চলো এগিয়ে যাই
ঢাকা, মার্চ ০৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ‘অননুমোদিত’ পুনঃনিয়োগের কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণের সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ।
অপসারণ বিষয়ে সরকারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বহু সংখ্যক ব্যক্তিকে ইমেইল করেছেন সজীব আহমেদ।
বেআইনিভাবে পদে থাকার অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেলজয়ী ইউনূসকে অপসারণে বুধবার আদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার রিট আবেদন করেন ইউনূস।
ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ জন পরিচালকের নয় জন একই দিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চে আরেকটি রিট আবেদন করেন।
ওই আবেদনেও ইউনূসকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে- প্রচলিত এরকম ধারণা ঠিক নয় বলে ইমেইলে মন্তব্য করেন সজীব।
তিনি বলেন, “[ব্যাংকটি] প্রতিষ্ঠা করেছিলো বাংলাদেশ সরকার। শুরুতে সরকারের ৬৫ শতাংশ মালিকানা থাকলেও ইউনূস তা ধীরে ধীরে কমিয়েছেন। সরকারের এখনো ২৫ শতাংশ মালিকানা আছে এবং সরকার এর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে ভেটো দেওয়ার অধিকার রাখে।
”
‘কয়েক কোটি ডলারের হিসেব নেই’
নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিশিনে ইউনূসের অধীনে গ্রামীণ ব্যাংকে ব্যাপক আথির্ক অনিয়মের খবর গতবছর প্রকাশ হয়- এ কথা উল্লেখ করে সজীব আহমেদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে দাতাদের দেওয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার ইউনূসের তৈরি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তরের প্রামাণিক নথি প্রকাশ করে এই টেলিভিশন।
“নরওয়ে সরকার এ বিষয়টিকে প্রবল আপত্তি তোলে এবং সমঝোতা হিসেবে তিন কোটি ডলার ফেরত যায় [গ্রামীণ ব্যাংকে]। বাকি প্রায় সাত কোটি ডলার কখনো ফেরত যায়নি। এ বিষয়ে সব যোগাযোগ করেছিলেন ইউনূস নিজে। ”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ প্রকাশিত চিঠিগুলো এবং নরওয়ের টেলিভিশন এনআরকে’র ‘response to the Norwegian government’s recent review’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দেন সজীব।
গ্রামীণ ব্যাংক কোনো অনিয়ম করেনি- নরওয়ে সরকারের দেওয়া এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনআরকে।
সজীব বলেন, “সা¤প্রতিক এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদবির (লবি) গোষ্ঠী ও প্রচারমাধ্যম যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে ইউনূস নরওয়ে সরকারের কাছেও তদবির করেছেন। যাইহোক, তাদের ব্যাখ্যায় কয়েক কোটি ডলারের কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি। ”
এ ঘটনায় সরকার একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি করতে বাধ্য হয়- এ কথা উল্লেখ করে সজীব বলেন, “ইউনূস একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে (যেখানে কোনো প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি) বলেছিলেন কর এড়াতে এ তহবিল স্থানান্তর করেছিলেন তিনি; এর মধ্যে কর ফাঁকিও আছে।
“এ বক্তব্য একেবারেই অর্থহীন কেননা গ্রামীণ ব্যাংক তখন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিলো এবং এর কর দিতে হতো না।
এই স্থানান্তর সম্পূর্ণ বেআইনি এবং বাংলাদেশের আইনে এটি অর্থ পাচারের মতো অপরাধ। ”
আরো অনিয়ম প্রতারণা
ইউনূসের অধীনে গ্রামীণ ব্যাংকে আরো প্রতারণা, অনিয়ম ও বেআইনি কর্মকাণ্ড পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রকাশ হয় বলে দাবি করেন সজীব আহমেদ।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালে সব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ‘সঞ্চয়ের নামে’ জোর করে নেওয়া অর্থ যা পরবর্তী সময়ে তাদের ফেরত দেওয়া কথা।
“তবে ওই অর্থ কখনোই ঋণগ্রহীতাদের- যারা সমাজে সবচেয়ে দরিদ্র- ফেরত দেওয়া হয়নি। ”
“এটা প্রতারণা এবং চুরি।
”
দ্বিতীয়ত, দাতাদের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানধীন লাভজনক প্রকল্পে ব্যবহার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাতা বা সরকারের অনুমোদন নেওয়া হয়নি; যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের।
