আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ গ্রিন ফেসবুক



আজ যারা ফেসবুকে প্রবেশ করেছেন, তারা নিশ্চয়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির জন্মদিনের কথা জানেন। ভালো হতো যদি আজ, ষষ্ঠ জন্মদিনেই এটি গ্রিনপিসের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারত। পরিবেশবাদী বৈশ্বিক সংগঠন গ্রিনপিসের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার নেই। বলা বাহুল্য, সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুকও এখন শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর ঘরে ঘরে। দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক কিংবা সংঘর্ষের বিষয়টি অবশ্য ততটা ছড়ায়নি।

অনেকে নিশ্চয়ই জানেন, ষাটের দশকের শেষ দিকে আলাস্কার ভূমিকম্পপ্রবণ আমচিটকা দ্বীপে পরমাণু অস্ত্রের ভূগর্ভস্থ পরীক্ষার প্রতিবাদে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় গঠিত নাগরিক সংগঠন ‘ডোন্ট মেক ওয়েভ কমিটি’ এক পর্যায়ে গ্রিনপিস নাম ধারণ করে। গত চার দশকে এর কার্যক্রম ৪০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। সংগঠনটি মূলত যেসব ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে, তার মধ্যে রয়েছে- বৈশ্বিক উষ্ণতা, বিসবুজীকরণ, মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, সমুদ্রদূষণ, জাহাজভাঙা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিমি শিকার ও পরমাণু অস্ত্র। নিজেদের কর্মসূচির পক্ষে তারা বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি, নানা পর্যায়ে লবিং ও গবেষণা-সমীক্ষা চালিয়ে থাকে। ফেসবুকের ইতিহাস অবশ্য গ্রিনপিসের মতো দীর্ঘ নয়।

তবে উত্থান বেশ চমকপ্রদ। মাত্র সেদিন, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করে এ বছরের জানুয়ারির মধ্যে এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ কোটি ছাড়িয়েছে। বাণিজ্যিক মূল্যও বেড়েছে হুহু করে। প্রতিষ্ঠার সাড়ে পাঁচ বছরের মাথায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে ফেসবুক প্রথমবারের মতো বিনিয়োগ ফেরত পেতে শুরু করে এবং ২০১০ সালের নভেম্বরে এর মূল্য ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম ওয়েব কোম্পানির স্থান দখল করে। শীর্ষস্থানে যাওয়া ফেসবুকের জন্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এর কাজও সোজাসাপ্টা_ সামাজিক যোগাযোগ। ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের প্রোফাইল তৈরি, অন্যদের বন্ধু করতে কিংবা নিজে বন্ধু হতে এবং বার্তাবিনিময় করতে পারে। নিজের প্রোফাইলে কোনো আপডেট দিলে বন্ধুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নোটিশ পেয়ে যায়। ফেসবুকের আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে, গ্রুপ বা পেজ খোলার সুযোগ। ফেসবুকের এসব সাধারণ ব্যাপার কত অসাধারণ কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে, তিউনিসিয়া ও মিসরে তার খানিকটা নমুনা দেখা গেছে।

ফেসবুকে সামাজিক যোগাযোগের অদ্বিতীয় এই সুবিধাই গ্রিনপিসের জন্য আকর্ষণের ব্যাপার হতে পারত। বস্তুত, সেখানে পরিবেশবাদী সংগঠনটির একটি পেজ রয়েছেও; সেটা 'পছন্দ' করা ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের বেশি। কেবল গ্রিনপিসই নয়, বিবিসি থেকে পাড়ার ক্লাব- বিশ্বে এমন প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী পাওয়া কঠিন, যার ফেসবুক ঠিকানা নেই। ফেসবুকের মাধ্যমে নিজস্ব চিন্তা ও তৎপরতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি এখন অনেকটা ছেলের হাতের মোয়া। কিন্তু গ্রিনপিস তাতে সন্তুষ্ট নয়।

তারা বলছে, খোদ ফেসবুককেই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। গ্রিনপিসের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, ফেসবুকের ডাটা সেন্টারগুলো চালাতে যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তা আসে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। গ্রিনপিসের প্রতিনিধিরা গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গকে হাতে-কলমে বুঝিয়ে এসেছেন কয়লাচালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করলে পৃথিবীর কী কী সুবিধা হবে। ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমের 'গ্রিন' হয়ে যাওয়ার তাৎপর্যই বা কী। কিন্তু প্রথমে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।

পরে সাড়া মিললেও ফেসবুকের সবুজীকরণের শম্বুকগতি গ্রিনপিসের পছন্দ হচ্ছে না। তাই গ্রিনপিস এখন ফেসবুককে দ্রুততার সঙ্গে গ্রিন করে তোলার প্রচারণা চালাচ্ছে। সময় বেঁধে দিয়ে বলেছে, আগামী ধরিত্রী দিবস অর্থাৎ ২২ এপ্রিলের মধ্যে ফেসবুককে সম্পূর্ণভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকারী হতে হবে। এ দাবি জোরদার করার জন্য তারা মূলত ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরই উদ্বুদ্ধ করছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি গ্রুপ ও পেজও খুলেছে।

হ্যাঁ, ফেসবুকেই। সত্যিই ফেসবুকের গুরুত্ব আজ অস্বীকার করা অসম্ভব। যেমন অসম্ভব পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা। ফেসবুক গ্রিন হয়ে গেলে, পরিবেশ সুরক্ষায় এর তাৎপর্য হবে সুদূরপ্রসারী। ফেসবুকের সামাজিক দায়বদ্ধতাও প্রগাঢ় হবে সন্দেহ নেই।

জন্মদিনে সেই প্রত্যাশায়- শুভ গ্রিন ফেসবুক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।