ঈদ কিংবা যে কোনো অনুষ্ঠানেই বাঙালি নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। বিশেষ করে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির প্রতি রয়েছে সকলের আলাদা টান। মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ততায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত পল্লী। ঈদকে কেন্দ্র করে চলছে কাপড় বুনানোর ধুম। ভোরের পাখিদের ঘুম ভাঙ্গার আগেই তাঁতের হাতল টেনে বাহারি ডিজাইনের কাপড় তৈরি করে যাচ্ছে এখানকার তাঁতীরা।
টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প মুলত দেলদুয়ারের পাথরাইল চণ্ডী ও কালিহাতীর বল্লাসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি এলাকাকে ঘিরে। তাঁত শিল্প এলাকায় প্রবেশ করলেই কানে ভেসে আসছে তাঁতের খটখট শব্দ। তাঁতীদের ঘরে ঘরে চলছে কাপড় বুনানোর মহোৎসব। কেউ কাপড় বুনছে, কেউ কাপড়ের বুটি কাটছে, কেউ আবার নকশা তৈরি আর চড়কা নিয়ে ব্যস্ত।
পুরুষের পাশাপাশি মহিলাও এ কাজে যথষ্টে শ্রম দিচ্ছেন। কেউ সুতা চড়কা ঘুরাচ্ছে আবার কেউ সুতা ছিটায় উঠানোর কাজ করছে। সব মিলিয়ে সময়টা যেন তাঁতী পরিবারের জন্য ব্যস্ততায় পাড় হচ্ছে। অচল তাঁতগুলো সচল করতে লাভের আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করছে অনেক তাঁতী। কাপড়ের ডিজাইন ও সুতার পার্থক্যভেদে পাঁচশ' থেকে পনের-বিশ হাজার টাকার পর্যন্ত কাপড় বিক্রি করছে তাঁতী মালিকরা।
ঈদে প্রিয়জনদের জন্যে পছন্দের শাড়ি কিনতে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত তাঁতপল্লী পাথরাইল, চণ্ডি, বাজিতপুর, বেলতা ও পুটিয়াজানি গ্রামগুলোতে ভীড় করছেন ক্রেতারা। দেশের নামী দামী বিপনী বিতানগুলোর তুলনায় দামে কম এবং সময় নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে পছন্দের শাড়ি কিনতেই তাঁতপল্লীতে ক্রেতাদের এমন ভীড়।
এবার ঈদের সুতি জামদানী, সফট সিল্ক, সুতি ধানসিঁড়ি, বালুচুরি, গ্যাস সিল্ক, স্বর্ণ কাতান, দোতারি, তসর, কুচি, ফ্ররফ্লাই, ডেঙ্গু, চোষা ও রেশম শাড়ীর মত বাহারি ডিজাইনের তাঁতের শাড়ি তৈরি করে বাজারে দিচ্ছে। অনেক ডিজাইনার ও শ্রমিকরাও উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে। তারা উচ্চ মজুরি আর যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে খুশি।
টাঙ্গাইল পাথরাইলের তাঁত শাড়ী ব্যবসায়ী রগুনাথ বসাক জানান, আমাদের কাপড়ের ব্যবসা এবার ভালো। তবে সূতার দাম, শ্রমিক ও ভারতীয় শাড়ী দেশীয় মার্কেটগুলোতে সরবরাহ বন্ধ করা গেলে আমরাও লাভবান হতাম। তাঁত শিল্প এলাকা থেকে উৎপাদিত কাপড় জেলা ও বিভাগীয় শহরসহ ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারত, আমেরিকা ও কানাডা সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এ শিল্পকে আরো আধুনিক ও উন্নত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ডিজাইন সেন্টার ও দক্ষ কারিগর তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।