আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন আহমেদ এর বাদশাহ নামদার

থালা ভর্তি গরম ভাত একমাত্র ন্যায়, আর সবই অন্যায়।
যারা হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথাগত লেখার ভক্ত তারা কিঞ্চিত হতাশ হবেন, এবং যারা হুমায়ূন আহমেদকে বাজারী লেখক বলে তাচ্ছিল্য করেন তারা চমকিত হবেন তারঁ সদ্য প্রকাশিত বাদশাহ নামদার বইটি পড়ার পর। বেশ কয়েক বছর থেকেই হুমায়ূন নিজের তৈরী বলয় থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। জোসনা ও জননীর গল্প, লীলাবতী, মধ্যাহ্ন এবং সর্বশেষ বাদশাহ নামদার তারই প্রমাণ। (যদিও এরই মধ্যে তিনি ম্যাজিক মুন্সি কিংবা হিমুর আছে জল জাতীয় অখাদ্যও লিখেছেন) মোগল সম্রাট হুমায়ূনের জীবনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়েই সাজানো হয়েছে বাদশাহ নামদার।

খেয়ালী সম্রাট হুমায়ূন, সর্বশ্রেষ্ঠ মোঘল সম্রাট আকবরের জম্মদাতা। জীবনের অধিকাংশ সময়ই যার কাটাতে হয়েছে শের খান (শের শাহ) নামক এক আফগান বীরের তাড়া খেয়ে। চরম খেয়ালী কিংবা স্বেচ্ছাচারী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন হুমায়ূন। স্বল্প অপরাধে যেমন কাউকে দিয়ে দিতেন মৃত্যুদন্ড তেমনি গানে মুগ্ধ হয়ে দিয়ে দিতেন গায়িকার সমওজনের স্বর্ণমুদ্রা (উজবেক গায়িকা আসহারিকে)। শের খানের তাড়া খেয়ে নদীতে লাফ দিলে এক ভিসতি মশকের সাহায্যে তারঁ জীবন বাচাঁতে সাহায্য করেছিল বলে নাজিম ভিসতিকে একদিনের (মূলত অর্ধদিন) জন্য দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন।

নাজিম ভিসতিকে দিল্লীর সিংহাসনে বসার মূল্য দিতে হয়েছিল হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জার হাতে প্রাণ দিয়ে। মোগল সম্রাট হুমায়ূন মীর্জা বই পড়তে ভালবাসতেন, ভালবাসতেন জোত্যিষ চর্চা, জাদু বিদ্যা চর্চা করেত, গান শুনতে, কাব্য চর্চা এবং ছবি আকঁতে। মোগল চিত্রকলার সূচনা হয়েছিল হুমায়ূনের হাত ধরেই। ইতিহাস কখনো ম্যাড়ম্যাড়ে কখনো রহস্যপূর্ণ। প্রথাগতভাবে পাঠ্যপুস্তকে যে ইতিহাস লেখা হয় তা যে কত নিরস হয় পাঠকমাত্রই স্বীকার করবেন।

সে নিরস ইতিহাসকে লেখক হুমায়ূন এমন রসযুক্তভাবে পরিবেশন করেছেন বইটা পড়তে শুরু করলে শেষ না করে উঠা কঠিন। লেখক হুমায়ূনের হাত ধরে চলে যান মোগল সম্রাট হুমায়ূনের রাজত্বে। একাধারে দারুণ ক্ষমাশীল ও নিষ্ঠুর এ শাসকের জীবনর খন্ড খন্ড ঘটনাগুলো লেখক হুমায়ূন দারুণ দ্ক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। একাধারে হুমায়ূনের শাসনামলের এবং ব্যাক্তি হুমায়ূন মীর্জার ভাল মন্দ উভয় দিকই ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে। রাজস্থানের রাজপুতনী কর্নাবতীকে উদ্ধারের জন্য যেমন হুমায়ূন ছুটে গেছেন তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে অন্যদিকে নিজের প্রাণনাশের চেষ্টায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভাই কামরান মীর্জাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন কয়েকবার।

