সারাদেশে জনবল মাত্র ৩৫, লোপাট হচ্ছে প্রকল্পের ৬ কোটি টাকা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর নামের একটি সরকারি অফিস থাকলেও এর কাজ কি, তা জানে না কেউ। জনবল বলতে সারাদেশে কর্মরত আছেন মাত্র ৩৫ জন। তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার পাশাপাশি গ্রহণ করা হয়েছে ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। যাদের লক্ষ্য করে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তারা জানে না কিছুই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ১৯৮৬ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরকে পৃথক করে আলাদা একটি দপ্তর করা হয়।
তখন এ দপ্তরের সারাদেশে জনবল ছিল ১১০ জন। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, মোট জনবলের দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি তথ্য সার্ভিসে রেখে বাকিদের পাঠানো হয় নতুন ঠিকানায়। কেন্দ্রীয় অধিদপ্তরের পাশাপাশি বরিশাল, রাজশাহী, কুমিলস্না ও ঢাকায় ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়। শুরুতে এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম ছিল সন্তোষজনক। গ্রামগঞ্জে ঘুরে মানুষকে টরকি বায়োস্কোপ, জারী গান ও লিফলেট বিতরণ করে মৎস্য, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল লালন-পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হতো।
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে এ দপ্তরের ভূমিকা বেশ ভালোই ছিল। মাত্র ৪ বছর পরই অচলাবস্থা দেখা দেয়। অবসরে যাওয়া পদগুলোতে আর নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২৪ বছরের ব্যবধানে এ প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে এখন মোট জনবল নেমে এসেছে ৩৫ জন। এর মধ্যে ২০ জনই প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত।
বরিশাল, রাজশাহী ও ঢাকায় আছেন মাত্র ৩ জন করে। কুমিলস্নায় ৪ জন থাকলেও একজন আগামী এপ্রিল মাসে অবসরে যাচ্ছেন। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে ৩ থেকে ৪ জন কর্মচারী থাকলেও কোনো কর্মকর্তা নেই। কর্মচারীদেরও কোনো কাজ নেই। অফিসে এসে অলসভাবে সময় কাটানো অথবা অফিস বন্ধ করে চলে যাওয়াই তাদের প্রধান কাজ।
প্রতি মাসে এসব আঞ্চলিক অফিসের ভাড়া পরিশোধের পাশাপাশি বিদু্যৎ বিল, ঝাড়-দার, টিএ/ডিএ ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে হাতির খোরাক যোগানো হচ্ছে। বরিশাল অফিসের অধীনে খুলনা বিভাগ এবং কুমিলস্না অফিসের অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগকে অন্তভর্ুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর কাজ কি এমন প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বরতরা জানান, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আসা বিভিন্ন বই ও লিফলেট গ্রামগঞ্জের মানুষের মাঝে বিতরণ করাই তাদের এখন একমাত্র কাজ। এ কাজটিও তারা করেন না, বা করতে পারছেন না। কারণ জানতে চাইলে উত্তর আসে কোন এলাকায়, কাদের কাছে বই বিতরণ করা হবে তার কোনো গাইড লাইন তারা পায়নি।
আবার বই বিতরণের জন্য কোনো খরচ তাদের জন্য বরাদ্দ নেই। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকাশ করা বই-পুস্তক আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে স্তূপাকারে বছরের পর বছর পড়ে থাকছে। যাদের জন্য এসব মূল্যবান বই প্রকাশ করা হচ্ছে তারা বই পাওয়া তো দূরের কথা এর খবরো জানে না।
প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অকার্যকর এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য সেবা জোরদারকরণ কর্মসূচি।
গত বছর দেড় কোটি টাকা খরচের পর এবার অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এই টাকার বিপুল অংশ ব্যয় হচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তা, মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নানান কর্মসূচিতে। তথ্য দপ্তরের সূত্র জানায়, উলেস্নখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডিসি কিংবা বিভাগীয় কমিশনারসহ আমলাদের নিয়ে মিটিং-সিটিং করে এ টাকা খরচ করেন। বাকি টাকায় ছাপানো হচ্ছে মূল্যবান বই। তা প্রধান কার্যালয়ের কর্মচারীদের মাধ্যমে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে পাঠানোর পর সেখানেই পড়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বই আর গ্রামগঞ্জের চাষীদের হাতে পেঁৗছায় না। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, বই বিতরণ কিংবা প্রচার-প্রচারণার জন্য তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কোন বরাদ্দ পান না। শুধুমাত্র পুরনো রেওয়াজ অনুযায়ী রাজস্ব খাত থেকে চলতি অর্থ বছরে ৪টি আঞ্চলিক অফিসকে ৫ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা ভ্রমণ ভাতা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভ্রমণ ভাতার জন্য রেখেছে এক লাখ টাকা। আর নতুন প্রকল্পের এক টাকাও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক ইত্তেফাককে জানান, চলতি অর্থ বছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য সেবা জোরদারকরণ কর্মসূচি প্রকল্পের ব্যয় করার জন্য তাদের কাছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে। এ টাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে খরচ করার কোনো বিধান নেই। তিনি বলেন, আমরা অনেকটা 'নিধিরাম সর্দার'। আমাদের কাজ বিভিন্ন অঞ্চলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে টাকা খরচ করা।
source: Ittefaq
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।