“কয়েকটি ক্ষেত্রে এই ব্যাক্তি মালিকানার প্রকল্পগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের হাতে ছিলো না, বরং এগুলো ছিলো ইউনূস ও তার পরিবারের সদস্যদের। এটা পুরোপুরি বেআইনি এবং প্রতারণার শামিল। ”
সজীব আহমেদ লিখেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকটিকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি; কেননা গ্রামীণ ব্যাংক প্রথাগত কোনো ব্যাংক নয়।
এটা দাতাদের তহবিল থেকে ঋণ দেয় এবং এবং শুধু ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকদেরই এর ঋণ দেওয়ার অনুমোদন আছে।
তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় এবং ‘সঞ্চয়ের নামে’ জোর করে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ নেয়।
গ্রহীতাদের কাছ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ আদায়ের পদ্ধতি নিষ্ঠুর- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব আহমেদ বলেন, যারা অর্থ আদায় করতে পারেন না তাদের বেতন থেকে বাকি অর্থ কেটে নেওয়া হয়।
“এমন বহু প্রামাণ্য ঘটনা আছে যেগুলোতে নিষ্ঠুরতার প্রমাণ রয়েছে এবং বাংলাদেশের আইনে সেগুলোর প্রেক্ষিতে নিপীড়নের ফৌজদারী অভিযোগ আনা যায়। ”
তিনি বলেন, “আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো প্রচারমাধ্যমে আসার পর ওইসব ঘটনা শিকার পরিবাগুলো শেষ পর্যন্ত ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পেয়েছে।
”
‘৩০ বছর পরও বাংলাদেশ দরিদ্রতম’
সজীব আহমেদের মতে, প্রচার থাকলেও এমন কোনো প্রমাণ নেই যাতে বলা যায় বাংলাদেশে দরিদ্রের সংখ্যা কমানোয় ক্ষুদ্রঋণ কোনো ভূমিকা রেখেছে।
“গ্রামীণ ব্যাংক গত ৩০ বছর ধরে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করছে, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। ”
সজীব বলেন, “উপরন্তু, গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করে বেসরকারি খাতে যে বিনিয়োগ হযেছে তা বেশ লাভজনক হয়েছে।
“মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে এখন পর্যন্ত গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান যার গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ৮০ লাখ। এটি প্রতিবছর কয়েকশ মিলিয়ন ডলার লাভ করে।
”
গ্রামীণফোনের ৩৫ শতাংশ মালিকানা গ্রামীণ ব্যাংকের, কাজেই তাদের কেন উঁচু হারে সুদ নিতে হবে দরিদ্রদের কাছ থেকে?- প্রশ্ন তোলেন সজীব আহমেদ।
‘ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই’
সজীব আহমেদ জানান, ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী- এ কারণে ওইসব ঘটনা সত্ত্বেও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ নীরবে ছেড়ে দিতে তাকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার।
“তিনি ওই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমাদের সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার [ইউনূসের] বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিয়েছেন- এরকম অভিযোগ প্রচারে আন্তর্জাতিক তদবিরকারকদের যুক্ত করেছেন ইউনূস। ”
“এটা সত্যের অপলাপ।
বাংলাদেশে ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই। ”
“২০০৭-০৮ সালে [কার্যত] সামরিক শাসনের সময়, জরুরি অবস্থায় যখন সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ এবং প্রায় সব রাজনৈতিক নেতারা কারাগারে- তখন এমনকি সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিয়েও কোনো রাজনৈতিক দল গড়তে এবং জনসমর্থন তৈরি করতে পারেননি তিনি [ইউনূস]। ”
“রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার কোনো অস্তিত্বই নেই বাংলাদেশে এবং তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য হুমকি নন। ”
সজীব উল্লেখ করেন, সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক’ বা অন্য কোনো মামলা করেনি।
“কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আমরা শুধু ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকদের আরো নিপীড়িত হওয়া থেকে বাঁচাতে চাই। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।