অন্যদিকে বাহাদুর শাহ-র পলায়নে পর মান্ডুবাসীদের নির্বিচারে গণহত্যা, চুনার দূর্গ দখলের পর সাড়ে তিনশ কামানচিকে দুহাত কেটে দেয়া, বাহাদুর শাহ-র ভক্ত এক ইমাম মাগরিবের নামাজের সময় সূরা ফিল পাঠ করলে তাকে হাতির পায়ের চাপে পিষ্ঠ করে হত্যা, রাজ্যহারা পলায়নরত অবস্থায় বৃদ্ধ বয়সে নিজ ভ্রাতার শিক্ষকের কিশোরী মেয়ে হামিদা বানুকে বিয়ে (লেখক হুমায়ুনের জীবনের সাথে কিঞ্চিত মিল খুজেঁ পাওয়া যায়) ইত্যাদি ঘটনাগুলো হুমায়ূনের রাজত্বের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরে। হুমায়ূনের খেয়ালী চরিত্রের পাশাপাশি সেনাপতি বৈরাম খাঁ-র বিচক্ষণতা, শেরশাহ-র চতুরতা, হরিশংকরের স্বার্থপরতা, ভাই কামরান মীর্জার ক্ষমতা লিপ্সা, বোন গুবদনের ভ্রাতৃপ্রেম, পারস্য সম্রাট শাহ তামাস্প-র উদারতা, হামিদা বানুর (সম্রাট আকবরের মা) রোমান্টিকতা পাঠককে মুগ্ধ করবেই। মেয়ে আকিকা বেগমের জন্য হুমায়ূনের ভালবাসাও পাঠকের মনকে আর্দ্র করবে। বাদশাহ নামদার লেখার পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ ভূমিকায় বলেছেন- "আমার নিজের নাম হুমায়ূন হওয়ায় ক্লাস সিক্স-সেভেনে আমার মধ্যে শুধুমাত্র নামের কারনে এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরী হয়। সেই সময়ের পাঠ্যতালিকায় মোঘল ইতিহাস খানিকটা ছিল, তাতে শেরশাহর হাতে হুমায়ূনের একের পর এক পরাজয়ের কাহিনী।

হুমায়ূনের পরাজয়ের দায়ভার খানিকটা আমাকে নিতে হয়েছিল। ক্লাসে আমাকে ডাকা হতো হারু হুমায়ূন। কারন আমি শুধু হারি। আমি কার কাছে হারি। মহান সম্রাট শেরশাহর হাতে- যিনি ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন, গ্রান্ডট্রাংক রোড বানান।

আমি শুধু পালিয়ে বেড়াই। হায়রে শৈশব! এমন হওয়া অসম্ভব না যে শৈশবের নাম নিয়ে হীনমন্যতাও বাদশাহ নামদার লিখতে খানিকটা ভূমিকা রেখেছে। " বাদশা নামদার-এ হুমায়ূনের ট্রেডমার্ক চরিত্রগুলো অনুপস্থিত। অনুপস্থিত তীব্র হাস্য পরিহাসও তবে হুমায়ূন ও কামরান মীর্জার চমৎকার কিছু শের পাঠককে সে অভাব ভুলিয়ে দিতে পারে। তারই একটা ...... " হর মুসিবৎকো দিয়া এক তবুসুমসে জবাব ইসতরাহ গরদিসে দৌড়োকে রুলায়া হ্যায় ম্যায়নে।

" (দুর্দিন ভেবেছিল সে আমাকে কাঁদাবে। উল্টো হাসিমুখে আমি তাকে কাদিঁয়েছি। ) শেষে একটা দুঃখজনক সত্য- অন্যপ্রকাশ হতে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ, আকার, ছাপা থেকে শুরু করে সবখানেই চরম বাণিজ্যের চাপ। সাধারণ আকারে ও ডিজাইনে ছাপালে বইটির পৃষ্টা সংখ্যা হতো সর্বোচ্চ ১২০ দাম বড়জোর ১৮০ টাকা কিন্তু বাণিজ্যিক উপায়ে এটাকে করা হয়েছে ২৩২ পৃষ্টা দাম ৩৫০ টাকা।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।