্দে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। - “ওয়াও! সাহারা খালা! কি সুইট। কত্তোদিন পরে তোমার সাথে দেখা। আছো কেমন?” - ভালো নাইরে।

অনেক সমস্যায় আছি। তোকে আমার সাথে যেতে হবে। - কোথায়? - "প্রধানমন্ত্রীর কাছে। " শুনে আমার চুক্ষু পুরা চড়ক গাছ হয়ে গেলো। আচ্ছা! চড়ক গাছ দেখতে কি রকম! এটা কি শীতকালীন বৃক্ষ? নাকি গৃষ্মকালীন? এটাতে কি ফুল হয়? হলে সেই ফুলের রঙ কি রকম?” সাহারা খালা হালকা কাশি দিলেন।

- “কিরে! ভ্যাবদা খেলি নাকি?” আমি আবার অবাক হলাম। আচ্ছা! ভ্যাবদা কি জিনিষ? ভ্যাবদা খেলে কি হয়? এটা খেতে কি রকম? টক? ঝাল? নাকি মিষ্টি? সাহারা খালা বললেন। -“চল আমার সাথে। তোকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেই”। আমি বললাম- “তথাস্তু!” ২।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হচ্ছে। - “বুঝলে হিমু! তোমার কথা অনেক শুনেছি। তুমি নাকি যেকোন সমস্যা সমাধান করে দিতে পারো!” আমি মধুর ভঙ্গীতে হাসলাম। - “তাছাড়া তোমার নাকি সুপার ন্যাচারাল পাওয়ারও আছে” আমি আবার হাসলাম। - “তাহলে শুনো! তোমাকে যে জন্য ডেকেছি! আমি বিরাট ঝামেলায় পড়েছি।

আমার ঘরে এত্তো এত্তো পুরষ্কার! এত্তো এত্তো ডক্টরেট সার্টিফিকেট! কিন্তু একটা নুবেলও নাই। এটা কোন ব্যাপার হলো?” আমি চোখে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বললাম - “অতি খারাপ ব্যাপার। এটা ষড়যন্ত্র। জাতির পিতার স্বপ্নের পরিপন্থি” - “এইতো তুমি বুঝেছো! কিন্তু সমস্যাটা হলো কোথাকার কোন ইউনুসের নাকি একটা নুবেল আছে। কি তাজ্জব ব্যাপার! ঐ ইউনুস আবার আমার দলের লোক না!” - "এখন আমার কি করতে হবে প্রধানমন্ত্রী? " - “তোমাকে ঐ ইউনুস ব্যাটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটা লাইনে আনতে হবে।

আর আমার জন্য একটা নুবেলের ব্যাবস্থা করতে হবে। ” আমি তুড়ি মেরে বললাম - “তথাস্তু। ” - “তোমার আর কোন প্রশ্ন আছে হিমু?” - "একটা প্রশ্ন আছে। চড়ক গাছ দেখতে কি রকম! এটা কি শীত কালীন বৃক্ষ? নাকি গৃষ্মকালীন? এটাতে কি ফুল হয়? হলে সেই ফুলের রঙ কি রকম?” প্রধানমন্ত্রী বললেন- - "এটা কোন ব্যাপারই না। সংসদের আগামী অধিবেশনেই চড়ক গাছ বিষয়ক একটি কমিটি করে দেবো।

দিপু মনি ঐটার সভাপতি থাকবে। ঐ প্রকল্পের জন্য আমি ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করবো। তুমি নিশ্চিত থাকো। ডিজিটাল সরকার চড়ক গাছের গোষ্টি উদ্ধার করেই ছাড়বে। " ৩।

আমি আর ডক্টর ইউনুস মুখোমুখি বসে আছি। - “ইউনুস সাহেব! আপনার সামনে মহা বিপদ। আপনার খবর আছে। ইউ হ্যাভ নিউজ ম্যান!” ইউনুস সাহেব মুখ কালো করে বললেন, - “এখন আমাকে কি করতে হবে?” আমি কানে কানে ইউনুস সাহেবকে কিছু কথা বললাম। তারপর বললাম- “বাচতে হলে আপনাকে এগুলো করতেই হবে।

” ইউনুস সাহেব বিরস বদনে বললেন - “তথাস্তু!” ৪। পরদিন পত্রিকায় আসলো- “ইউনুস সাহেব ছাত্রলীগে যোগদান করেছেন। তিনি নাম বদলে নিজের নাম রেখেছেন শেখ ইউনুস। এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ইউনুস বলেন- বংগবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান” আমি পত্রিকা পড়ে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম। যাক! ইউনুস সাহেব বিপদ থেকে বাচলেন।

৫। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ হচ্ছে। - সাবাশ হিমু। তুমি ইউনুসকে আমাদের দলে ভেড়াতে পেরেছো। তোমাকে জাঝা”।

আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম। প্রধানমন্ত্রী বললেন- "এবার তাহলে নোবেল সমস্যার একটা সমাধান করো। " আমি প্রধানমন্ত্রীর কানে কানে কিছু কথা বললাম। তারপর বললাম এগুলো করতে পারলেই নোবেল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শুনে দারুন খুশি হলেন।

- “হিমু! ইউ আর এ জিনিয়াস” ৬। পরদিন পত্রিকায় আসলো- “১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু নোবেল পুরষ্কার’ চালু করা হয়েছে। প্রথম বার এই পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা” আমি আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম। যাক জননেত্রীর মান সম্মান রক্ষা হলো। একটা নুবেল অন্তত পাইয়ে দেয়া গেলো।

এবার চড়ক গাছ রহস্যের সমাধানের জন্য অপেক্ষা। পার্সোনাল ব্লগ সাইটে অন্যান্ন অপ্রকাশিত লেখার সাথে পূর্বে প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।