আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩০ লাখ মানুষ হত্যাকে আপনি কোনদিন গণহত্যা বলেননি : হামলা প্রতিরোধ করাকে গণহত্যা বলা যায় না

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোনো মূল্যে ঠিক রাখা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব। কেউ হামলা চালালে সেটি প্রতিরোধ করাকে গণহত্যা বলা যায় না। গতকাল শনিবার বিবিসি বাংলা সংলাপে আলোচনায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলা সংলাপের ১৬তম পর্বের ধারণ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। আলোচনায় আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। তাদের দমনে পুলিশ সঠিক ভূমিকা পালন করছে। আমিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, কেউ পুলিশের ওপর চাপাতি নিয়ে আক্রমণ চালালে পুলিশ নিশ্চয় চুপ করে বসে থাকবে না। আত্মরক্ষার জন্য যেটা করণীয় পুলিশ সেটিই করছে।

এমন সহিংস আচরণ দমনে বিকল্প কোনো পথ নেই পুলিশের কাছে। মোশাহিদা সুলতানা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে হত্যা করা হচ্ছে। এটি দমনে পুলিশের হাতে বেশ কিছু মানুষ মারা গেছে। এটি দুঃখজনক হলেও কোনোভাবেই এটিকে গণহত্যা বলা যায় না। সুত্র সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও শ্রেণী-পেশার মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশ ও জনগণকে বিপজ্জনক মরণ খেলার দিকে ঠেলে না দেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে বিএনপির ভূমিকা ও খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বৈঠক থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস, আতঙ্ক ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘৃণ্য অপতৎরপতার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সরাসরি একাত্তরের গণহত্যাকারীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। প্রশাসন ও জনগণের প্রতিরোধকে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া কর্তৃক ‘গণহত্যা’ আখ্যাদানকে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবিমৃষ্যকারীতা অভিহিত করে বলা হয়, এর মধ্যে দিয়ে খালেদা জিয়া একাত্তরের গণহত্যাকারীদের সরাসরি পক্ষাবলম্বন করেছেন।

সভা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপির ভূমিকার নিন্দা করে বলা হয়, কোন যুক্তির আড়ালে এই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। দেশব্যাপী নৈরাজ্যে সৃষ্টির চেষ্টায় অতীতের মতো দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের উপসনালয়, প্রতিষ্ঠানসমূহকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। সভায় গত কদিনে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ফেনী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, গাইবান্ধায় দশ দলের প্রতিনিধি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত কদিনের জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী তা-ব, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও দেশদ্রোহী কাজের নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া টু শব্দটি বলেননি। বরং জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন করে গত কয়েক দিনে যে প্রাণহানি ঘটেছে তাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে একাত্তরের ৩০ লাখ মানুষের হত্যার মধ্য দিয়ে সংগঠিত ‘গণহত্যার’ বিশাল বর্বরতাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।

একই সঙ্গে খালেদা জিয়া এর মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের এই দেশদ্রোহী-রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। সং৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশ ও জনগণকে বিপজ্জনক মরণ খেলার দিকে ঠেলে না দেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) জানেন বায়ান্ন থেকে একাত্তর সকল আন্দোলনের অগ্রসেনানী এদেশের তরুণ সমাজ। আর সে পথ ধরেই খালেদা জিয়া একাধিকবার স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে সমগ্র জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ, ঠিক সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের ভাষায় কথা বলে এবং হরতাল আহ্বান করে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের একাত্তরের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, ধর্মান্তকরণসহ সকল মানবতাবিরোধী অপকর্মের নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বন করেছেন। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের অহিংস, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে খালেদা জিয়া তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থিত করেছেন।

এর জবাব এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত যুব সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ খালেদা জিয়াকে একদিন দেবেই। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তিনি (খালেদা জিয়া) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ও একাত্তরের গণহত্যাকারীদের সঙ্গেই থাকবেন। এবার জনগণকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা কী করবেন, কোথায় যাবেন? হরতাল করবেন নাকি গাড়ি চালাবেন? খালেদা জিয়ার অবস্থান আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে একাত্তরের লাখো শহীদের অর্জিত জাতীয় পতাকা, বাঙালী জাতি সত্তার অন্যতম প্রতীক শহীদ মিনার এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে যারা অবমাননা করেছে- সেই অপশক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া আগামী মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছেন।

একাত্তরের গণহত্যাকারীদের পক্ষে সরাসরি খালেদা জিয়া মাঠে নামায় জাতি স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছে। যারা জাতীয় পতাকা চান, শহীদ মিনার চান, মসজিদের পবিত্রতা চান, মন্দিরের অক্ষুণ্ণতা চান তাঁদের স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির ছায়াতলে আসতে হবে। খালেদা জিয়া আপনি সংবাদ সম্মেলনে যারা জাতীয় পতাকা পোড়াল, শহীদ মিনার ভাঙল, মসজিদে আগুন দিল, মসজিদের টাইলস ভাঙল, যারা মন্দিরে আগুন দিল, অসংখ্য পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করল তাদের বিষয়ে কিছু বললেন না। আসলে আপনি কোন্্ বাংলাদেশ চান? আপনি তাইলে কী পাকিস্তানের পতাকা চান? দেশের পতাকার জন্য কী আপনার কোন দরদ নেই? বিএনপি-জামায়াত অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার পালাবদলের জন্য দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চান না, রাজাকারদের রক্ষা করতে চান।

যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবেন না; রায় আমরা বাস্তবায়ন করবই। সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।