খুব ছোট বেলায় হতে চেয়েছিলাম বাবা, প্রাইমারিতে পড়াকালীন শিক্ষক, মাধ্যমিকে থাকাকালীন আলিম, উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীন ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম, এখন আমি মানুষ হতে চাই…
Medicine, Surgery, Gynecology এসব বিষয় মূলত চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার (Final Professional MBBS Examination) বিষয় হলেও প্রথম পেশাগত পরীক্ষার পর অর্থ ৩য় বর্ষ থেকেই ward এ ক্লাস করতে হয়। আমার surgery ward ২ সপ্তাহ আগে শুরু হলেও ওটিতে গেলাম আজ প্রথম। ওটিতে ছিলেন ৪ জন surgeon, ১ জন anesthetist, ১ জন internee আর আমরা ১০ জন শিক্ষার্থী। ২ বছর ৬ মাস বয়সের ১২ কেজি ওজনের ছেলেটি Hydro-nephritis রোগে আক্রান্ত। আগে জানতাম কাটার জন্য surgical knife ব্যবহার করা হয়, কিন্তু আজ দেখলাম এক নতুন ইলেকট্রিক যন্ত্র।
যন্ত্রটির নাম ডায়াথারমিক। এই যন্ত্রে রোগীর শরীরসহ একটি circuit বানানো হয়। যন্ত্রটি থেকে বেরিয়ে আসা দুটি তারের একটির মাথায় থাকে একটি প্লেট যা পিঠ বা পায়ের নিচে চাপা দেয়া হয় আর বাকিটার মাথায় থাকে কলমের মত একটি অংশ। কলমের মত অংশটি knife এর কাজ করে। কলমের মত অংশটি রোগীর শরীরে স্পর্শ করলে circuit সম্পুর্ণ হয় আর মুহুর্তের মধ্যে এর নিবের তাপমাত্রা ১০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ পরিণত হয়।
এই তাপে রোগীর ত্বক কাটে। Knife এর পরিবর্তে এই যন্ত্র ব্যাবহারের সুবিধা হল কর্তিত স্থানে নিবের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সাথে সাথে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে দেখা যায় অনেক কম রক্তপাতে অপারেশন সম্পন্ন হয়। রোগীকে যদি সম্পুর্ণ অজ্ঞান (General Anesthesia) করা হয় তবে তাকে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। সেক্ষেত্রে anesthesia-র ডাক্তার অপারেশন চলাকালীন পুরা সময় বেলুনের মত একটি একটি বস্তু প্রতি ২ সেকেন্ড পর একটি করে চাপ দিয়ে রাগীর শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখেন, তখন এই বেলুনের মত বস্তুটি ফুসফুসের কাজ করে।
General anesthesia দেয়া হলে রোগীর Heart ছাড়া বাকি সব মাংসপেশি অচল হয়ে যায়। তাই এই কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা। সার্জিকাল নাইফের পরিবর্তে ডায়াথার্মিক ব্যবহার যেমন অনেক সুবিধাজমক, তেমনি এর একটি অসুবিধা হল এতে তুলনামূলক একটু বেশি সময় লাগে অপারেশানটি সারতে। ডায়াথার্মিক দিয়ে স্যার যখন Incision শুরু করলেন তখন চামড়া পোড়ার তীব্র গন্ধে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। মাথা ঘোরার আরেকটি কারণ যা মনে হল তা বলতে লজ্জা লাগছে।
বলেই ফেলি, আমার কাছে পিচ্চি বাচ্চার শরীর কাঁটা কেমন যেন অমানবিক মনে হল। ১ম বর্ষে পড়াকালীন যে মেয়েটি রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার প্রাক্টিকাল ক্লাসে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল বলে তাকে আমরা অনেকদিন ভিতু বলে খেপিয়েছিলাম, সেই মেয়েটিও আমার পাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে অপারেশান দেখছে, আর আমি ভয় পাচ্ছি! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ওটি থেকে এমন একটি ভাব নিয়ে বেরিয়ে আসলাম যেন খুব জরুরি কোন কাজে যাচ্ছি। বাইরে এসে পানি খেয়ে আবার কিছুক্ষণ পর গিয়ে আরো কিছুক্ষণ দেখলাম। আমার উচ্চতাজনিত সমস্যার কারণে ভিড় ঠেলে সামনে যেতে না পেরে anesthesia আর এই যন্ত্রগুলির খুঁটিনাটি কিছু জানে নিলাম। ততক্ষণে আমার ক্লাসের সময় শেষ।
প্রথম ওটি দেখার বিড়ম্বনাময় অভিজ্ঞতা নিয়ে বেরিয়ে এলাম, অপারেশনের শেষটা আর দেখা হল না।
বিঃদ্রঃ – স্যারের সামনে মোবাইল বের করে ছবি নেবার দুঃসাহস দেখাতে পারি নি, তাই কোন ছবি দিতে পারলাম না। আগামীতে ছবিসহ বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।