আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টু দ্য স্যান্ডস অব ডি (পঁচিশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে একটা ডায়েরিমূলক লেখা)।

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

গত দুদিন ধরে আমার বুকের ভারটা নামছে না। যখন প্রথম শুনেছিলাম বিডিআর সদরদফতরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, আর যখন শুনলাম বিডিআর সপ্তাহের অনুষ্ঠান চলাকালেই শুরু হয়েছে এ সংঘর্ষ, তখন থেকেই মনটা ভয়ংকর পরিণতির চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠছিল। কিন্তু সেটা যে এতোটা ভয়াবহ হবে তা ভাবতে পারিনি। গত কয়েকদিন ধরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার। কেমন যেন সাফোকেটিং একটা অবস্থা অনুভব করি থেকে থেকে।

যখন প্রথম শুনেছিলাম ভীত সন্ত্রস্ত সেনাকর্মকর্তাদের কেউ কেউ ম্যানহোল দিয়ে বের হবার চেষ্টা করেছে- জীবন রক্ষার্থে, তখন থেকেই এ অবস্থা। আমার। কেবল বারবার মনে হচ্ছিল তারা হয়তো কোথাও গিয়ে আটকে গেছে। নর্দমার থকথকে পানিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা। কোন দিক যাবে তাও বোঝার উপায় নেই পাতালপুরির অন্ধকারে।

দুশ্চিন্তা আর অবসন্নতা তাদের ক্রমশ গ্রাস করে ভয়ানক যন্ত্রনাকর মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন আমি থেকে থেকে অশ্রুসজল হয়ে উঠছি। যখন প্রথম শুনেছিলাম আমাদের দেশেরই এতোগুলো প্রশিক্ষিত মানুষকে হত্যা করার পর তাদের লাশের উপরও চলেছে নির্দয় নির্যাতন। যদিও তাতে তাদের কিছুই যায় আসেনা। মৃতের কাছে অত্যাচারের দাম কি।

কিন্তু বেঁ‍চে আছি বলেই বারবার এসব দুর্ভাগা মানুষের মৃত্যুযন্ত্রনা অনুভব করে আতঙ্কিত হয়ে উঠি। গত কয়েকদিন ধরেই আমি মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর যন্ত্রনায় আঁতকে উঠি। যখন প্রথম শুনেছিলাম মৃত অফিসারদের বাসায় বাসায় হামলা করে তাদের পরিবারের ওপরও হয়েছে নির্বাধ নির্যাতন। তাদের অবুঝ শিশু, তাদের সদ্য কিশোরী কন্যা, তাদের অসহায় স্ত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা চিন্তা করতে চাইনা। চিন্তা করার প্রয়োজন্ও নেই।

কারণ আমার কাছে তাদের নির্যাতন যন্ত্রনাকে মৃতূর চেয়েও ভয়ংকর মনে হয়। কিন্তু তুমি বুঝোনি। ভেবেছিলে এই তো..এমন গোলাগুলি বাংলাদেশে হতেই পারে। অথবা ভেবেছিলে কী আর হবে। একটু পরেই হয়তো থেমে যাবে।

সবকিছু নরমাল হয়ে যাবে। আগের মতো। হ্যা, সবকিছু সত্যিই নরমাল হয়ে যাবে আগের মতো। কেবল দেড়শ পরিবার কোন কারণ ছাড়াই তাদের অভিভাবকশুন্য হয়ে পড়ল। দেড়শ স্ত্রী তাদের জীবনের মধ্যবসন্তেই বিধবা হয়ে গেল।

অসংখ্য শিশু, কিশোর- কিশোরী তাদের পিতা হারিয়ে দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে রইল। আমি সেনাবাহিনীর ভক্ত নেই। পৃথিবীর সকল সৈনিকের চরিত্র এক। সে সুযোগ পেলেই হত্যা করে, ধর্ষন করে। এবং এর জন্য তার অনুতাপের অবকাশ নেই।

সে গড়েই ওঠে এভাবে। তারপরও মেনে নিতে পারিনা। আপন ভাইয়ের ওপর, তার স্ত্রী সন্তানের ওপর এ পৈশাচিক আক্রমন মেনে নিতে পারিনা। কাকে জিজ্ঞেস করবো? একটা জাতিকে অপমান করার এর চেয়ে ভয়ংকর পন্থা আর কী হতে পারে? দেশের ভেতরে একটা সুরক্ষিত জায়গায় দেশের নিরাপত্তার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের নির্বিঘ্নে হত্যা করে, তাদের মৃতদেহকে চরম অসম্মান করে, তাদের পরিবারকে অপমানিত করে গেল তারা? এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? ভাবি আর ধিক্কার দেই নিজেকে। এমন একটা দেশে জন্ম নিয়েছি যেখানে ষড়যন্ত্রকারীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়, ষড়যন্ত্রের হোতারাই আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়।

এখন আর এসব নিয়ে ভাবিনা, আমার কষ্টের জায়গাও নয় ওটা। আমি শুধু শিহরিত হই দুই দিনব্যাপী নারকীয় হত্যাকান্ডের খবরও নাকি রাষ্ট্রযন্ত্র পায় নি একথা ভেবে। কেন এতগুলো জীবন আর পরিবারকে এতবড় মূল্য দিতে হলো? জানতে পারবো কোনদিন। এটাই আক্ষেপ। বাংলাদেশে বলেই হয়তো এতবড় ঘটনাও মিথ্যার আবরণে ঢাকা পড়ে যাবে।

যেমনটি পড়ে আছে অতীতের আরো মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা। আহ!কী কষ্ট!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।